ঘাটাইল পৌরসভার লাইসেন্সে পরিবহনে চাঁদাবাজি


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:০১ অপরাহ্ন, ২০শে মে ২০২৩


ঘাটাইল পৌরসভার লাইসেন্সে পরিবহনে চাঁদাবাজি
পৌরসভার লাইসেন্সে ট্রাক থেকে চাঁদা তোলা হচ্ছে

টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে ব্রাহ্মণশাসন কলেজের পুকুর পাড় এলাকায় ট্রাক থেকে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে।


পৌরসভার বিভিন্ন স্থানে ট্রাক, মিনি ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান আটকে আদায় করা হচ্ছে চাঁদা। দেওয়া হচ্ছে রসিদ। পঞ্চাশ টাকা মূল্যের রসিদে লেখা ঘাটাইল পৌরসভা। অথচ সড়ক বা মহাসড়ক থেকে টোল আদায়ে সব সিটি করপোরেশন এবং পৌরসভাকে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন হাইকোর্ট। এর ছিটেফোঁটাও মানা হচ্ছে না ঘাটাইল পৌরসভায়।


ঘাটাইল পৌর মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশিদ মিয়া। ২০২১ সালের ২৮ নভেম্বর মেয়র পদে নির্বাচিত হন তিনি। এর কিছুদিন পরই পৌরসভার নামে পরিবহন থেকে চাঁদা তোলা শুরু হয়।


সরেজমিন দেখা গেছে, ঘাটাইল-সাগরদীঘি সড়কের সরকারি ঘাটাইল ব্রাহ্মণশাসন কলেজের পুকুর পাড়ে বেঞ্চে বসে আছেন মধ্যবয়স্ক তিন ব্যক্তি। তাঁদের গলায় ঝোলানো আইডি কার্ড। কার্ডে মেয়রের সই। একজনের হাতে চাঁদা আদায়ের রসিদ বই। অন্যজনের হাতে লাল নিশান। সাগরদীঘি থেকে পণ্যবোঝাই দুটি ট্রাক আসছে। লাল নিশান উড়িয়ে তা থামানো হলো। বোঝা গেল চালক এ স্থানের বিষয়ে আগে থেকেই জানেন। চাওয়া মাত্র ৫০ টাকার একটি নোট বের করে দিয়ে প্রথম ট্রাকচালক বুঝে নিলেন রসিদ।


কিছু দূর এগিয়ে কথা হয় ট্রাকচালক আক্তার হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘চাঁদা না দিলে ট্রাক আটকাইয়া রাখে। ৫০ টেহার (টাকা) নিগা কি আর বইয়া থাকন যায়, কন ভাই?’


ফিরে এসে কথা হয় চাঁদা আদায়ের দায়িত্বে থাকা লোকজনের সঙ্গে। তাঁদের মধ্যে আকবর হোসেনের ভাষ্য, ইজারার মাধ্যমে পরিবহন থেকে তাঁদের চাঁদা তোলার অনুমতি দিয়েছে পৌরসভা। বিনিময়ে ইজারা বাবদ এক বছরের জন্য পৌরসভাকে দিতে হয়েছে তিন লাখ টাকা।


ইজারায় নাকি বলা আছে পৌর এলাকার যেখান দিয়েই ট্রাক, মিনি ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান চলাচল করবে সেখান থেকেই চাঁদা তুলতে পারবেন ইজারাদাররা। টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ঘাটাইল পৌরসভার যে কোনো স্থানে যানবাহনে পণ্য ওঠানামার সময়ও দিতে হবে চাঁদা। এ বাবদ দিনে কত টাকা আদায় হয়? এ প্রশ্নের জবাবে পাশে থাকা শামস উদ্দিন বলেন, সর্বনিম্ন সাত হাজার টাকা ওঠে। দিনে সর্বনিম্ন সাত হাজার টাকা করে ধরে হিসাব করলে মাসে দুই লাখ ১০ হাজার টাকা। বছরে ২৫ লাখ ২০ হাজার টাকা। তবু সন্তুষ্ট নন শামস উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘শুরুতে ছয়জন ছিলাম। পরে মেয়রের আত্মীয়-স্বজনসহ আরও যোগ হয়েছে আটজন, মোট ১৪ জন। চাঁদা আদায় করা হয় দুই জায়গা থেকে। ঘাটাইল ব্রাহ্মণশাসন কলেজের পুকুর পাড় এবং ঘাটাইল দক্ষিণপাড়া আমতলা এলাকা থেকে


এক রিট পিটিশনের আলোকে ২০২২ সালের ২১ এপ্রিল সড়ক বা মহাসড়কে টোল আদায়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন হাইকোর্ট।


এই বিষয়ে পৌর মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশিদ মিয়ার ভাষ্য, হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছেন সেই রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল তিনি। কিছু অসহায় মানুষকে একটু সচ্ছলভাবে চলার সুযোগ করে দিতে পৌরসভায় নামমাত্র টাকা দিয়ে পরিবহন থেকে ৫০ টাকা করে আদায়ের অনুমতি দেওয়া হয়।


আরএক্স/