মুন্সীগঞ্জে সবজির প্রাচুর্য, দাম নিয়ে খুশি নন কৃষক


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১১:২৮ পূর্বাহ্ন, ৩১শে জুলাই ২০২৩


মুন্সীগঞ্জে সবজির প্রাচুর্য, দাম নিয়ে খুশি নন কৃষক
শাক-সবজি

আবু হানিফ রানা,মুন্সীগঞ্জ: মুন্সীগঞ্জ জেলা শাকসবজি উৎপাদনের জন্য খ্যাতি রয়েছে সারাদেশে। মুন্সীগঞ্জ সদরের বজ্রযোগিনী বাজার ও রামশিং বাঁশপট্টিতে প্রতিদিন বেচাকেনা চলে পাইকারি দামে । এখন গ্রীষ্মকালীন সবজিতে পরিপূর্ণ  রয়েছে বাজার, চলছে বেচাকেনা। কৃষকেরা জমি থেকে বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি তুলে ভোরবেলায় পাইকারি বিক্রি করছেন। এ বাজার থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় চলে যাচ্ছে শাক-সবজি। ভালো মানের সবজি বিদেশেও রপ্তানি করা হচ্ছে। তবে দাম নিয়ে খুশি নন কৃষকেরা।


কৃষক ও আড়তদাররা বলছেন, এবার সবজি চাষ শুরুর পর বৃষ্টিপাত কম হওয়ার কারনে উৎপাদন ভালো হয়নি। মুন্সীগঞ্জের সবজি কয়েক বছর ধরে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে এ সবজি রপ্তানি হয়। সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, কাতারসহ বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে। ঢাকা থেকে পাইকাররা এসে এসব সবজি কিনে সরাসরি দেশের বাইরে পাঠান। বিমান ভাড়া বেশি হওয়ায় প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছেন তারা।


বজ্রযোগিনী গ্রামের সবজি চাষি বিল্লাল শেখ বলেন, এ বছর সবজি চাষ মৌসুমে বৃষ্টি হয়নি। ফলে ফলন কম হয়েছে। এখন দিন দিন কমছে সবজির দাম। এতে  অনেক লোকসান হচ্ছে। কৃষক আমজাদ হোসেন বলেন, সার, বীজ, কীটনাশকের দাম বেশি। সবজিক্ষেতে মাচা বানাতে বাঁশ ব্যবহার করা হয়। বাঁশের দামও প্রচুর। অথচ সবজির দাম নেই। সরকারি সহযোগিতা না পেলে সবজি উৎপাদন করা সম্ভব হবে না।


স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার রামপাল, মহাকালী ও বজ্রযোগিনী ইউনিয়ন এবং টঙ্গিবাড়ীর ধামারণ, আলদী, কাঠাদিয়া, সোনারং, ধীপুরসহ বিভিন্ন গ্রামের কৃষকরা সবজি উৎপাদন করেন। ভোরে জমি থেকে করলা, লাউসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি বজ্রযোগিনী ও রামপাল ইউনিয়নের বাঁশপট্টি পাইকারি বাজারে নিয়ে আসেন। এ দুটি বাজারে প্রতিদিন সকাল ৫টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত সবজি বেচাকেনা হয়ে থাকে।


 জানা গেছে, বাজার কাছাকাছি হওয়ায় কৃষকের পরিবহন খরচও গুনতে হয় কম। করলা ছাড়াও লাউ, জালি কুমড়া, জিঙা, কহি, ধুন্দল, শসাসহ গ্রীষ্মকালীন সব ধরনের সবজি পাওয়া যায় এ বাজারে। তবে বারো মাসই বাজার দুটিতে নানা ধরনের সবজি বেচাকেনা হয়ে থাকে।


 সদর উপজেলার রামপাল ইউনিয়নের ধলাগাও গ্রামের আওলাদ বজ্রযোগিনীর সবজির হাট থেকে দিনে অন্তত ১০ থেকে ১৫ মণ বিভিন্ন ধরনের সবজি কেনেন। এর মধ্যে কিছু করলা দুবাইয়ে পাঠাচ্ছেন। একটি প্যাকেটে চার কেজি করে করলা রাখা হয়। তিনি জানান, ঢাকার এক ব্যবসায়ীকে তিনি এ সবজি সরবরাহ করে দেন। তার মাধ্যমে এ করলা শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে প্রতিদিন বিকেলের ফ্লাইটে দুবাইয়ে যায়।


কৃষক আওলাদ বেপারী আরও জানান, ময়মনসিংহ, শেরপুর, মেহেরপুর, বগুড়ার আক্কেলপুর ও ঠাকুরগাঁওসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ঘুরে করলা সংগ্রহ করে তিনি সারা বছরই দুবাইয়ে পাঠান। এ অঞ্চলের উৎপাদিত সবজি ঢাকা, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা পাইকারি দরে কিনে ট্রাকে করে নিয়ে যান।


কিছু সংখ্যক পাইকারি ক্রেতা বলেন, গত কয়েক বছর বিদেশে সবজি রপ্তানি হচ্ছে। এ বছর একবার শুধু ওমানে সবজি পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু বিমান ভাড়া বেশি হওয়ায় ভারতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে টিকে থাকা যাচ্ছে না। ভারতের তুলনায় বাংলাদেশে বিমান ভাড়া দেড়গুণ। আরেক পাইকার জয়নাল হোসেন বলেন, দেশের সবজির বিদেশে চাহিদা থাকলেও বিমান ভাড়ার কারণে প্রতিযোগিতায় ভারতের সঙ্গে টেকা যাচ্ছে না।


মুন্সীগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আব্দুল আজিজ বলেন, সদরের বজ্রযোগিনী ও রামশিং বাজারে গ্রীষ্মকালীন শাকসবজির বিক্রির উৎসব চলে। স্বচক্ষে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। এ দুটি পাইকারি বাজার থেকে সবজি বিদেশেও রপ্তানি হয়।


আরএক্স/