জনবাণীর ভিডিও ভাইরাল: সেই মাদরাসার সুপারসহ ৪ শিক্ষককে শোকজ


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৩:৩১ অপরাহ্ন, ৩১শে আগস্ট ২০২৩


জনবাণীর ভিডিও ভাইরাল: সেই মাদরাসার সুপারসহ ৪ শিক্ষককে শোকজ
চর জামিরা নবাব আলী দাখিল মাদরাসা

জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার  চর জামিরা নবাব আলী দাখিল মাদরাসার শিক্ষা সফরের নৌকা ভ্রমণে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের নাচানাচি ভাইরালে মাদরাসার সুপার ইদ্রিস আলীর পর ৪ শিক্ষকদের শোকজ প্রদান করা হয়েছে।


বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট)  দুপুর ১২ টায় সরিষাবড়ী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো: মোজাম্মেল হক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

  

খোজ নিয়ে জানা যায়, চর জামিরা নবাব আলী দাখিল মাদরাসা ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠা হয়। প্রশাসনকে অবগত না করে মাদরাসা সুপার ইদ্রিস আলীর নির্দেশে শিক্ষা সফরের আয়োজনে করে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ।  মাদরাসার শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম সহ কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মচারীরা নৌকা ভ্রমনে না গেলে ক্লাস এবং ফরম পুরন করতে দিবে না বলে শিক্ষার্থীদের চাপ প্রয়োগ করে। 


এদিকে সোমবার (২৮ আগস্ট) সাতপোয়া ইউনিয়নের জামিরা এলাকার পাচকাদা বিল থেকে সিরাজগঞ্জের যমুনা সেতু ইকো পার্কের উদ্দেশ্য  শিক্ষা সফর পালনের লক্ষ্যে নৌকা ভ্রমণের যাত্রা শুরু হয়। আর এই নৌকা ভ্রমণে বাদ্যযন্ত্র ও ডিজে  গানের পাশাপাশি কয়েকজন শিক্ষক ও মাদরাসার ছাত্রীদের নাচানাচির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, টিকটকে ছড়িয়ে পড়ে। 


ওই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে গানের তালে তালে উদ্দাম নাচে মত্ত গণিত বিভাগের শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম ,ইংরেজী শিক্ষক আক্তারুজ্জামান ,শরীর চর্চা শিক্ষক বিল্লাল হোসেন, অফিস সহকারী (কেরানী) জহুরুল ইসলামসহ  কয়েকজন শিক্ষক । আর এতে হাত তালি দিচ্ছেন মাদরাসার ছাত্রীরা। 


এ সময় মাদরাসার সুপার ইদ্রিস আলী সহ কয়েকজন শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির কয়েকজন সামনে বসেই নাচানাচি উপভোগ করছেন।  মাদরাসা ছাত্রীদের বোরখা পড়ার নিয়ম থাকলেও মাদরাসা কোন নিয়ম নীতির মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে না।  


বোরখার জায়গায় ছাত্রীরা বিদ্যালয়ের ড্রেস পড়ে পাঠদান নেয়। এদিকে বিষয়টি নিয়ে জামালপুর জেলা প্রশাসক ও সরিষাবাড়ী উপজেলা প্রশাসনের নজরে আসলে মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) বাদ্যযন্ত্র নিয়ে কতিপয় শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের  বাদ্যযন্ত্র সহকারে অশালীন নৃত্য প্রশাসনের দৃষ্টি গোচর হলে চর জামিরা নবাব আলী দাখিল মাদরাসা সুপার ইদ্রিস আলীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোজাম্মেল হক।  এরপরদিন ৩০ আগস্ট সকালে দীর্ঘ ২ ঘন্টা ম্যানেজিং কমিটি ও মাদরাসার সুপার এবং শিক্ষক-কর্মচারীরা আলোচনায় বসেন এবং সেই সভা থেকেই ৪ শিক্ষককে দুপুর ১ টায় শোকজ করেন। 


বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য নানাভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে। তবে মাদরাসা সুপার ইদ্রিস আলী কারণ দর্শানোর নোটিশ পেয়েই বুধাবার( ৩০ আগস্ট)  জবাব প্রদান করেন।  সুপার ইদ্রিস আলী নিজে এ ঘটনার ধামাচাপা দেওয়ার বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে আসছে। তার বিরুদ্ধে ঘুষ, দূর্ণীতি, চাদাবাজী,ভুয়া বিল বাউচার করে অর্থ আত্মসাৎ সহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে।  


এদিকে স্থানীয় এলাকাবাসী ও অভিভাবকরা এমন কান্ডের প্রতিবাদ জানিয়ে জামালপুর জেলা প্রশাসক ও মাদরাসা অধিদপ্তরের নিকট প্রতিকার শাস্তীর দাবী জানিয়েছেন। 

  

এ বিষয়ে চর জামিরা নবাব আলী দাখিল মাদরাসার সুপার ইদ্রিস আলী জানান, আমাদের প্রতিষ্ঠানে একটি অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছে । এটা আমরা কোন দিনই আশা করিনি ।আমাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছিল  জবাব প্রদান করেছি৷ আমরা মর্মাহত ও দঃখিত ।  


৪ শিক্ষককে ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক শোকজ করা হয়েছে।  শোকোজের জবাবের প্রেক্ষিতে পরবর্তী ব‌্যবস্থা গ্রহণ করা হবে । মাদরাসায় ড্রেস পড়া নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, ২৫ বছর যাবত  মাদরাসার শুরু থেকে ড্রেস শুরু হয়েছে । ছাত্রীরা ড্রেস দিয়ে চলছে আর কি । আমি আর নতুন করে ড্রেস পরিবর্তন করিনি। 


নাচানাচি করা চার শিক্ষকের মধ্যে ইংরেজী শিক্ষক আক্তারুজ্জামান বলেন ,অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটেছে । আমি ভাবতেও পারিনি । আমরা নতুন এখানে যোগদান করেছি। আমি আশা করি জীবনে আর কখনো এটা হবে না । শোকজ পেয়েছি, জবাব দিব। 


অফিস সহকারী (কেরানী) জহুরুল ইসলাম বলেন , গত ২৮ তারিখে পিংনিকে গিয়ে যে অনাকাঙ্খিত ঘটনায় জড়িত হয়েছি এর জন্য আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত এবং নিজে খুব লজ্জিত । শোকজ পেয়েছি জবাব লিখেছি । 


শিক্ষা অফিসার মোজাম্মেল হক বলেন,শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রে বলা আছে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষা সফর বা পিংনিকে গেলে উপজেলা প্রশাসনকে জানিয়ে অনুমতি নিয়ে যেতে হবে। নৌকা ভ্রমণের বিষয়টি আমি বা ইউএনও মহোদয়ে জানে না। ভিডিওটা আমি এবং উপজেলা প্রশাসন দেখেছেন।  


যে সমস্ত শিক্ষক নাচানাচি করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে মাদরাসা কতৃপক্ষ। আইনগত ভাবে এটা এডিয়ে যাওয়ার কোন সুযোগ নাই। এই ভিডিওটা হলো প্রমাণ। আগে দেখি তারা কি ব্যবস্থা নেয় এবং কি জবাব দেয়। জবাবের ওপর নির্ভর করতেছে পরবর্তী পদক্ষেপ। 


এ বিষয়ে জামালপুর জেলা প্রশাসক মো: ইমরান আহমেদ বৃহস্পতিবার দুপুরে মুঠোফোনে জানান , মাদরাসার শিক্ষক এবং ছাত্রীদের কিছু অশ্লীল কার্যক্রমের ভিডিও আমার কাছে এসে পৌছেছে । 


এ বিষয়টি জানার পর  মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে ইউএনওর মাধ্যমে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলেছি এবং মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার যে  শোকজ করেছে তার জবাব এবং মাদরাসা ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত পেয়েছি।সকল কিছু সংযুক্ত করে পরবর্তী ব্যাবস্থা গ্রহণের জন্য মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠিয়েছি । 


আরএক্স/