ময়মনসিংহে সীমান্তে হাতি তাড়াতে বৈদ্যুতিক ফাঁদ


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৬:২৯ অপরাহ্ন, ১৯শে মে ২০২৩


ময়মনসিংহে সীমান্তে হাতি তাড়াতে বৈদ্যুতিক ফাঁদ
সীমান্তে হাতি তাড়াতে বৈদ্যুতিক ফাঁদ

ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া উপজেলার সিমান্ত এলাকায় হাতির আক্রমনে একের পর এক মানুষের প্রাণহানি, ঘরবাড়ি ভাংচুর, ফসলের ক্ষতিতে অতিষ্ঠ মানুষ। প্রাণ হারানোর ভয়ে ঘরবাড়ি ছেড়ে অনত্র বসবাস করছেন অনেকে। হাতির আক্রমণ থেকে বাঁচতে টাকা তুলে সিমান্ত এলাকায় বৈদ্যুতিক ফাঁদ তৈরী করেছেন স্থানীয়রা। বন বিভাগের দাবি, স্থানীয়রা নির্দেশনা অমান্য করে বৈদ্যুতিক ফাঁদ তৈরী করেছেন। এই ফাঁদে হাতির ক্ষতি, এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। তবে, এর দায়ভার স্থানীয়দের নিতে হবে।


সম্প্রতি জেলার হালুয়াঘাট উপজেলার গাজিরভিটা ইউনিয়নের সিমান্তের বারাকপাড়া এলাকায় হাতি তাড়ানোর জন্য বৈদ্যুতিক ফাঁদ তৈরী করতে দেখা গেছে। এই বৈদ্যুতিক ফাঁদ তৈরী করেছেন স্থানীয়রা।


স্থানীয় বলছে, হাতির আক্রমণ থেকে বাঁচতে গ্রামবাসী নিজ নিজ এলাকায় টাকা তুলে সিমান্ত এলাকা থেকে আনুমানিক ৭০০ থেকে ৮০০ গজ দুরে দুই লাইন বিশিষ্ট জিআই চিকন তার দিয়ে বৈদ্যুতিক ফাঁদ তৈরী করেছেন। তৈরী করা এই বৈদ্যুতিক ফাঁদে হাতির কোন ক্ষতি হবে বলে দাবি করছেন স্থানীয়রা। এসব ফাঁদ বারাকপাড়া, লামছাপাড়া, ডাকিয়াপাড়া, কান্দাপাড়া, গাবরাখালী, গলোইভাঙা, কড়ইতলীসহ জেলার হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া উপজেলার সিমান্ত এলাকায় এসব ফাঁদ তৈরী করা হয়েছে। 


স্থানীয়দের দাবি, সিমান্ত এলাকায় ভারতীয় পাহাড় থেকে খাবারের সন্ধ্যানে বন্য হাতির দল প্রায় প্রতিদিনই লোকালয়ে নেমে আসে। গত কয়েক বছরের তুলনায় এই বছর হাতি অনেক বেশি ক্ষয়ক্ষতি করেছে। ধান, সবজি, কলাবাগান, ঘরবাড়ি এমনকি বেশ কয়েকজন মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। এসব ক্ষয়ক্ষতি থেকে বাঁচতে প্রশাসনের কোন অগ্রগতি না দেখে গ্রামবাসী নিজেরা উদ্যোগী হয়ে টাকা তুলে দুই লাইন বিশিষ্ট জিআই তার দিয়ে বৈদ্যুতিক ফাঁদ তৈরী করা হয়েছে। কিলোমিটার প্রতি এই ফাঁদ তৈরীতে খরচ আনুমানিক ৫০ হাজার। এই ফাঁদে জেনারেটরের মাধ্যমে আর্থিং দেয়া হয়। আর্থিং দেয়ার কারণে জিআই তারে হাতি স্পর্শ করলে বৈদ্যুতিক শক লাগবে। এতে হাতি ভয় পেয়ে চলে যাবে। তাছড়া, এই জিআই তারে পলিথিন বেঁধে হয়েছে। যে কারণে দুর থেকে দেখেই হাতি চলে যায়, আর কাছে আসে না।


ময়মনসিংহ বন বিভাগের গোপালপুর বিট (হালুয়াঘাট ও নালিতাবাড়ী বিটের অংশ) কর্মকর্তা মাজাহারুল হক বলেন, ওই এলাকায় সরকারীভাবে হাতি তাড়ানোর সৌরবিদ্যুতের ফাঁদ তৈরী করা হয়নি। স্থানীয়রা আমাদের নির্দেশনা অমান্য করে জিআই তার দিয়ে বৈদ্যুতিক ফাঁদ তৈরী করেছেন। এই ফাঁদে হাতির ক্ষতি এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। তবে, তৈরী করা ফাঁদে হাতির ক্ষতি হলে দায় স্থানীয়দের নিতে হবে, বনবিভাগ এর দায়ভার নিবে না। তাছাড়া, এসব ফাঁদ অপসারণ করার ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানান তিনি।

 

গাজীরভিটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল মান্নান বলেন, শুনেছি সিমান্ত এলাকায় স্থানীয়রা হাতি তাড়াতে বৈদ্যুতিক ফাঁদ তৈরী করেছে। তবে কে বা কারা করেছে, তা কেউ আমার স্বীকার করে না। বৈদ্যুতিক ফাঁদ তৈরী না করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তারপরেও গ্রামবাসী কারের কথাই শুনছে না।


ময়মনসিংহ বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আ.ন.ম আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, গোপালপুরে দুই কিলোমিটার সৌরবিদ্যুতের ফাঁদ নির্মাণ করা হয়েছে। আরও ২৫ কিলোমিটার সৌরবিদ্যুতের ফাঁদ নির্মাণের পাশাপাশি সীমান্তে কাঁটাযুক্ত গাছ লাগানোর প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এসব বাস্তবায়িত হলেই বন্য হাতির আক্রমণ অনেকটাই কমে আসবে। তবে, সিমান্তে বৈদ্যুতিক ফাঁদ তৈরীর বিষয়টি আমার জানা নেই। যদি বৈদ্যুতিক ফাঁদ তৈরী করা হয়ে থাকে, তাহলে তা দ্রুত অপসারণের ব্যবস্থা করা হবে।


আরএক্স/