দানবীয় সরকারকে উৎখাত করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে: মির্জা ফখরুল


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


দানবীয় সরকারকে উৎখাত করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে: মির্জা ফখরুল

গাজীপুর প্রতিনিধি: বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হবার আহবান জানিয়ে বলেন, আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে উত্তাল আন্দোলনের মাধ্যমে বর্তমান দানবীয় সরকারকে উৎখাত করি। একমাত্র আন্দোলনের মাধ্যমেই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার সম্ভব। এ সরকারের বিদায়ের ঘন্টা বেজে গেছে। 

সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সাহস ও বুকের পাটা থাকলে অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন দিন। তখন দেখা যাবে জনগণ কাদের চায়? তাই গণতন্ত্র রক্ষা ও ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে হলে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। আইনশৃংখলা বাহিনীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আওয়ামীলীগ এ দেশের প্রভু নয়। দেশের মালিক জনগণ। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় দেশ চলে। আপনারা সংবিধান মেনে চলুন, দেশ রক্ষায় কাজ করুন, জনগণের কথা ভাবুন। জনগণ আজ এ সরকারের হাত থেকে মুক্তি চায়। আপনারা জনগণের পক্ষে থাকুন।

খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে শুক্রবার বিকালে জেলা শহরের শহীদ বরকত স্টেডিয়ামে গাজীপুর জেলা ও মহানগর বিএনপি আয়োজিত বিশাল সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন।

বিএনপি’র ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির আহবায়ক সাবেক এমপি ফজলুল হক মিলনের সভাপতিত্বে ও মহানগর বিএনপি’র সদস্য-সচিব মোঃ সোহরাব উদ্দিন এবং জেলা বিএনপি’র সদস্য-সচিব কাজী ছাইয়েদুল আলম বাবুলের যৌথ সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, মহানগর বিএনপি’র আহবায়ক সালাহউদ্দিন সরকার, মুন্সিগঞ্জ জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, বিএনপি’র সহসাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাড. আব্দুস সালাম আজাদ, সাবেক এমপি হাসান উদ্দিন সরকার, যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবু, সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ূন কবীর খান, সহ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, ঢাকা মহানগর বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন, বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সদস্য ডা. মাজহারুল আলম, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ
সম্পাদক আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল, কালিয়াকৈর পৌরসভার মেয়র মজিবুর রহমান, কেন্দ্রীয় সদস্য ওমর ফারুক শাফিন, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের জেলা সভাপতি অ্যাড. সিদ্দিকুর রহমান, জেলা বিএনপি নেতা হেলাল উদ্দিন প্রমুখ।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, রাস্ট্রপতি নির্বাচন কমিশন করার জন্য সংলাপ শুরু করেছেন। আমরা হুদা মার্কা নির্বাচন কমিশন চাই না। নির্বাচন কমিশন গঠনের পূর্বে বর্তমান সরকারকে অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে। নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবাধ নির্বাচন দিতে হবে। 

তিনি উল্লেখ করেন, আওয়ামীলীগ নেতারা বলেন আমরা নাকি নির্বাচনে আসতে ভয় পাই। আরে ভয়তো আপনারা পান। সুষ্ঠু নির্বাচন হলেই প্রমাণিত হবে কে কাকে ভয় পায়। জনগণ স্বৈরাচারী একনায়কতন্ত্রমার্কা সরকারের পরিবর্তন চায়।

তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়া দেশের প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা। তিনি দেশের ও জনগণের জন্য গণতন্ত্র রক্ষায় আপোষহীন সংগ্রাম করেছেন। মিথ্যা মামলায় আটক হয়ে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আমারা অবিলম্বে তাঁর মুক্তি চাই। তাঁর সুচিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নেয়ার দাবি জানাচ্ছি।

তিনি আরো বলেন, অধিকার আদায়ের জন্য বড় ধরণের ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। জনগণ পছন্দ মতো ভোট দিতে পারে না। আগের রাতে ভোট হয়ে যায়। দেশে চার হাজার সাংবাদিকদের নামে মামলা দেয়া হয়েছে। শতাধিক সাংবাদিক হত্যা করা হয়েছে। বিএনপি’র পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে। সারাদেশে ২৫ লাখ নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। আজকের দেশের এ সংকট বিএনপি-খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নয়। এ সংকট দেশের সকল জনগণের সংকট। এ সংকট থেকে জনগণ মুক্তি চায়।

শুক্রবার দুপুরের আগে থেকেই জেলা ও মহানগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে খন্ডখন্ড মিছিল সহকারে দলীয় নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে আসতে থাকেন। দুপুরের পর স্টেডিয়াম কানায় কানায় পূর্ণ যায়। প্রায় ১৫ বছর পর গাজীপুরে বিএনপির বড় ধরণের এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হওয়ায় নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ- উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়।

এদিকে শুক্রবারের সমাবেশটি জেলার শ্রীপুর অনুষ্ঠিত হওয়ার মৌখিক অনুমতি পেলেও বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জেলা পুলিশ সে সমাবেশেরর অনুমতি বাতিল করে দেয়। সন্ধ্যার পর জেলা বিএনপি’র শীর্ষ নেতৃবৃন্দ গাজীপুরের জেলা প্রশাসকের সঙ্গে দেখা করলে তিনি শহরের বরকত স্টেডিয়ামে সমাবেশের মৌখিক অনুমতি দেন। 

সভায় বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট ফজলুল রহমান বলেন, বিনা চিকিৎসায় খালেদা জিয়া মারা গেলে জনগণ একশ বছর ধরে ঘৃণা করবে। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক এমএজি ওসমানী এবং ১১জন সেক্টর কমান্ডারের নামও তারা উচ্চারণ করেনি। এ বিষয়টি ইতিহাসে কলংক হয়ে থাকবে।