ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে ইতিহাস ঐতিহ্যের ময়মনসিংহ বড় মসজিদ


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০২:৪১ পূর্বাহ্ন, ১২ই এপ্রিল ২০২৩


ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে ইতিহাস ঐতিহ্যের ময়মনসিংহ বড় মসজিদ
ময়মনসিংহ বড় মসজি

ময়মনসিংহ অঞ্চলে ৪৪৫ হিজরি ও ১০৫৩ খ্রীস্টাব্দ আগমন ঘটেছিল হযরত শাহ্ মুহাম্মদ সুলতান কমর উদ্দিন রুমি'র (রহ.)। তিনিই প্রথম ইসলাম ও দীনের দাওয়াত শুরু করেন এই অঞ্চলে। তখন থেকেই ইমানী চেতনায় নামাজ, ইবাদত, বন্দেগি করতে মুসলিমরা মসজিদ নির্মাণ করেন। কালের বিবর্তনে মুগল-জমিদার আমলের অনেক মসজিদ বিলীন হয়ে গেলেও, কিছু কিছু মসজিদ এখনো স্বগর্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে।


লোকমুখে প্রচার রয়েছে ১৮৫০/১৮৫২ সালে জমিদারের মৌখিক অনুমতিতে মুসলিমরা নামাজ, ইবাদত বন্দেগি করার জন্য টিনের ছাপড়া দিয়ে ময়মনসিংহে এই মসজিদ নির্মাণ করেন। পরবর্তীতে ১৯৩৫ সালে এই মসজিদ ওয়াকফ্ অ্যাক্টের অধীনে পাবলিক এস্টেটে পরিণত হয়।


সেই মসজিদটিই বর্তমানে ময়মনসিংহ বড় মসজিদ হিসাবে পরিচিত। ব্রহ্মপুত্র নদের কিনারায় নগরীর থানার ঘাট স্বগর্ভে দাড়িয়ে আছে তিন তলা ভবন বিশিষ্ট এই মসজিদ। মসজিদ প্রাঙ্গনেই রয়েছে তিন তলা বিশিষ্ট হাফেজি মাদ্রাসা। যেখানে বর্তমানে এক হাজার ২০০ জন শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছেন।


মসজিদটি প্রায় ১.৯ একর জমির ওপর তিন তলা বিশিষ্ট স্থাপনা। মসজিদে ১২৫ ফুট করে উঁচু দুটি মিনার ও একটি গম্বুজ রয়েছে। চীনা মাটির টুকরা দিয়ে গম্বুজটি নকশা করা। ছাদের রেলিংগুলো দেওয়া হয়েছে মিনার ও গম্বুজের আদলে। এর দৈর্ঘ্য ১০৫ ফুট ও প্রস্থ ৮৫ ফুট। মসজিদের প্রতি তলায় ১৮টি করে কাতার রয়েছে। একসাথে অন্তত ৫ হাজার মুসল্লি একত্রে নামাজ আদায় করতে পারেন। 


মসজিদে প্রবেশের জন্য তিনটি ফটক। প্রধান ফটক মসজিদের উত্তরপাশে। প্রধান ফটকের দুই পাশে দুটি মিনার। মসজিদ থেকে প্রধান ফটক দিয়ে বের হলেই নগরীর ছোট-বাজার, বড়-বাজার। তার ঠিক বিপরিত দিকে মহারাজা রোডে ২ নম্বর গেইট। এই গেইট দিয়ে ঢুকতে রয়েছে মসজিদের শোচাগার। তিন নম্বর গেইট মসজিদের দক্ষিণ পাশে। 


মসজিদের প্রবেশমুখে রয়েছে মুসুল্লীদের ওযু করার জন্য দুটি পানির হাউজ। হাউজের পানিতে শুভা পাচ্ছে রংবেরঙের মাছ। মসজিদের ভিতরে মূল্যবান মোজাইক পাথরের মেঝে, দেয়ালজুড়ে মনোরম টাইলস, অত্যাধুনিক শব্দ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। পবিত্র রমজানে অসংখ্য মুসল্লী এই মসজিদে ইতিকাফ করেন।


এই মসজিদ প্রতিষ্ঠাকাল থেকে ১৯৪০ খ্রি. পর্যন্ত মিসর থেকে আগত প্রখ্যাত কারী ও মাওলানা আবদুল আওয়াল (রহ.) ইমামের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৪১ থেকে ১৯৯১ খ্রি. পর্যন্ত টানা ৫৬ বছর ইমাম ও খতিবের দায়িত্ব পালন করেন জামানার কুতুব হজরত মাওলানা ফয়জুর রহমান (রহ.)। ১৯৯১ খ্রি আল্লামা শায়খ আবদুল হক অত্যন্ত সুনাম ও দক্ষতার সঙ্গে ইমাম ও খতিবের দায়িত্ব পালন করছেন।


মসজিদ'র মোয়াজ্জিন ক্বারী শহিদুল ইসলাম বলেন, এই মসজিদে বিগত ২৫ বছর যাবত সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করে আসছি। মসজিদে অন্তত একসাথে ৫ হাজার মুসুল্লী নামাজ আদায় করতে পারেন। জেলায় এটি ঐতিহাসিক ও স্বনামধন্য মসজিদ হিসাবে পরিচিত। প্রতি বছর এখানে খতম তারাবীর নামাজ পড়ানো হয়। এই বছর প্রথম প্রথম অন্তত চার হাজার মানুষ তারাবীর নামাজে  অংশ গ্রহণ করেছেন। এখন থেকে দুই বছর আগেও মসজিদ কমিটির পক্ষ থেকে রমজানে ইফতারের আয়োজন করা হতো। বিগত দুই বছর যাবত তা বন্ধ আছে। তবে, মসজিদ প্রাঙ্গনে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ইফতারের আয়োজন করেন।


ময়মনসিংহ বড় মসজিদ'র পেশ ইমাম ও খতিব আল্লামা আব্দুল হক বলেন, মসজিদ কত সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তা সঠিক জানা নেই। প্রচলিত আছে ১৮৫০/১৮৫২ সালের দিকে প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে ১৯৩২ সালে বড় মসজিদ হাফেজিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০৫ সালে কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ ক্লাস দাওরা হাদিস প্রথম খোলা হয়েছে। এখান থেকে বর্তমানে চার বছরে মুফতি হয়। এছাড়াও বিভিন্ন ধর্ম গ্রন্থ শিক্ষা দেওয়া হয়, আমাদের ধর্মগ্রন্থে যা আছে, তা তো পড়ানো হয়। অন্যান্য ধর্মগ্রস্থও শিক্ষা দেয়া হয়। বর্তমানে মাদ্রাসায় এক হাজার ২০০ শিক্ষার্থী আছে।


মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের খাওয়া-দাওয়া অন্যান্য খরচ কিভাবে আসে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে গরিব ছাত্ররা বেশি আসে। কোন কোন ছাত্র সম্পুর্ণ ফ্রি, কিছু ছাত্র হাফ ফ্রি, আবার কিছু ছাত্র আছে, যারা সম্পূর্ণ খরচ নিজেরাই বহন করে। অনেক মানুষ আছে মাদ্রাসায় দান করে, যাকাত, ফিতরা, কোরবানীর চামড়ার টাকা দেন। এগুলো দিয়েই মাদ্রাসা খরচ চলে।


মসজিদ নিয়ে পরিকল্পনা বলতে, মসজিদ হলো মানুষের হেদায়ের কেন্দ্র, এখান থেকে দিনের কথা চালু হয়, দিন শিক্ষা দেয়া হয়। মসজিদে যেন আরও মুসল্লী বাড়ে, আমরা সব সময় সেই চেষ্টা করি এবং এই মসজিদ যেন সর্বদিক থেকে দেশের মাঝে অনন্য একটি মসজিদ হয়।


আরএক্স/