কুড়িগ্রামের বাজারে দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতি, জনগণের নাভিশ্বাস


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


কুড়িগ্রামের বাজারে দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতি, জনগণের নাভিশ্বাস

এবারের শীত মৌসুমী বাজারে সবজির সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকলেও দাম অন্যান্যবারের তুলনায় অনেক বেশি। সাধারণত শীতে মৌসুমী সবজির সরবরাহ বেশি থাকে। দাম থাকে বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় কম। এক্ষেত্রে এবারের শীত ব্যতিক্রম। যথেষ্ট সরবরাহ আছে। তবে দামে সেই প্রবণতা নেই। 

মোটা-সরু সব ধরনের চালের দাম বাড়তি। যা কেজি প্রতি ৪০-৬০ টাকা। মাছ-মাংসের দাম বাড়ছেই। দেশী মাছের কেজি ৪০০-৮০০ টাকা। বয়লার মুরগীর মাংস কেজি প্রতি ১৫০ টাকা। দেশী মুরগী কেজি প্রতি ৩৫০ টাকা। গরুর মাংস কেজি প্রতি ৬০০ টাকা। খাসির মাংস কেজি প্রতি ৮০০ টাকা। অন্যান্য পণ্যেরও একই গতি। বাজারের এই বাড়তি দামের প্রভাব উঠে এসেছে সরকারের মূল্যস্ফীতির পরিসংখ্যানে। 

সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সমাপ্ত জানুয়ারির মূল্যস্ফীতির তথ্য প্রকাশ করেছে। 

এতে দেখা যায়, খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি ২৪ শতাংশীয় পয়েন্ট বেড়েছে। এতে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতির পারদ গিয়ে ঠেকেছে ৫ দশমিক ৬০ শতাংশে। ডিসেম্বরে এ হার ছিল ৫ দশমিক ৪৬ এবং নভেম্বরে ছিল ৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ। তবে জানুয়ারিতে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে। এ হার এখন ৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ। এর আগের দুই মাস ডিসেম্বর ও নভেম্বরে ছিল যথাক্রমে ৬ দশমিক শূন্য ৫ ও ৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ। 

বিবিএসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, খাদ্যপণ্যে জাতীয় মূল্যস্ফীতির চেয়ে গ্রামাঞ্চলের মূল্যস্ফীতি খানিকটা চড়া। গেল জানুয়ারিতে গ্রামে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৯৪ শতাংশ। আগের দুই মাস ডিসেম্বর ও নভেম্বরে এই হার ছিল যথাক্রমে ৫ দশমিক ৯৩ ও ৫ দশমিক ৯০ শতাংশ।

প্রতিবেদন বলছে, খাদ্য বহির্ভূত পণ্যে গ্রাম এবং শহর উভয় অঞ্চলেই মূল্যস্ফীতি কমেছে। তবে খাদ্যপণ্যের চেয়ে তা এখনো বেশি। জানুয়ারি শেষে খাদ্যবহির্ভূত খাতে জাতীয় মূল্যস্ফীতি দাড়িয়েছে ৬ দশমিক ২৬ শতাংশ। আগের দুই মাস ডিসেম্বর ও নভেম্বরে যথাক্রমে ছিল ৭ এবং ৬ দশমিক ৮৭ শতাংশ। জানুয়ারিতে গ্রামাঞ্চলে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক ৩২ শতাংশ। শহরাঞ্চলে এ হার ৬ দশমিক ১৭ শতাংশ। বর্তমান বাজারে লবণ কেজি প্রতি ৩৫ টাকা, সয়াবিন তেল কেজি প্রতি ১৭০ টাকা, কেরসিন তেল কেজি প্রতি ৭৫ টাকা, চিনি কেজি প্রতি ৭৫ টাকা, ঠাকরীর ডাল কেজি প্রতি ১২০ টাকা, বুটের ডাল কেজি প্রতি ৮০ টাকা, চা পাতা কেজি প্রতি ২৮০ টাকা, সরিষার তেল কেজি প্রতি ২৪০ টাকা, মুসুর ডাল ১০০-১২০ টাকা, আটা কেজি প্রতি ৩৫ টাকা, শুকনা মরিচ কেজি প্রতি ২৫০ টাকা কাঁচা মরিচ কেজি প্রতি ৪০ টাকা, আলু কেজি প্রতি ১২ টাকা, পিঁয়াজ কেজি প্রতি ৪০ টাকা, রসুন কেজি প্রতি ৪০ টাকা, ফুলকপি কেজি প্রতি ৩৫ টাকা, বেগুন কেজি প্রতি ৪০ টাকা লাউ ৫০ টাকা, টমেটো কেজি প্রতি ৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সেই সাথে বেড়েছে জ্বালানি খরচ। একটি ছোট এক চুলার সিলিন্ডার গ্যাসের দাম ১২২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। 

এই অস্বাভাবিক হারে দ্রব্যমুল্যের উর্দ্ধগতিতে সাধারণ খেটে খাওয়া দিনমজুর শ্রেণির মানুষ কোন ক্রমেই কুলিয়ে উঠতে পারছে না। বাজার মনিটরিং এর দায়িত্বে নিয়োজিত দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসন বরাবরই ব্যর্থ।  বাণিজ্য মন্ত্রী উনার দায়িত্ব নেয়ার পর হতেই ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট বিভিন্ন সময় নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা বাজার থেকে লুটে নিচ্ছে। ১ম দিকে পিঁয়াজ নিয়ে এক ধরণের কেলেঙ্কারি শুরু হলো। ২০০ টাকা কেজি দরে দেশের জনগণকে পিঁয়াজ কিনতে হয়েছিল। দেশীয় উৎপাদিত চিনি ২৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে না পারায় আস্তে আস্তে দেশীয় চিনির মিলগুলো বন্ধ হয়ে গেলো। বরাবরই সরকার দেশীয় শিল্প রক্ষায় ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে আসছে। দেশীয় উৎপাদিত চিনির বাজার নিশ্চিত না করে বাইরে থেকে ব্যবসায়ীদের চিনি আমদানির সুযোগ দেয়ার কারণে আমাদের সকল শিল্প নষ্ট হয়ে গেলো। এর দায় সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কেই নিতে হবে। সাধারণ দিনমজুর শ্রেণির মানুষ দ্রব্যমুল্যের উর্দ্ধগতির কারণে পরিবার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে। এর থেকে মুক্তির পথ বের করতে হবে। 

আদর্শ পৌর বাজার ব্যবসায়ী সমিতি, কুড়িগ্রামের সাধারণ সম্পাদক মোঃ রাজু আহমেদ রানা জানায়, বাজারে নিত্য পণ্যের মূল্য অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধির কারণে মধ্যবৃত্ত পরিবারের মানুষ আজ নিরবে কাঁদছে। আমরা চাই- বাজার স্থিতিশীল থাকুক, সাধারণ মানুষ ক্রয় ক্ষমতার মধ্যেই সীমিত আয়েই পরিবার চালাবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা। কিন্তু বাজারের দ্রব্যমুল্যের বিষয়টি প্রশাসনের যে সকল দপ্তরের মনিটরিং করার কথা, ওই সকল প্রতিষ্ঠানে সুষ্ঠু তদারকির অভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না। মাঝে মধ্যে বাজারে ভ্রাম্যমান আদালতের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। উনারা সাধারণ ব্যবসায়ীদের সরকার নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন ব্যাগ রাখার অপরাধে বিভিন্ন সময় জরিমানা করে থাকেন। এই সকল নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন কোথাও না কোথাও উৎপাদন হচ্ছে, উৎপত্তি স্থলে অভিযান না চালিয়ে সাধারণ ব্যবসায়ীদের জরিমানা করা এটা কোন সভ্য সমাজে কাম্য হতে পারে না।

এসএ/