৩০ বছর অরণ্যে কাটিয়েছেন তিনি


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


৩০ বছর অরণ্যে কাটিয়েছেন তিনি

বিশ্বের সবচেয়ে নগরায়নের শিকার হওয়া একটি দেশ সিঙ্গাপুর। আকাশচুম্বী দালান আর বিলাশবহুল এপার্টমেন্টের কোনো অভাব নেই সেখানে। কিন্তু ওহ গো সেঙের জন্য অরণ্যের মধ্যে তৈরি করা এক তাঁবুকেই মনে হয়েছে সবচেয়ে বেশি আরামদায়ক।

৭৯ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ ওহ গো সেঙ। তবে এই মানুষটির প্রথম যে বিষয়টি নজড় কাড়ে তা হলো তার চোখের দ্যুতি। এতটা বয়স নিয়েও আরও কম বয়সী যে কারও চেয়ে অনেক বেশি স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনকে যাপন করছেন তিনি।

এই মাসের শুরুর দিকে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে ওহ গো সেঙের গল্প। এরপর রীতিমতো সবার মনোযোগের কেন্দ্রে চলে আসেন তিনি। গল্প শুনে কেউ যেমন আশ্চর্য হন, তেমনি আবার কেউ প্রশ্ন তোলেন এতদিনে কোনো সাহায্য কেন পেলেন না এই বৃদ্ধ। আরও বেশি অবাক হয়ে কেউবা আবার ভাবেন ৩০ বছর কারও চোখেই না পড়ে কীভাবে কাটিয়ে দিলেন তিনি।

আর এসবের শুরুটা ক্রিসমাসের দিন। অনুমতিপত্র ছাড়া ব্যবসা করার কারণে আইনী কর্মকর্তাদের কাছে আটক হন ওহ গো সেঙ। মহামারির কারণে বাজারে ফুল বিক্রির কাজটি হারিয়ে নিজের বাগানে হওয়া মরিচ আর কিছু শাকসবজি বিক্রি করছিলেন তিনি। তার ধারণা, দাম নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় কোনো এক অসন্তুষ্ট ক্রেতা পুলিশকে বিষয়টি জানায়।

অনুমতিপত্র না থাকার কারণে তার সবজি বাজেয়াপ্তের সময় দাতব্য কর্মী ভিভিয়ান প্যান সে জায়গা দিয়ে যাচ্ছিলেন। এই ঘটনা তাকে ক্ষুব্ধ করে। তিনি চাচ্ছিলেন না ওই বৃদ্ধ খালি হাতে বাসায় ফিরুক। কিন্তু আইনের দিক থেকে পথের ওপর কিছু বিক্রি করা যাবে না এই বিষয়টিও ভিভিয়ান বুঝতে পারছিলেন।

পরে পুরো ঘটনাটি ভিডিও করে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করেন তিনি। এরপর পরই ঘটনাটি ভাইরাল হয়ে যায় এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য লিয়াং এং হোয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। কিন্তু এখানেই শেষ নয়, বরং বলা যায় গল্পের শুরু।

ওহ গো সেঙ তার পরিবারের সঙ্গে সুনগেই তেনগাহ নামের একটি গ্রামে বসবাস করতো। ১৯৮০ সালে গ্রামটিকে সংস্করণের উদ্যোগ নেয়া হলে গ্রামটিতে উঁচু দালান নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়। সেখানকার বেশিরভাগ অধিবাসী নিজেদের জন্য ঘর বরাদ্দ পেলেও দুর্ভাগ্যজনকভাবে ওহ গো সেঙ তা পাননি। তার ভাইয়ের বরাদ্দ পাওয়া ঘরে তাকে থাকার জন্য বললেও তাদের ওপর বোঝা হতে চাননি তিনি।

বরং তিনি নিজের পুরনো বাড়ির পাশের একটি জঙ্গলে থাকার সিদ্ধান্ত নেন এবং বাঁশ, কাঠ ও পলিথিন দিয়ে তাঁবু তৈরি করে থাকতে শুরু করেন। তার থাকার জায়গাটিতে গিয়ে দেখা যায় খোলা আকাশের নিচে রান্নার জায়গা আর তাঁবুর ভেতর জড়ো করে রাখা শুধু যাপনের জন্য অত্যাবশ্যক সামগ্রী।

এছাড়া তাঁবুর পাশেই আছে একটি ছোট্ট বাগান যেখানে নিজের খাদ্য উৎপাদন করেন। কাপড় শুকানোর জন্য টাঙানো রশি ছাড়া বাগান রক্ষায় চারপাশে দেয়া আছে বেড়া। এই লম্বা সময়ে কখনো একাকীত্ব বোধ করেননি বলে দাবি করা এই বৃদ্ধ বলেন, বাগান নিয়ে ব্যস্ত থেকেই কেটে গেছে সময়।

তবে অনেকটা স্বপ্নের মতো জীবনের ইতি টানতে হয়েছে তাকে। গত ফেব্রুয়ারিতে স্থানীয় ওই এমপির সাহায্যে তাকে একটি ঘর দেয়া হয়। অন্য এক ব্যক্তির সঙ্গে ভাগে থাকা একরুমের এই ফ্ল্যাটে আছে পানি গরম করার সুযোগসহ, টিভি ও ফ্রিজের ব্যবস্থা। জীবন ধারণের জন্য গাড়ি চালানো এবং বাগান দেখাশোনার কাজগুলোও তিনি করে থাকেন।

ফ্ল্যাটে থাকাটা পছন্দের হলেও অরণ্যের জীবনকে মনে পড়ে বলে জানান তিনি। তবে এখনও প্রতিদিন নিজের পুরনো বাসস্থানে ফিরে যান ওহ গো সেঙ। ভোর তিনটায় ঘুম থেকে জেগে, কাপড় পরে কাজ শুরুর আগে নিজের বাগান দেখভাল করতে বেরিয়ে পড়েন তিনি।

এসএ/