যমুনার তীব্র ভাঙনে বিলীন চর নাগদাহ বাজার ও মাদ্রাসা


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১২:২৮ অপরাহ্ন, ১৩ই জুলাই ২০২৩


যমুনার তীব্র ভাঙনে বিলীন চর নাগদাহ বাজার ও মাদ্রাসা
ছবি: সংগৃহীত

যমুনা নদীর অব্যাহত ভাঙন তান্ডবে গত দুই সপ্তাহে পাবনার বেড়া উপজেলার চরাঞ্চলে প্রায় ১'শ বসত বাড়ি এবং কয়েক’শ বিঘা ফসলি জমি গাছ -পালা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এতে অনেকেই নিঃস্ব রিক্ত গৃহহারা হয়ে খোলা আকাশের নিচে পলিথিন টাঙিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। 


এই ক্ষত না শুকাতেই আবার গত চার দিনের ব্যবধানে চর নাগদাহ বাজার ও হাটাইল আঁড়ালিয়া নুরানি মাদ্রাসা সর্বনাশা যমুনা নদীর করাল গ্রাসে বিলীন হয়ে গেছে। এতে মাদ্রাসার শিক্ষার্থী সহ বাজারের ব্যবসায়ীরা চরম বিপাকে পড়েছে। সেই সাথে ভাঙনের হুমকির সম্মুখিন হয়ে পড়েছে সরকারি বেসরকারি পাঁচটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ অনেক বিস্তীর্ণ আবাদি জমি-জমা ও জনবসতি। 


স্থানীয় কৃষক আ.কুদ্দুস পাটোয়ারী বলেন, চরাঞ্চলের ৯০ ভাগ মানুষ কৃষি কাজের ওপর নির্ভরশীল, অথচ বিগত পনেরো দিনে শত শত বিঘা আবাদি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় ভবিষ্যৎ চিন্তায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এ এলাকার অধিকাংশ কৃষক। 


তিনি আক্ষেপ করে আরও বলেন, আমাদের চরাঞ্চলটা হচ্ছে  দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির মতন! দফায় দফায় দাম বাড়লে যেমন নিয়ন্ত্রণ করার কেউ নেই । তেমনি দফায় দফায় নদী ভাঙনে আমরা নিঃস্ব হলেও দেখার এবং ভাঙন রোধেরও কেউ নেই। গত এক বছরে দু'চারজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ভাঙন পরিদর্শনে এসে বলে ঠিকই ভাঙন রোধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। চলে যাওয়ার পর সবকিছুই তারা ভুলে যায়,  কাজের কাজ কিছুই হয়না। তাদের দেওয়া মিথ্যে আশ্বাসেই আমাদের সহায়-সম্বল ক্রমাগত বিলীন হয়ে যাচ্ছে। 


আরও পড়ুন: সুরমার ভাঙনে নিঃস্ব হচ্ছে ১২ গ্রামের মানুষ


এলাকাবাসীরা আরও জানান, গত চার  দিনের ব্যাবধানে চর নাগদাহ বাজারের প্রায় ২৫ টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জায়গা এবং হাটাইল - আঁড়ালিয়া নুরানি মাদ্রাসা আবাদি জমি গাছ-পালা নদীতে বিলীন হয়েছে। এ নিয়ে গত দুই সপ্তাহে প্রায় ১' শ বসত বাড়ি, কয়েক 'শ বিঘা আবাদি জমি অসংখ্য গাছ-পালা, এবং  বৈদ্যুতিক খুটি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। 


ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত নাগদাহ বাজারের মুদি দোকানি আ. কাদের জানান , আমার রুটি-রুজির একমাত্র মাধ্যম ছিল নাগদাহ বাজারের এই দোকানটা। কিন্তু নদী গর্ভে বাজারটা বিলীন হয়ে যাওয়ায় আমার মতো অসংখ্য ব্যবসায়ীর স্বপ্ন একাকার হয়ে একমাত্র উপার্জনের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। এখন বউ বাচ্চা নিয়ে পথে বসা ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় নেই। 


চর নাগদাহ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমান ও চর নাগদাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক মো. আয়নাল হক বলেন, তাদের প্রতিষ্ঠানসহ একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও চর নাগদাহ আশায়ণ কেন্দ্রটি ইতিমধ্যে হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়ায় ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও শিক্ষা অফিসারকে লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে। 


ভাঙন বিষয়ে ইউএনও সবুর আলীর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ভাঙনের বিষয়টি স্থানীয় লোকজন ও জন প্রতিনিধির মাধ্যমে জানতে পেরেছি , ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য জেলা প্রসাশক ও বেড়া পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলীকে  চিঠির মাধ্যমে অবহিত করা হয়েছে। আশা করা যায় ওই এলাকার ভাঙন রোধে খুব দ্রুত একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে।


জেবি/ আরএইচ/