বাগেরহাটে লবণ পানিতে পুড়ছে কৃষকের ধান


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১১:৩৩ অপরাহ্ন, ২৭শে মার্চ ২০২৩


বাগেরহাটে লবণ পানিতে পুড়ছে কৃষকের ধান
লবণ পানিতে মরছে কৃষকের ধান

বাগেরহাটে লবণ ঠকানো সুইজ গেট দিয়ে ওঠানো লবণ পানিতে মরছে কৃষকের ধান। গেল কয়েক দিনে বাগেরহাট সদর উপজেলার ডেমা ইউনিয়নের অন্তত ৩’শ বিঘা জমির ধান পচে গেছে। ডেমা ইউনিয়নের বাসবাড়িয়া ও ছবাকি সুইজ গেট দিয়ে ছবাকি নদীতে পানি প্রবেশ করানোর কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। 


এর ফলে ডেমা, পিসি ডেমা, কাশিমপুর, খেগড়াঘাট, বেতবুনয়িাসহ কয়েকটি গ্রামের অন্তত তিন শতাধিক কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। এর মধ্যে কাশিমপুর মৌজায় থাকা সরকারি সহযোগিতাপ্রাপ্ত ব্লকের ধানও নষ্ট হয়েছে। মৌসুমের শেষ পর্যায়ে এসে ধান নষ্ট হয়ে যাওয়ায় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন কৃষকরা।


স্থানীয় কৃষক মো. সুজন শেখ বলেন, কাশিমপুর মাঠে চার বিঘা ধান রোপন করেছিলাম। প্রায় ৭০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে আমার। আমার জমি কৃষি বিভাগের সহায়তাপ্রাপ্ত ব্লকের মধ্যেই ছিল। কৃষি বিভাগের করা সেচ লাইন দিয়ে পানি দিয়েছি। তারপরও আমার ধান মরেছে, কারণ নদীতে লবণ পানি প্রবেশ করানোয়, সেচ লাইনেও লবণ পানি আসছে।


খেগড়াঘাট মাঠে দুই বিঘা জমিতে ধান চাষ করা দিলিপ কুমার মন্ডল বলেন, অনেক কষ্ট করে ধান লাগিয়েছিলাম। পানি উঠিয়ে সব শেষ করে দিল। শুধু দিলিপ আর সুজন নয়, লবণ পানিতে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে আজাদ মল্লিক, নিখিল মন্ডল, কালাম মল্লিকসহ অনেক কৃষকের কষ্টের ফসল এভাবে নষ্ট হয়ে গেছে।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কৃষক বলেন, আমরা যেসব জমিতে ধান করেছি, সেসব জমিতো বেড়িবাঁধের মধ্যে। বেড়িবাধ কেন দেওয়া হয়, মানুষ লবণ পানি এবং ঝড়জলচ্ছাস থেকে বাঁচবে। 


সেই বেড়িবাঁধের সুইজ গেট দিয়ে যদি চিংড়ি চাষের জন্য লবণ পানি উঠিয়ে ধান নষ্ট করা হয় তাহলে কৃষকরা কোথায় যাবে। যে অবস্থা হয়েছে তাতে কৃষকরা তো না খেয়ে মারা যাবে। সুইজ গেট থেকে কে লবণ পানি ঢুকিয়েছে এমন প্রশ্নের উত্তরে কথা বলতে রাজি হননি কোন কৃষক। 


তবে স্থানীয়ভাবে খোজ নিয়ে জানাযায়, ডেমা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেনসহ স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি ছবাকি ও বাসবাড়িয়া সুইজ গেট নিয়ন্ত্রণ করেন। তারাই তাদের প্রয়োজনে লবণ পানি প্রবেশ করান।


তবে লবণ পানি প্রবেশ করানোর বিষয়টি অস্বীকার করে ডেমা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, কৃষকদের সম্মতিতে মাঘি পূর্নিমার সময় এসব গেট থেকে পানি প্রবেশ ঢুকানো হয়েছে। কারণ তখন পানি মিস্টি ছিল। এরপরে আর কোন পানি ঢুকানো হয়নি। মূলত মাটির তল থেকে ওঠা একটি অপরিচিত পোকার আক্রমনে ধান মারা যাচ্ছে। চাষীরা ভুল বুঝে লবণ পানির কথা বলছেন।


পানি উন্নয়ন বোর্ড, বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মাসুম বিল্লাহ বলেন, লবণ পানি যাতে প্রবেশ না করতে পারে সেজন্য আমরা গেট বন্ধ করে দিয়েছি। কিন্তু রাতের আধারে কে বা কারা গেট খুলে লবণ পানি প্রবেশ করায় তা আমরা জানি না। শুনেছি নকল চাবি বানিয়েছে। তবে বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সাথে দেখছি।


এদিকে গেল ৮ মার্চ বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার রাজনগর ইউনিয়নের ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্য থেকে যাওয়া কালেখারবেড় এলাকার ঘরের খালের বাঁধ কেটে মৎস্য ঘেরে পানি ঢোকানোর কারণে রাজনগর ও পেড়িখালী ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের অন্তত ৩০০ বিঘা জমির ইরি ধান নষ্ট হয়ে যায়। পরে ১০ থেকে ১২ মার্চের মধ্যে হাড়িখালীসহ পাশাপাশি তিনটি সুইজ গেট থেকে পুটিমারি বিলে লবণ পানি ঢোকায় হাড়িখালী ক্ষুদ্র পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি। পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির খামখেয়ালীপনার ফলে পুটিমারি বিলের অন্তত ২০০ বিঘা জমির ধান নষ্ট হয়ে যায়।


বাগেরহাট সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাদিয়া সুলতানা বলেন, ডেমা ইউনিয়নের এই মৌসুমে প্রায় ৩’শ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে। এর মধ্যে কিছু ধান মারা গেছে। আমরা কৃষকদের জমির মাটি পরীক্ষা করেছি। মাটিতে লবণ র পরিমান বেশবেশি। কারণ এবছর বৃষ্টিপাত কম হওয়ার কারণে মাটির লবণ কাটেনি। এছাড়া সুইজ গেট দিয়ে লবণ পানি প্রবেশের কোন প্রমান আমাদের কাছে নেই। তারপরও আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয়দের সাথে সমন্বয় করার চেষ্টা করছি যাতে কোন কৃষকের ক্ষতি না হয়।


বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারুবাইয়া তাসনিম বলেন, ইতোমধ্যে উপজেলা কৃষি বিভাগকে নির্দেশনা দিয়েছি তারা পুরো এলাকা সরেজমিনে দেখবে এবং ক্ষতির পরিমান নিরুপন করে জানাবে। এসব গেট থেকে যাতে লবণ পানি ঢুকাতে না পারে সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দেন উপজেলার এই শীর্ষ কর্মকর্তা।


আরএক্স/