বিবর্তনবাদ এখন বিসিআইসিতে


Janobani

মো. রুবেল হোসেন

প্রকাশ: ০৮:৩৫ অপরাহ্ন, ২রা এপ্রিল ২০২৩


বিবর্তনবাদ এখন বিসিআইসিতে
ছবি: দৈনিক জনবাণী

১৯৭২ সালের রাষ্ট্রপতি ২৭ নম্বর অধ্যাদেশের ১৯৭৬ সালের ২৫ নম্বর সংশোধনী বলে ৩টি কর্পোরেশন, যথা- বাংলাদেশ সার, রসায়ন ও ভেষজ শিল্প কর্পোরেশন, বাংলাদেশ কাগজ ও বোর্ড কর্পোরেশন, বাংলাদেশ ট্যানারীজ কর্পোরেশনকে একীভূত করে ১ জুলাই ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ রাসায়নিক শিল্প কর্পোরেশন (বিসিআইসি) প্রতিষ্ঠিত হয়। শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন উৎপাদনমুখী এই প্রতিষ্ঠানটির পদোন্নতিজনিত পদ এখন বিবর্তনবাদে পরিণত হয়েছে। কিভাবে ক্রমান্বয়ে বিবর্তনের দিকে ধাবিত হলো বিসিআইসি।


২০২২ সালের ১৫ ডিসেম্বর চিপ অব পার্সোনেল এর পক্ষে উপ-মহাব্যবস্থাপক মুহাম্মদ সোলায়মান স্বাক্ষরিত দপ্তরাদেশ নং ৩৬.০১.০০০০.১১৬.১২.১১৮.১৮.৩১৫ সূত্র মূলে দেখা যায়, বিসিআইসি প্রধান কার্যালয়ের আইসিটি বিভাগে কর্মরত মহাব্যবস্থাপক এ বি এম ফেরদৌস কে ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে, কর্মচারী বিভাগের চিফ অব পার্সোনেল মোহাম্মদ জাকির হোসেন কে চিফ অব পার্সোনেল পদে, ক্রয় বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মোঃ সহিদুল ইসলাম কে ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে।


ঢাকা লেদার কোম্পানি লিমিটেডে এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ সেলিম কে ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে, হিসাব নিয়ন্ত্রক এস.এম. সোহেল আহাম্মদ কে হিসাব নিয়ন্ত্রক পদে এবং বিপণন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মোঃ মঞ্জুর রেজা কে ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে শূন্যপদের বিপরীতে পদোন্নতি প্রদান করা হয়েছে। পদোন্নতি প্রাপ্ত কর্মকর্তাগণের চার জনের পদবী ব্যবস্থাপনা পরিচালক। কোন কারখানাসমূহের শূণ্য পদের বিপরীতে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে তা দপ্তরাদেশে উল্লেখ করা হয়নি।


কর্মচারী বিভাগের চিফ অব পার্সোনেল মোহাম্মদ জাকির হোসেন, ঢাকা লেদার কোম্পানি লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ সেলিম ও হিসাব নিয়ন্ত্রক এস.এম. সোহেল আহাম্মদ পদোন্নতিজনিত পদ ঠিক থাকলেও বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, বাকি তিনজন কর্মকর্তাও ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর যোগদান করেছেন। এখন প্রশ্ন উঠেছে এ বি এম ফেরদৌস, মোঃ সহিদুল ইসলাম ও মোঃ মঞ্জুর রেজা কোন কোন কারখানাসমূহের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে যোগদান করেছেন?


ঐ সকল কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদে কি কোন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিল না? তাহলে কি একই কারখানার দুই জন ব্যবস্থাপনা পরিচালক? মোহাম্মদ জাকির হোসেনের প্রশাসনিক অদক্ষতায় পদোন্নতিজনিত বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহলে চলছে আলোচনা। ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ বি এম ফেরদৌস-কে পরিচালক (কারি. ও প্রকৌ.) এর সাথে সংযুক্ত থেকে বিসিআইসি’র আইসিটি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে,ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ সহিদুল ইসলাম-কে পরিচালক (বাণিজ্যিক) এর সাথে সংযুক্ত থেকে বিসিআইসি’র ক্রয় বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ মঞ্জুর রেজা-কে পরিচালক (বাণিজ্যিক) এর সাথে সংযুক্ত থেকে বিসিআইসি’র বিপণন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে পদায়ন করে ২০২২ সালের ২০ ডিসেম্বর অপর এক দপ্তরাদেশ জারি করা হয়। এখানেও ঘটে বিপত্তি।


সংযুক্ত কর্মকর্তা কি বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করতে পারেন? বিভাগীয় প্রধান হিসেবে পদায়িত হলে সংযুক্ত রাখার প্রয়োজন কি? এখানেও মোহাম্মদ জাকির হোসেনের প্রশাসনিক অদক্ষতা প্রতীয়মান হয়।


জনবাণীর অনুসন্ধানে জানা যায়, ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তাগণ বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কপোরেশন (বিসিআইসি) তে সদ্য যোগদানকৃত চেয়ারম্যান সাইদুর রহমানের সাথে পরিচিতি সভায় নিজেদের পদোন্নতি প্রাপ্ত পদ গোপন করে ঊর্ধ্বতন মহাব্যবস্থাপক বা সিনিয়ার মহাব্যবস্থাপক হিসেবে মিথ্যা ও ভুল তথ্য অকপটে উপস্থাপন করেছেন। শুধু তাই নয় নিজেদের মূল পদবী গোপন রেখে তারা এখন বিভাগীয় প্রধান পদবী ব্যবহার করে নথি ও পত্রাদি স্বাক্ষর করছেন।


এ বিষয়ে অনুসন্ধানে বেড়িয়ে আসে পরিচালক (বাণিজ্যিক) এর নির্দেশে মূল পদবী সীল থেকে উঠিয়ে বিভাগীয় প্রধান পদবী ব্যবহার করছেন। প্রকৃত পক্ষে বিভাগীয় প্রধান কোন পদবী হতে পারে না। সম্প্রতি বিসিআইসিতে শত শত কোটি টাকার সার দুর্নীতির বিষয়টি প্রকাশিত হলে শিল্প মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে পরিচালক (বাণিজ্যিক) এর সাথে সংযুক্ত থেকে বিসিআইসি’র ক্রয় বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ সহিদুল ইসলাম-কে গত ২৪ জানুয়ারি ঘোড়াশাল পলাশ ফার্টিলাইজার পাবলিক লিমিটেড কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে বদলী করা হয়।


এখানে আবারও ঘটে বিপত্তি। মোঃ সহিদুল ইসলাম এর মূল ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ গোপন করে তার পদবী দেখানো হয় বিভাগীয় প্রধান (ঊর্ধ্বতন মহাব্যবস্থাপক) হিসেবে। এখানেও মোহাম্মদ জাকির হোসেনের প্রশাসনিক অদক্ষতা স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, মোঃ সহিদুল ইসলাম মোহাম্মদ জাকির হোসেনের ঘনিষ্ট বন্ধু। মোহাম্মদ জাকির হোসেন পদোন্নতি-কে বিবর্তনবাদে পরিণত করে চলেছেন। দীর্ঘ ৮ বছর একই বিভাগে থেকে মোহাম্মদ জাকির হোসেন ক্ষমতার অপব্যবহার করে চলেছেন।


কর্তৃপক্ষকে ভূল তথ্য দিয়ে বা মিসগাইড করে মোহাম্মদ জাকির হোসেন নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করে নেন বলে জনমুখে প্রচলিত রয়েছে। আদালতের সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকলেও সম্প্রতি বিসিআইসি’র জ্যেষ্ঠতা তালিকাকেও বিবর্তনবাদে রূপ দেওয়ার জন্য মোহাম্মদ জাকির হোসেন কাজ করে যাচ্ছেন।


শুধু মোহাম্মদ জাকির হোসেনই নয় এক চেয়ারে বছরের পর বছর অনেক কর্মকর্তা রয়েছে। জনবাণীর অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রশাসন বিভাগে এই সংখ্যা অনেক বেশি। কর্মকর্তাদের দাবী প্রশাসন বিভাগের কর্মকর্তা পরিবর্তন হওয়া প্রয়োজন। দীর্ঘদিন একপদে থাকলে সিন্ডিকেট তৈরি হয়।


৭ বছর একই পদে কর্মরত মোঃ সহিদুল ইসলাম-কে গত ২৪ জানুয়ারি ঘোড়াশাল পলাশ ফার্টিলাইজার পাবলিক লিমিটেড কোম্পানী এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে বদলী করা হলেও একই বিভাগে প্রায় ৭ বছর কর্মরত উপ-মহাব্যবস্থাপক মোঃ সাইফুল আলম-কে আবারও ক্রয় বিভাগে বদলী করে আনা হয়েছে।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কর্মকর্তা জনবাণীকে বলেন, মোঃ সাইফুল আলম ও মোঃ সহিদুল ইসলাম একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। মূলত সার চোরাকারবারির সিন্ডিকেট চালু রাখতে এমনটা করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মহল থেকে আরও যায়।  মোঃ সাইফুল আলম এর কর্মকান্ড সাবেক চেয়ারম্যান  শাহ মোঃ এমদাদুল হক এর নজরে এলে তাকে বিসিআইসির নিয়ন্ত্রণাধীন আশুগঞ্জ ফার্টিলাইজার এ্যান্ড কেমিক্যাল কোম্পানী লিঃ এ বদলী করেন।


বিসিআইসির সিএনএফ এজেন্সি লাইসেন্স থাকার পরেও মোঃ সাইফুল আলম সিএনএফ এজেন্ট নিয়োগ প্রচলন করে বিসিআইসি’র কোটি কোটি টাকা ক্ষতি করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।  বিসিআইসি’র কারখানা সমূহের অবস্থা বিশেষ ভাল না। একই পদে বছরের পর বছর থাকা কর্মকর্তাদের সিন্ডিকেট ভাঙা উচিৎ।