গরুর মাংসের আচার ও কুশনে বদলে দিয়েছে শাম্মির জীবন


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


গরুর মাংসের আচার ও কুশনে বদলে দিয়েছে শাম্মির জীবন

লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার পূর্ববিছন্দই গ্রামের আব্দুস সামাদের চার ছেলে ও একমাত্র মেয়ে মানতাশা শারমিন (শাম্মি)। শাম্মি জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার ২নং মদাতি এলাকার রাশেদ সরকারের স্ত্রী। রাশেদ সরকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন।

মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠা শাম্মি স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে সরকারি বেগম রোকেয়া কলেজ রংপুর থেকে ইন্টারমিডিয়েট এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হোমইকোনোমিক্স থেকে অনার্স মাস্টার্স পাস করে বিয়ে করেন। সংসারে আসে এক ছেলে। সংসার এবং সবমিলিয়ে চাকরি করা হয়নি শাম্মির। বেকারত্বের পাল্লায় পড়ে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে যান তিনি। নিজের কাছে যতটা না বোঝা ছিলেন সমাজের কাছে ছিলেন অনেক বেশি বোঝা এমনটাই মনে করতেন শাম্মী। 

শুধুমাত্র চাকরি না করার জন্য অনেক কটু কথা শুনতে হয়েছিল তাকে। খুব কাছ থেকে রাশেদ সরকার লক্ষ্য করছিলেন তার স্ত্রী দিন দিন হতাশাগ্রস্ত হয়ে যাচ্ছে। এই হতাশা থেকে বের করে আনতে রাশেদ সরকার তার স্ত্রী শাম্মীকে উদ্যোক্তা হবার স্বপ্ন দেখান। মাত্র ১২৮০ টাকা দিয়ে যাত্রা শুরু করেন শাম্মি। লোকলজ্জার ভয়ে পরিচিতদের কাছ থেকে নিজেকে আড়াল করে শুরু করেন তার ব্যবসার প্রচার। সারা পান প্রচুর।

এর পরের গল্পটা বদলে দেয় শাম্মী-রাশেদ দম্পত্তির জীবন। করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতির জন্য উঠে পড়ে লেগে যান নিজের ছোট ব্যবসা কে বড় করে তুলতে। কিন্তু কে জানত এই করোনার পরিস্থিতি তাকে লাখোপতি বানিয়ে দিবে।

তিনি তৈরী করেন গরুর মাংসের আচার, উত্তরবঙ্গের হারিয়ে যাওয়া পাটের চিকন রশি দিয়ে কুশনের ডিজাইন, এছাড়াও হ্যান্ড পেইন্ট, হাতে তৈরি জুয়েলারি, কাঠ খোদাই ও রেডিমেড থ্রি পিস, শাড়ি অন্যতম।

শাম্মি স্বপ্ন দেখেন উত্তরবঙ্গের হারিয়ে যাওয়া পাটশিল্পের পুনর্জাগরণের। বর্তমানে শাম্মীর গরুর মাংসের আচার তাকে বিশেষভাবে পরিচিত করেছে। বিভিন্ন ডিজাইনের পণ্য ও মাংসের আচার মানুষের নজর কেড়েছে। পণ্য তৈরি ও মাংসের আচার বিক্রির পাশাপাশি সবাইকে করোনাভাইরাস সম্পর্কে সচেতনতামূলক পরামর্শ দেন তিনি।

বিভিন্ন প্রতিকুলতাকে জয় করতে হয়েছে তাকে। সামাজিক ও অর্থনৈতিক সবদিক থেকেই বাধাগ্রস্থ হয়েছিলেন তিনি। সর্বোপরি তিনি আজ উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিত। তার কাজে সাহায্য করেন তিনজন দরিদ্র নারী ও পুরুষ।

শাম্মির স্বামী রাশেদ সরকার বলেন, আমার স্ত্রীর ইচ্ছা এলাকার সুবিধাবঞ্চিত নারীদের নিয়ে কাজ করা। সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তিনি অবহেলিত নারীদের নিয়ে কাজ করে তৈরিকৃত পণ্য ও আচার বিদেশে রপ্তানী করতে চান।

মানতাশা শারমিন (শাম্মি) বলেন, চাকরির বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে এসে যুব সমাজের উচিত নিজেদের প্রতিভাগুলো বিকশিত করা।

বাংলাদেশ প্রেসক্লাব লালমনিরহাট জেলার জেলা শাখার সভাপতি সাংবাদিক শরিফুল ইসলাম (রতন) বলেন, শাম্মীর উদ্যোক্তা হবার কথা তিনি লোক মুখে শুনেছেন। তিনি বর্তমানে এক জন সফল উদ্দোক্তা।

এসএ/