প্রত্যাবাসনের পরিস্থিতি দেখতে মিয়ানমারে যাচ্ছে প্রতিনিধিদল


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৪:৫০ পূর্বাহ্ন, ৫ই মে ২০২৩


প্রত্যাবাসনের পরিস্থিতি দেখতে মিয়ানমারে যাচ্ছে প্রতিনিধিদল
ফাইল ছবি

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডুতে পরিবেশ-পরিস্থিতি সরজমিনে দেখতে বাংলাদেশে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের নিয়ে একটি প্রতিনিধিদল মিয়ানমার যাচ্ছে শুক্রবার।


রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদলটি বাস্তচ্যূত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে রাখাইনের সার্বিক পরিস্থিতি কতোটুকু অনুকুলে রয়েছে মূলত তা দেখবে। প্রতিনিধিদলে থাকবে ২০ জন রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতা। তাদের সহযোগিতা করার জন্য সরকারি কর্মকর্তাদের একটি দল ও সাথে থাকবে। বাংলাদেশে আশ্রিত মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা নাগরিকদের প্রত্যাবাসন কার্যক্রমের অংশ হিসাবে  প্রতিনিধিদলটি রাখাইনে যাচ্ছে।


এইসব তথ্য জানিয়েছেন শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।


দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কক্সবাজার জেলার উখিয়া ও টেকনাফ এবং নোয়াখালীর হাতিয়ার ভাসানচরে অবস্থিত ৩৪ টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সার্বিক দায়িত্ব পালন করছেন।


আরআরআরসি মিজানুর রহমান বলেন, রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদলের সাথে কোন কোন সরকারি কর্মকর্তারা রাখাইনে যাচ্ছেন তা এখনো জানা যায়নি। বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেখছে। প্রতিনিধিদলের হয়ে যে সব রোহিঙ্গা রাখাইনে যাচ্ছে তারাই মূলত মূখ্য ভূমিকা পালন করবে সেখানে। যেহেতু মিয়ানমারে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন করা হবে, তাই তাদের সরেজমিন অভিজ্ঞতা প্রত্যাবাসন কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ। রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদলটি রাখাইনের পরিবেশ- পরিস্থিতি অনুকুল দেখে আশ্বস্ত হলে তা প্রত্যাবাসনের জন্য সহায়ক হবে।


সংশ্লিষ্ট দায়িত্ব সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার জেলার টেকনাফের নাফ নদী হয়ে প্রতিনিধিদলটি মিয়ানমারের মংডু শহরে যাবে। টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের লেদা, নয়াপাড়া ও জাদিমুড়া এলাকায় অবস্থিত ২৪, ২৬ ও ২৭ নাম্বার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসবাসরত ২০ জন রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতাকে বাছাই করা হয়েছে মিয়ানমারে যাওয়ার জন্য।


প্রতিনিধিদলে নাম থাকা ২৬ নম্বর ক্যাম্পের রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতা বজলুল ইসলাম বলেন, আজ বৃহস্পতিবার বিকালে তাদেরকে দিকনির্দেশনা দেওয়া হবে ক্যাম্প ইনচার্জের পক্ষ থেকে। হয়তো প্রতিনিধিদলের সদস্যদের আজকে ক্যাম্প থেকে নিয়ে যাওয়া হবে টেকনাফ সদরের রেস্টহাউজ কিংবা আবাসিক হোটেলে। সেখান রাত যাপনের পর  কাল শুক্রবার সকালে যাত্রা করবে মংডুর উদ্দেশ্য। 


প্রতিনিধিদলের সদস্য হিসাবে নাম থাকা ২৭ নম্বর ক্যাম্পের কমিউনিটি নেতা  আবু সুফিয়ান বলেন, ক্যাম্প ইনচার্জের কার্যালয়ে আজ বিকালে তাদের ডাকা হয়েছে। সেখানে আমাদের করণীয় কী হবে সে বিষয়ে হয়তো ব্রিফ করা হবে। তিনি আর কথা বলতে রাজি হননি।


বাংলাদেশে আশ্রিত বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা নাগরিকদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন কার্যক্রমের অংশ হিসাবে মিয়ানমারের কাছে বাংলাদেশের দেওয়া রোহিঙ্গাদের তালিকা যাছাই-বাছাই করতে গত ১৫ মার্চ টেকনাফ হয়ে বাললাদেশে আসেন মিয়ানমার সরকারের ১৭ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল। প্রতিনিধিদলটি টানা সাতদিন টেকনাফের স্থল বন্দর রেস্টহাউজে অবস্থান করে বাংলাদেশে আশ্রিত ১৪৭ রোহিঙ্গা পরিবারের মোট ৪৮৬ জন রোহিঙ্গার সাথে সরাসরি কথা বলেন এবং তাদের দেওয়া বক্তব্য রেকর্ড করেন। ২২ মার্চ সকালে প্রতিনিধিদলটি নাফ নদী পার হয়ে মিয়ানমারে ফিরে যায়। ওই সময় মিয়ানমারের প্রতিনিধিদলকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল যাদের প্রত্যাবাসন করা হবে সেই সব রোহিঙ্গা যাতে প্রত্যাবাসনের আগে রাখাইনের সার্বিক পরিবেশ  স্বচক্ষে দেখে আসতে পারে তার ব্যবস্থা করতে। তারই ধারাবাহিকতায় রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদল কাল রাখাইনে যাচ্ছে।


আরআরআরসি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ২৫ আগষ্ট বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ঢল শুরু হওয়ার পর ২০১৮ সালে বাংলাদেশ মিয়ানমারের কাছে প্রত্যাবাসনের জন্য ৮ লাখ ৮২ হাজার রোহিঙ্গার একটি তালিকায়  দিয়েছিল। সে তালিকা যাছাই-বাছাই করে মাত্র ৬৮ হাজার রোহিঙ্গার একটি তালিকা চুড়ান্ত করে তা বাংলাদেশের কাছে ফেরত পাঠিয়েছিল মিয়ানমার।


টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, কাল সকালে টেকনাফের নাফ নদী হয়ে রোহিঙ্গাদের ২০ সদস্যের প্রতিনিধিদলটি মিয়ানমারে যাওয়ার কথা রয়েছে। তাদের আজ বৃহস্পতিবার রাত যাপনের জন্য টেকনাফে সদরে তিনটি হোটেলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিনিধিদলে আরআরআরসির প্রতিনিধি ও থাকবেন।