মানবদেহে জুনোটিক রোগ সংক্রমণ রোধে ল্যাব স্থাপন
মো. রুবেল হোসেন
প্রকাশ: ০৫:৪৫ অপরাহ্ন, ২৫শে জুন ২০২৩
পশু থেকে মানবদেহে জুনোটিক রোগ (জলাতঙ্ক, তড়কা, ব্রুসেরোসিস, বোভাইন টিবি) সংক্রমণ রোধে অত্যাধুনিক ল্যাবরেটরি স্থাপন করা হয়েছে। রোগনিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের পাশাপাশি অধিকতর নিরাপদ প্রাণিজ আমিষ নিশ্চিত করাসহ জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি লাঘবে কাজ করছে ‘জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ভেটেরিনারি পাবলিক হেলথ সার্ভিস জোরদারকরণ প্রকল্প’। দেশের ২৭ জেলার ২০১ উপজেলায় প্রকল্পটির কার্যক্রম চলছে বলে জানা গেছে।
প্রকল্প পরিচালক ডা. মো. আজিজুল ইসলাম জনবাণীকে বলেন, প্রকল্পের মধ্যে ভিপিএইচ (ভার্চুয়াল সাইকোলজিকাল হিউম্যান) অ্যান্ড মাইক্রোবায়োলজি ল্যাব কাম অফিস ভবন নির্মাণ, ভিপিএইচ ল্যাব ও পোস্টমর্টেম কক্ষের যন্ত্রপাতি সংগ্রহ, ৪টি জুনোটিক রোগ সার্ভিলেন্স কার্যক্রম পরিচালনা, ১৫ হাজার কসাই এবং মাংস ব্যবসায়ীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া অন্যতম।
জানা গেছে, চারটি জুনোটিক রোগ সার্ভিলেন্স কার্যক্রম ও মাঠপর্যায়ে প্রাথমিক রোগনির্ণয়ে ৮৮ হাজার ৪১১টি নমুনা হেলথ অনুবিভাগ এবং কেন্দ্রীয় রোগ অনুসন্ধান গবেষণাগারে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ৬৮৮টির রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। তাদের মধ্য থেকে বাছাই করে ৪২৫ জনকে ২ কোটি ৯৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া গবাদিপশুর মাংস নিরাপদ রাখা এবং সংরক্ষণ ও জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে ১০ হাজার কসাই এবং মাংস ব্যবসায়ীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
আরও জানা গেছে, সাভার ডেইরি ফার্মসংলগ্ন ভিপিএইচ অ্যান্ড মাইক্রোবায়োলজি ল্যাব কাম অফিস ভবন নির্মাণে কাজ চলছে। পাঁচতলা ভবন নির্মাণকাজ শেষ হলেও পুরো কাজ সম্পন্ন হয়নি । প্রথম ও দ্বিতীয় তলার কাজ শেষ হয়েছে। তৃতীয় তলায় বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ চলছে। চতুর্থ ও পঞ্চম তলার কাজ এখনো বাকি রয়েছে।
ঠিকাদারের প্রতিনিধি সেলিম জানালেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে চতুর্থ ও পঞ্চমতলার কাজ শুরু হবে। আমদানিকৃত উপকরণ চট্টগ্রাম বন্দরে খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে। এগুলো চলে এলেই কাজ শুরু হবে। সর্বোচ্চ ২-৩ মাস সময় লাগবে।
আরও পড়ুন: হাটে পর্যাপ্ত গরুর যোগান, ক্রেতা কম দাম বেশি চাওয়ার অভিযোগ
প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে ডা. মো. আজিজুল ইসলাম জনবাণীকে বলেন, প্রয়োজনীয় অর্থ সঠিক সময়ে পেতে বিলম্ব হচ্ছে। এ কারণে ঠিকাদারদের অর্থ দিতে কিছুটা সমস্যা হলেও কোনো কাজ ফেলে রাখা হয়নি। পুরো প্রকল্পের অগ্রগতি ৮০ শতাংশের বেশি।
তিনি আরও বলেন, ভিপিএইচ ল্যাবের যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামের প্রায় ৫০ ভাগ আমদানি করা হয়েছে। এগুলো এখন স্থাপনের কাজ চলছে। বাকি সরঞ্জামাদি সংগ্রহের জন্য দরপত্র আহ্বান শেষে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। আশা করা যায়, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে সব কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। এ ছাড়া পোস্টমর্টেম কক্ষের উপকরণ ও যন্ত্রপাতি দেশে চলে এসেছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এগুলো স্থাপনের কাজ শুরু হবে।
আরও পড়ুন: কোরবানির গরুর চামড়ার নতুন দাম নির্ধারণ
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, ভবনের প্রথম তলাতে রয়েছে- ভিজিটর রুম, বড় কনফারেন্স রুম, স্যাম্পল কালেকশন রুম, স্যাম্পল ডেলিভারি রুম, মসজিদ, পোস্টমর্টেম রুম, স্টোর রুম। দ্বিতীয় তলাতে রয়েছে- পিএসও ১ ও ২ রুম, পিডি রুম, দুটি অফিস রুম, মিনি কনফারেন্স রুম, ইপিডিজি রুম। তৃতীয় তলাতে রয়েছে- ল্যাব ইনচার্জ রুম, জেনারেল ল্যাব, টিস্যুকালচার রুম, মডিকুলার রুম, মিডিয়া রুম, স্টোর ও সার্ভার রুম। চতুর্থ ও পঞ্চম তলাতে আধুনিক বিএসল-স্টান্ডার্ড ল্যাবরেটরি। ভবনের বাইরে বিউটিফিকেশনের জন্য এক্সপার্টদের সঙ্গে দ্রুত বসে গাইডলাইন তৈরি করা হবে।
নিরাপদ প্রাণিজাত খাদ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে নিরাপদ প্রাণিজাত খাদ্যের সরবরাহ বৃদ্ধি, জুনোটিক রোগনিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে জনস্বাস্থ্যের ওপর হুমকি নিরসন এবং প্রাথমিক স্তরে রোগনির্ণয়ের সুযোগ তৈরির লক্ষ্যে ২০১৯ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত চার বছরমেয়াদি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। সরকারি অর্থায়নে এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয় ৭৩ কোটি ২৬ লাখ ৪ হাজার টাকা।
জেবি/এসবি