যারা রুচির চাষ করে, তারাই খরা এবং বন্যা তৈরি করে: তসলিমা নাসরিন


Janobani

বিনোদন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬:২৯ পূর্বাহ্ন, ২৮শে মার্চ ২০২৩


যারা রুচির চাষ করে, তারাই খরা এবং বন্যা তৈরি করে: তসলিমা নাসরিন
মামুনুর রশীদ - হিরো আলম - তসলিমা নাসরিন

বাংলাদেশের আলোচিত সাহিত্যিক তসলিমা নাসরিন। সোমবার (২৭ মার্চ) নিজের ফেসবুকে একটি পোস্ট করেছেন তিনি। 


দৈনিক জনবাণীর পাঠকদের জন্য পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো- 


''রুচির দুর্ভিক্ষ আচমকা আকাশ থেকে পড়ে না। প্রথমে খরায় বা বন্যায় রুচির উৎপাদন নষ্ট হয়। তারপর শুরু হয় দুর্ভিক্ষ। খরা এবং বন্যা মূলত তৈরি করে তারাই, যারা রুচির চাষ করে। তাদের তখন যথেষ্ট সময় নেই রুচি উৎপাদনের জমিকে উর্বর রাখার, তারা ব্যক্তিগত গোলার ফসল নিয়েই বা সাফল্য  নিয়েই তখন তৃপ্ত। 


রুচিকৃষকদের যখন মূল্যবোধের অবক্ষয় শুরু হয়, তখনই রুচির পতন শুরু হয় আর তখনই অরুচির উত্থান শুরু হয়। রুচির পতন আজ থেকে হচ্ছে না, অন্তত তিরিশ বছর ধরে  তো হবেই। শহর নগর বন্দর আর গ্রাম গঞ্জের যাত্রা পালা,  কবিগান বাউলগান, ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালি, পাড়ার মহল্লার রবীন্দ্র নজরুল সুকান্তের জন্ম জয়ন্তী পালন, ফি সপ্তাহে নাচ  গান আবৃত্তি আর নাটকের অনুষ্ঠান -- সব কিছুকে বিদেয় করে যখন সামিয়ানা টাঙিয়ে  কোরান তেলোয়াত, মিলাদ আর ওয়াজ মাহফিলের  আয়োজন শুরু হয়ে গেল দেশ জুড়ে, তখন রুচিকৃষকেরা মুখ বুজে ছিলেন, উর্বর জমি নীরবে পাচার করেছেন অরুচির ব্যবসায়ীদের কাছে। যে রুচিবান শিল্পীরা মশাল হাতে দাঁড়িয়েছিল, তাদের মশাল এক এক করে     অরুচির ব্যবসায়ীরা নিভিয়ে দিয়েছে, তাদের খুন হয়ে যেতে দেখেছেন রুচিকৃষকেরা, তাদের নির্বাসন দণ্ড দেখেছেন। তারপরও নিজেদের ক্ষুদ্র সাফল্যে আত্মমগ্ন থেকেছেন। 


আজ অরুচি আর  মিথ্যেয় ঠাসা সমাজে  নোংরা  নষ্ট ওয়াজিরা,  যে কোনও শিল্পী সাহিত্যিকের চেয়ে বেশি জনপ্রিয়। অরুচি উৎপাদক হিরো আলম  রুচিবান ওয়াহিদুল হক বা মিতা হকের চেয়ে  জনপ্রিয়।  এর দায়ভার অবশ্যই রুচিকৃষকদের। 


আসলে রুচি আর অরুচি চিরকালই পাশাপাশি বাস করেছে। রুচিকে ছাপিয়ে অরুচি যখন সর্বত্র বিরাজ করে তখনই  কিছু লোক  নড়ে চড়ে বসে। অরুচি তখনই সর্বত্র বিরাজ করে, যখন তাকে সর্বত্র বিরাজ করতে দেওয়া হয়। রুচির পোশাকও গ্রাস করে নিয়েছে অরুচি।  শাড়ির ওপর আটের দশকে মেয়েদের চাদর চাপাতে বাধ্য করা হয়েছিল,  একে মেনে  নিল রুচিকৃষকেরা,  শাড়ির ওপর  এর পর  হিজাব চাপানো হলো, এরপর  বোরখা চাপানো হলো, এরপর নিকাব চাপানো হলো, এই পদ্ধতিতে শাড়ি হারিয়ে গেল, প্রকট হয়ে উঠলো নারীবিরোধী অপসংস্কৃতি, আর ভয়াবহ রুচিহীনতা।  মুখ  বুজে থাকাই, ভীরুতাই, নীরবতাই, দূরদৃষ্টিহীনতাই  রুচিকে অরুচির ভাগাড়ে নিক্ষেপ করে।''