সাভারে শিক্ষক হত্যার রহস্য উদঘাটন, মূলহোতা ইমনসহ গ্রেফতার ৩
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৭:০৮ অপরাহ্ন, ২২শে আগস্ট ২০২৩
রাজধানীর সাভারে গত ১৯ আগস্ট নিহত গোলাম কিবরিয়া নামক শিক্ষককে হত্যার পর ‘চিরকুট’ লিখে ফেলে রাখার রহস্য উদঘাটন হয়েছে। সেই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ইমনসহ ঘটনায় জড়িত ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। যশোর, ঝিনাইদহ ও রংপুর থেকে গ্রেফতার করা হয় তাদের। পাশাপাশি, হত্যাকান্ডের পর লুটকৃত ৫ লক্ষাধিক টাকাও উদ্ধার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) রাজধানীর দুপুরে কারওয়ান বাজার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারী মো. ইমন খান (২৩), পিতা আশরাফ হোসেন, চৌগাছা, যশোর ও মো. সাগর (২২), পিতা আব্দুল হাকিম, মিঠাপুকুর, রংপুর এবং তাদের সহযোগী মো. ছাদেক গাজী (২২), পিতা মো. ইমতিয়াজ গাজী, ঝিনাইদহদ।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেফতারকৃত ইমনের পরিকল্পনা ও নেতৃত্বে এই হত্যাকান্ডটি সংঘটিত হয়। গ্রেফতারকৃত সাগর একজন অটো রিক্সা চালক হওয়ায় ভিকটিম তার অটো রিক্সায় মাঝে মধ্যে যাতায়াত করার কারণে ২ বছর পূর্বে ভিকটিমের সাথে তার পরিচয় হয় এবং সু-সম্পর্ক তৈরি হয়। পরবর্তীতে বিগত ০৬ মাস পূর্বে গ্রেফতারকৃত সাগর তার বন্ধু ইমনকে ভিকটিমের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। পরিচয়ের সুবাধে গ্রেফতারকৃত ইমন ও সাগর ভিকটিমের বাসায় মাঝে মধ্যে যাওয়া আসা করতো। ভিকটিম গোলাম কিবরিয়া জমি ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যবসা করতেন এবং ব্যবসার যাবতীয় টাকা বাসায় রাখতেন বলে জানা যায়। গ্রেফতারকৃত সাগর ও গ্রেফতারকৃত ইমন ভিকটিমের বাসায় যাওয়া আসার সুবাধে ভিকটিমের আলমারীতে রাখা জমি ক্রয়-বিক্রয়ের বিপুল পরিমান টাকা তাদের নজরে আসে। পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত ইমন ও সাগর ভিকটিমকে হত্যা করে তার টাকা হাতিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করে। গ্রেফতারকৃত ইমন পরিকল্পনার বিষয়টি ঘটনার ৭-৮ দিন পূর্বে তার বন্ধু গ্রেফতারকৃত ছাদেক’কে জানায় এবং গ্রেফতারকৃত ছাদেকের বিভিন্ন জায়গায় ঋণ থাকায় সে এই পরিকল্পনায় সম্মতি দেয়।
আরও পড়ুন: জানমালের ক্ষতির চেষ্টা করলেই ব্যবস্থা: র্যাব
সাংবাদিকদের কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার দিন ১৯ আগস্ট গ্রেফতারকৃত ইমন ও ছাদেক জিরানী বাজার থেকে বাস যোগে সাভারের বাসষ্ট্যান্ড এলাকায় এসে গ্রেফতারকৃত ইমন ভিকটিমকে ফোন করে তার সাথে দেখা করতে চাইলে ভিকটিম তাদেরকে বাসায় আসতে বলে। আনুমানিক রাত পৌনে ১১টার দিকে গ্রেফতারকৃত ইমন ও ছাদেক ভিকটিমের বাসায় আসে। এ সময় পরিকল্পনা অনুযায়ী সাগর অটোরিক্সা নিয়ে ভিকটিমের বাসার আশেপাশে অবস্থান করে। ভিকটিমের বাসায় তারা রাতের হালকা নাস্তা শেষে আলাপচারিতার এক পর্যায়ে রাত আনুমানিক সাড়ে ১১টার দিকে সময় হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেলে গ্রেফতারকৃত ছাদেক ভিকটিমের গলা চেপে ধরে এবং গ্রেফতারকৃত ইমন ভিকটিমের মুখ চেপে ধরে। পরবর্তীতে তারা কৌশলে ভিকটিমের লুঙ্গী দিয়ে হাত-পা বেঁধে ও গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে ভিকটিমের মৃত্যু নিশ্চিত করে। হত্যাকাণ্ডের এই ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য গ্রেফতারকৃত ছাদেক নিজ হাতে একটি সাদা কাগজে চিরকুট লিখে (এই ব্যক্তি সমকামী করে পুলিশ ভাই, আমরা তাই মেরে ফেলেছি। ভাই ও অবৈধ কাজ করে, আমরা ইসলামের সৈনিক) মৃত দেহের পাশে রেখে দেয়। গ্রেফতারকৃত ইমন ভিকটিমের বিছানার নিচ হতে চাবি নিয়ে আলমারী খুলে ৬ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা, ০৪টি মোবাইল ফোন লুট করে। পরবর্তীতে তারা গ্রেফতারকৃত সাগরকে ফোন দিয়ে ভিকটিমের বাসার সামনে আসতে বলে। গ্রেফতারকৃত সাগর তার অটোরিক্সা নিয়ে ভিকটিমের বাসার সামনে আসলে গ্রেফতারকৃতরা দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে সাভার বাসষ্ট্যান্ড এলাকায় চলে আসে। গ্রেফতারকৃত ইমন সাগরকে ৫০ হাজার টাকা প্রদান করে এবং অবশিষ্ট ৬ লক্ষ টাকা গ্রেফতারকৃত ইমন ও গ্রেফতারকৃত ছাদেক নিজেদের মধ্যে সমান ভাগে ভাগ করে নেয়।
আরও পড়ুন: সরকারি প্রতিষ্ঠানে সাইবার হামলার হুমকি, কাজ করছে র্যাব
গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন
প্রসঙ্গত, গত ২০ আগস্ট ২০২৩ তারিখ আনুমানিক ৩টার দিকে সাভার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের ভাটপাড়া এলাকায় নিজ বাড়ির কক্ষ থেকে হাত-পা বাঁধা এবং গলায় গামছা পেঁচানো অবস্থায় গোলাম কিবরিয়া (৪৩) নামের সাবেক এক স্কুল শিক্ষকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ সময় মরদেহের পাশ থেকে ‘এই ব্যক্তি সমকামী করে পুলিশ ভাই, আমরা তাই মেরে ফেলেছি, ভাই ও অবৈধ কাজ করে। আমরা ইসলামের সৈনিক’ লেখা সম্বলিত একটি চিরকুট পাওয়া যায়।
এই ঘটনায় ভিকটিমের ভাই বাদী হয়ে সাভার মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি হত্যা মামলা (নং-৬২/৬৬৯, তারিখ ২১ আগস্ট ২০২৩) দায়ের করেন।
জেবি/এসবি