শোকের মাসে মাদ্রাসা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নাচানাচিতে সমালোচনার ঝড়


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৩:৪৩ অপরাহ্ন, ২৯শে আগস্ট ২০২৩


শোকের মাসে মাদ্রাসা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নাচানাচিতে সমালোচনার ঝড়
পাচকাদা বিল । ফাইল ছবি

ধর্মীয় নীতি নৈতিকতার অনুশাসনে পরকালীন ভয়-ভীতি মনে ধারণ করে সঠিক মানুষ হিসেবে গড়ে উঠার অন্যতম প্রতিষ্ঠান হলো মাদ্রাসা। কিন্তু জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে শোকের মাসে চর জামিরা নবাব আলী দাখিল মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ শিক্ষা সফরের আয়োজন করে।  


সুপার ইদ্রিস আলীর নির্দেশে সোমবার (২৮ আগস্ট) সাতপোয়া ইউনিয়নের জামিরা এলাকার পাচকাদা বিল থেকে সিরাজগঞ্জের যমুনা সেতু ইকো পার্কের উদ্দেশ্য শিক্ষা সফর পালনের লক্ষ্যে নৌকা ভ্রমণের যাত্রা শুরু হয়। আর এই নৌকা ভ্রমণে ডিজে গানের পাশাপাশি কয়েকজন শিক্ষক ও মাদ্রাসার ছাত্রীদের নাচানাচির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুক, টিকটকে ছড়িয়ে পড়ে । 


ওই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে গানের তালে তালে উদ্দাম নাচে মত্ত কয়েকজন শিক্ষক ও মাদরাসার ছাত্রীরা। তবে মাদরাসা ছাত্রীদের বোরখা পড়ার নিয়ম থাকলেও মাদরাসা কোন নিয়ম নীতির মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে না।  বোরখার জায়গায় ছাত্রীরা বিদ্যালয়ের ড্রেস পড়ে পাঠদান নেয়।  


সোমবার সকাল থেকে শিক্ষক ছাত্রীদের নাচানাচির ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই সমালোচনার ঝড় উঠতে শুরু করে সরিষাবাড়ী উপজেলায়। নাচানাচির কয়েকটি ভিডিও প্রায় এ উপজেলার ২ সহস্রাধিক ফেসবুক ব্যবহারকারীরা পোস্ট দিয়ে প্রতিবাদ জানায়। 


মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এলাকাজুড়ে নানা সমালোচনা শুরু হয়েছে।  অভিভাবকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। এ বিষয়ে সুষ্টু তদন্তের মাধ্যমে সুপার ইদ্রিস আলী ও নাচানাচি করা ৪ শিক্ষকদের বহিষ্কারের দাবী সহ আইনী ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী জানান সচেতন মহল ও এলাকাবাসী। 


এদিকে ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পরই বিদ্যালয়ের শিক্ষক মনির তার আইডি থেকে ভিডিও পোস্ট দিয়ে বলেন,  আমরা শিক্ষার অংশ হিসেবে বিনোদন হিসেবে আমরা গান পরিবেশন করি। সাথে ইসলামিক গান, নাতে রাসুল, হামদ পরিবেশণ করি। সঙ্গে কিছু ছেলে মেয়েরা আনন্দ উল্লাস ও আনন্দ উৎসব  করেছে। 

 

অই ভিডিওতে মাদ্রাসার শিক্ষার্থী জানান, আনন্দ উৎসব এর মধ্য দিয়ে নৌকা ভ্রমণ হয়েছে। 


মাদ্রাসায় পড়ুয়া শিক্ষার্থীর অভিভাবক সালাম ফকির অভিযোগ করে বলেন,  আমার মেয়ে এ মাদরাসায় পড়ালেখা করে। আমার মেয়েকে শিক্ষকেরা বলেছে শিক্ষা সফরে গেলেও টাকা দিতে হবে না গেলেও টাকা দিতে হবে ৫০০ । আমার মেয়েকে আমি যাইতে দেয়নি। আমার জেঠাত ভাইয়ের ২ টা মেয়েও এ মাদরাসায় লেখাপড়া করে। তারা শিক্ষা সফরে যাইতে চাইনি বলে র জাহাঙ্গীর মাষ্টার তাদের বলেছে তোমরা শিক্ষা সফরে না গেলে আমি তোমাদের আর ক্লাসই নিব না। এবং ফরম পুরণ করতে দিব না। 


এদিকে জামিরা এলাকার সুজন বলেন,যেখানে কুরআন ও হাদিসের আলোচনা করা হয় সেই মাদরাসা থেকে বাদ্যযন্ত্র নিয়ে তারা শিক্ষা সফরে গিয়ে যেভাবে নাচানাচি করেছে এতে আমাদের এলাকা ও মাদ্রাসার বদনাম হয়েছে। এগুলা ক্ষতিকর দিগ হয়ে গেছে।

 

একই এলাকার শাকিল জানান, এ মাদরাসার শুধু নাম লাগানো আছে। মাদ্রাসা অনুযায়ী কোন কাজ চলছে না। মাদ্রাসার নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে। মাদ্রাসায় যাতে পড়ালেখা নিশ্চিত করা হয় তার জন্য প্রশাসনের নিকট সু-দৃষ্টি কামনা করেন তিনি।  


প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে স্থানীয় এলাকার জিহাদ জানান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এটা। শিক্ষা সফর নামে যে ইসলাম পরিপন্থি কাজ করেছে এটা কাম্য না। এগুলাতে আমাদের এলাকায় ব্যাপক ভাবমূর্তি হয়েছে৷  আর তা ছাড়া এখানে পড়ালেখার মান ভাল না।

 

তবে বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে চর জামিরা  নবাব আলী দাখিল মাদ্রাসার সুপার ইদ্রিস আলী বলেন,  শিক্ষা সফরে গেলে পোলাপানে আমুত করবেই। আমুত ফুর্তি করেই তো শিক্ষা সফরে যায় তাই না। ছাত্রীদের অনুরোধে মাষ্টাররা নেচেছে এবং ছাত্রীরা হাত তালি দিয়েছে। এটা বেশি কিছু হয়নি থেকে কত কিছু মানুষে করে ফেলে।আমরা সরকার বা রাষ্ট্র বিরোধী কোন কাজ করিনি।


তবে চর জামিরা নবাব আলীর দাখিল মাদরাসার  ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি রাজু আহমেদ এর সাথে বার বার যোগাযোগ এর চেষ্টা করা হলে তিনি অসুস্থ থাকায় এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।

  

এদিকে উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি ও সরিষাবাড়ী সালেমা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা পরিশদের সভাপতি  মুস্তাফিজুর রহমান শাহজাদা জানান, শোকের মাসে এ ধরনের কাজ মোটেই কাম্য না। শিক্ষা সফরের নামে যে উশৃঙ্খলাতা করেছে তার একটা বিচার হওয়া উচিৎ। শাস্তি মুলক বিচার হওয়া দরকার। 

 

এদিকে সমাজ সেবা অধিদপ্তরের সাবেক উপ পরিচালক বীর মুক্তিযোদ্ধা লুতফর রহমান লুলু বলেন, শুধু মাদ্রাসার শিক্ষক শিক্ষার্থী নয় সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক শিক্ষার্থী এত খারাপ  নাচ নাচতে পারে না। তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং দোষীদের শাস্তি দাবি জানাচ্ছি।


এ দিকে এ বিষয়ে সরিষাবাড়ী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোজাম্মেল হক এ প্রতিবেদক মাসুদুর রহমানকে জানান, পর্দার বিষয়টি মাদরাসায় অবশ্যই আছে। শিক্ষা সফরের সাথে এমন নাচানাচি আনন্দ ফুর্তি হতে পারে না। যা দেখা গেছে এটা সালীনতা বহির্ভুত। মাদ্রাসার শিক্ষকের কাছ থেকে এটা আশা করা যায় না। বিষয়টি শুনেছি এবং ভিডিও দেখেছি। সুপারকে ডাকা হয়েছে আসলে জবাব চাওয়া হবে। আর তা ছাড়া যখন কোন মাদরাসা পরিদর্শনে যাই সে সময় সকল মেয়েরাই বোরকা পড়ে পর্দা করে থাকে।  আমার দৃষ্টিতে মাদরাসায় মেয়েরা ড্রেস পড়ে দেখি নাই। যে ভিডিও দেখেছি এখানে কোন ছাত্রীর বোরকা ছিল না ইউনিফর্ম ছিল। সুপারের কাছ জেনে আইনগত কি ব্যবস্থা নেওয়া যায় কতৃপক্ষের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পিংনিকে না গেলে ক্লাসই নিবে না এবং ফরম পুরণ করতে দিবে অভিভাবকের অভিযোগের প্রশ্নের উত্তরে তিনি আরো বলেন, এ কথা বলে শিক্ষক অন্যায় ভাবে বলেছে। এই বিষয়েও খোজ খবর নিয়ে সত্যতা পেলে সেই শিক্ষকের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷  


এদিকে বিষয়টি বাংলাদেশ মাদরাসা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর কায়সার আহমেদ বলেন, প্রতিষ্ঠানের নিয়মাবলী সব কিছু ডিজি মহোদয় দেখেন। ডিজি মহোদয়কে জানান ডিজি মহোদয় অবশ্যই এটার একটা ব্যবস্থা নিবে।

 

তবে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক  (দাখিল ও এবতেদায়ী মাদ্রাসা) মোঃ সাখাওয়াত হোসেন এ প্রতিবেদক মাসুদুর রহমানকে জানান,আমরা দেখি। আমি মাধ্যমিক শিক্ষা অফসারের সাথে কথা বলতেছি। আমরা দেখি কি করা যায়।  যদি পারেন উপ- পরিচালক ( প্রশাসন) জাকির হোসাইন স্যারকে জানান।  আর আমি শিক্ষা অফিসারের সাথে কথা বলে জানতেছি। 


আরএক্স/