খাবারের দামে পুষ্টি বঞ্চিত নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা


Janobani

ক্যাম্পাস প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৯:০৯ অপরাহ্ন, ১৯শে জুলাই ২০২৩


খাবারের দামে পুষ্টি বঞ্চিত নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা
ছবি: সংগৃহীত

এক কেজি ওজনের একটি ব্রয়লার মুরগী রান্না করার সময় সর্বোচ্চ কত টুকরা করা সম্ভব? যে কারও কল্পনাশক্তিও হার মানবে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো একটি আবাসিক হলের ক্যান্টিনে খেতে বসলে।


শিক্ষার্থীদের খাবার কষ্ট দেখার মতো কেউ নেই। হলের একজন বাবুর্চি জানায়, সাধারণত এক কেজি ওজনের মুরগিকে প্রায় ২০ টুকরা পর্যন্ত করেন তারা। আর মাছের ক্ষেত্রে নিয়ম হচ্ছে যত বেশি টুকরা করা যায়। 


হলগুলোর ক্যান্টিন ও ক্যাফেটেরিয়ার ডাল যেন ‘হলুদ পানি’। আগে পাতলা পানির ফ্রি ডাল থাকলেও এখন দেওয়া হয় না। ভাত হয় মোটা চালের, সেটিও বাজারের সবচেয়ে নিম্নমানের। 


দুপুরে এক বেলা খাবারের জন্য জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়ায় একজন শিক্ষার্থীর ন্যূনতম খরচ ৪৫-৫০ টাকা। মাত্র চার পাঁচ লোকমা ভাত ৮ টাকা, ফলে দুইবার ভাত নিলে গুনতে হয় ১৬ টাকা। মুরগির মাংস ৩৫ টাকা, পাঙ্গাশ মাছ ৩০ টাকা, অন্য সব মাছ ৩৫ টাকা। রান্না করা ডিম ২০ টাকা। কেউ সবজি বা ভাজি খেতে চাইলে আরও ১০ টাকা খরচ হবে। বঙ্গবন্ধু হলে কচু শাকের দাম ২০ টাকা। এসব তরকারি স্বাদ কম হওয়ার অভিযোগ নিত্যদিনের। 


একাধিক তরকারি খেতে মন চাইলে পকেটে হাত দিয়ে খাবার অর্ডার করা থেকে বিরত থাকে প্রায় ৬৫ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী। ময়মনসিংহের ত্রিশালে পড়াশোনার পাশাপাশি টিউশনি করার সুযোগ সীমিত। ফলে হাতখরচের টাকার জন্য প্রায় ৭৭ শতাংশ শিক্ষার্থী পরিবার নির্ভর। মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েরা মাসের শেষ ১০ দিন কড়ায়-গণ্ডায় হিসাব করে দিন কাঁটায়। 


আরও পড়ুন: নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রক্টর সঞ্জয় কুমার


তৃতীয় বর্ষের একজন ছাত্র জানায়, টাকা বাঁচাতে সকাল দুপুরে একবেলা খেয়ে থাকেন আবাসিক অনেক শিক্ষার্থীরা। অনেক সময় দুই বন্ধু মিলে ভাগাভাগি করেও খেয়ে থাকেন। কারণ গত দুই বছরে মাছ এবং মুরগীর মূল্য বেড়েছে শতকরা ৪০ শতাংশ। ২০২০ সালের মুরগী ও মাছ ছিল ২৫ টাকা যা এখন ৩৫ টাকা। 


আপরদিকে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা জানান, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ডাইনিং খাবার টেবিল প্রায় অপরিষ্কার থাকে। একজন বসতে যতটুকু জায়গা প্রয়োজন শিক্ষার্থীরা বসার ফলে ততটুকু জায়গা ধুলাবালি মুছে। নিয়মিত ভালো করে পরিস্কার করা হয় না। 


শিক্ষার্থীদের দাবি বাজারে যখন ২৫০ টাকা কেজি মুরগী তখন ৩৫ করা হয় দাম। সাইজে ছোট হয় মাংস। এখন বাজারে দাম কমলেও সবগুলো হলের ডাইনিংয়ে কমেনি। 


জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে খাবার মূল্য শিক্ষার্থীদের নাগালের বাহিরে। সবকিছু মিলে পর্যাপ্ত পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। 


অনয় নামের শিক্ষার্থী বলেন, অর্থ কষ্টে থাকা খাবার সমস্যার সমাধান হবে ভর্তুকির পরিমাণ বাড়ালে। শিক্ষার্থীদের কল্যাণে ভর্তুকি দেওয়ার বিষয়ে কি ভাবছে প্রশাসন?  


বিশ্ববিদ্যালয়টির অগ্নিবীণা হলের প্রভোস্ট কল্যাণাংশু নাহার জানায়, হলে থাকা শিক্ষার্থীদের খাবারে নগদ অর্থে কোনো ভর্তুকি নেই। গ্যাস, বিদ্যুৎ বিল, যতসামান্য টাকায় ডাইনিং ভাড়ার টাকা ভর্তুকি। সরাসরি খাদ্যে  সরকার থেকে ভর্তুকি দেওয়া হয় না।


জেবি/ আরএইচ/