সূর্যমুখীর হাসিতে হাসছে সোনাগাজীর কৃষক


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০২:৩৭ পূর্বাহ্ন, ২রা এপ্রিল ২০২৩


সূর্যমুখীর হাসিতে হাসছে সোনাগাজীর কৃষক
সূর্যমুখীর হাসি

ফেনীর সোনাগাজীর বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলের পতিত জমিতে এবার সূর্যমুখী আবাদ হয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জমিগুলোতে সবুজের মাঠে এখন হলুদের সমারোহ সবার নজর কাটছে। সূর্যমুখীর ফুলের আবাসে প্রাণ জুড়াতে প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসছে ক্ষেতের দ্বারে। 


আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার সোনাগাজীতে ১৩০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর আবাদ হয়েছে। জেলায় ২৫০ হেক্টর আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে আবাদ হয়েছে ৩৯৫ হেক্টর। এখন সবগুলো জমিতে সূর্যমুখী ফুলের হাসি উপভোগ করছে বিনোদনপ্রেমীরা। আশানুরূপ ফলন পেলে ভবিষ্যতে সোনাগাজীর চরাঞ্চলে আরও বেশি জমিতে সূর্যমুখী আবাদ হবে বলে প্রত্যাশা কৃষক ও কৃষি বিভাগের। 


জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, জেলায় এবার ২৫০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ শুরু করে কৃষি বিভাগ। মাঠ পর্যায়ে কর্মকর্তাদের পরামর্শে ও স্থানীয় কৃষকদের আগ্রহে জেলার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৩৯৫ হেক্টরে সূর্যমুখী আবাদ হয়েছে। তন্মধ্যে সোনাগাজীতে ১৩০ হেক্টর, ফেনী সদরে ৮৮ হেক্টর, ছাগলনাইয়ায় ৫২ হেক্টর, ফুলগাজীতে ৪৯ হেক্টর, দাগনভূঞায় ৪৮ হেক্টর, পরশুরামে ২৮ হেক্টর আবাদ হয়েছে। 


সোনাগাজী উপজেলার দক্ষিণ চরচান্দিয়া ইউনিয়নের আদর্শ কৃষক আবু ছায়েদ রুবেল জানান, সূর্যমুখী আবাদ করতে জমিতে ৪বার চাষ দিতে হয়। এরপর জমিতে প্রয়োজনীয় সার দিয়ে ১২ ইঞ্চি পরপর বীজ বপন করতে হয়। গাছের দূরত্ব সঠিক হলে গাছ মজবুত হয়; ফলন ভালো হয়।  গাছের চারা গজানোর পরপরই ছত্রাক নাশকের একটি কীটনাশক ছিটাতে হয়। গাছের বয়স ২০-২৫ দিন হলে জমিতে সার ও সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। কৃষি বিভাগের পরামর্শে বারি-৩ জাতের সূর্যমুখী আবাদ করেছি। এ জাতটি খাটো জাত। এটি বাতাসে ঢলে পড়বে না। কালবৈশাখী ঝড়ে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। 


তিনি জানান, এবার তিনি ১৭ একরে সূর্যমুখী আবাদ করেছেন। এতে তার প্রায় ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। প্রতি একরে প্রায় ৩৫-৪০ হাজার টাকা খরচ পড়েছে। উৎপাদিত সূর্যমূখী থেকে ১০ থেকে ১২ লক্ষ টাকার তেল, খৈল ও জ্বালানি পাবেন বলে প্রত্যাশা তার। 


স্থানীয় কৃষক আবু আহম্মদ বলেন, বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় চরাঞ্চলের শত শত হেক্টর জমি যুগের পর যুগ অনাবাদী পড়ে থাকতো। বর্তমানে এসব জমিতে সূর্যমুখী ও তরমুজ চাষের হিড়িক পড়েছে। অনুকূল আবহাওয়ায় ফলন ভালো হওয়ায় আগামী মৌসূমে চরাঞ্চলের জমিগুলোতে আবাদ আরও বাড়বে। 


সোনাগাজী উপজেলা শহর থেকে স্বপরিবারে সূর্যমুখী ক্ষেত দেখতে এসেছেন মো. খোকন মিয়া। তিনি বলেন, বন্ধু-বান্ধব অনেকেই দক্ষিণ চরচান্দিয়া এলাকায় সূর্যমুখী ক্ষেত দেখে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছে। তা দেখে আমি পরিবার নিয়ে এখানে ঘুরতে এসেছি। ক্ষেতের চারপাশ ঘুরে ভালো লেগেছে। তার মতে, সূর্যমুখী চাষ করলে একদিকে বিনোদনের ব্যবস্থা হয়, অন্যদিকে তেল, খৈল ও জ্বালানি পাওয়া যায়। 


উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী সকল জমি আবাদের আওতায় নিয়ে আসতে কৃষি বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় সোনাগাজীর বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলকে আবাদের আওতায় আনতে কৃষকদেরকে প্রয়োজনীয় প্রণোদনা ও কৃষি প্রদর্শনী দেওয়া হচ্ছে। 


জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. একরাম উদ্দিন জানান, বাংলাদেশে ভোজ্য তেলের প্রচুর ঘাটতি রয়েছে। ভোজ্যতেল আমদানি ঘাটতি কমিয়ে আনতে চলতি মৌসূমে সরকার তেল জাতীয় ফসল আবাদে বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে। সেই আলোকে কৃষি বিভাগের মাঠ কর্মকর্তাদের পরামর্শে জেলায় এবার ৩৯৫ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী আবাদ হয়েছে। আবহাওয়া ও কালবৈশাখী ঝড় কাটিয়ে উঠতে পারলে জেলায় ভালো ফলনের আশা এ কর্মকর্তার।