সময়ের পরিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে দেশী মাছ শিকার


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১১:২০ পূর্বাহ্ন, ১লা অক্টোবর ২০২৩


সময়ের পরিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে দেশী মাছ শিকার
দেশী মাছ। ছবি: জনবাণী

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে চলতি বর্ষা মৌসুমে নদী, নালা, হাওর ও জলাশয়ে কাঙ্ক্ষিত পানি নেই। পানির অভাবে দেশি মাছের সংকট দেখা দিয়েছে। পর্যাপ্ত বৃষ্টিয় অভাবে পানি কম হওয়ায় মাছের প্রজনন কমে গেছে। একই সঙ্গে আগের তুলনায় দেশি জাতের অনেক মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ফলে হাইব্রিড মাছের ব্যাপক চাষ হচ্ছে। স্থানীয় বাজারে হাইব্রিড প্রজাতির নাছের সরবরাহ ও বিক্রি বেড়েই চলেছে।


মৎস্যজীবী মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একটা সময় কমলগঞ্জ উপজেলার জলাশয়গুলো মৎস্যজীবীরা ইজারা নিয়ে নানা জাতের দেশি মাছ চাষ করতেন। এখন বিত্তবানরা এসব ইজারা নিয়ে অধিক মুনাফার জন্য পুকুর ও জলাশয়ে হাইব্রিড মাছ চাষ করছেন। ফলে দেশি মাছের প্রজনন নষ্ট করছেন। সেখানে হাইব্রিড নাছ একই সঙ্গে বিভিন্ন নিষিদ্ধ পদ্ধতিতে জলজ প্রাণী শিকারের কারণে মাছসহ অন্যান্য প্রাণীও বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। ফলে অনেক মৎস্যজীবী বাধ্য হয়ে এই পেশা পরিবর্তন করছেন।


কমলগঞ্জ উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২৬০ প্রজাতির দেশি মাছ ছিল। বর্তমানে প্রায় ১০০ প্রজাতির দেশীয় মাছ বিলুপ্ত হওয়ার পথে। বিশেষ করে পুষ্টিগুণসম্পন্ন ভেটকিসহ অনেক দেশি নাছ আর পাওয়া যায় না। অনাবৃষ্টির কারণে দী ও হাওরে পানির অভাবে দেশীয় মাছের সংকট হচ্ছে। একই সঙ্গে নদী ও জলাশয়ে বিষ প্রয়োগ করে নাছের প্রজনন নষ্ট করা ও বিভিন্ন নিষিদ্ধ পদ্ধতিতে মাছ শিকারের কারণে দেশি মাছ কমে গেছে।


রহিমপুর ইউনিয়নের মৎস্যজীবী সাকিল মিয়া বলেন, 'ভরা মৌসুমে নদী হাওরে পানি না থাকায় নাছ উৎপাদন হচ্ছে না। এ কারণে মাছ শিকার করতে পারিনি। পুরো মৌসুমে। অনেক নি নাছ শিকারের সরঞ্জাম নিয়ে নদী থেকে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে। মাছ শিকার না করালে পরিবারের আদোদের অনাহারে দিন কাটাতে হয়।


মৎস্যজীবী আধন পাল ও শামিম মিয়া বলেন, আমরা সারা জীবন নদী থেকে মাছ। শিকার করে বিকেলে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেছি। কিন্তু কয়েক বছর ধরে হাজা ও নদীতে গেলে মাছ মেলে না। বিভিন্ন জায়গা থেকে হাইব্রিড মাছ সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করি। শুদ্র মৌসুমে নদীতে সেচ মেশিন দিয়ো শুকিয়ে নাছ শিকার করা হয়। একই সঙ্গে বিষ দিয়ে মাছ মাংস করা হয়।


কমলগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, মনুষ্যসৃষ্ট সমস্যা ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কাঙ্ক্ষিত পানির অভাবে দেশীয় মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এখন হাওর আর হাওর নেই। হাওর এখন কৃষিজনি হয়ে গেছে। উপজেলার খাল-বিল নদী-নালা ভরাট হওয়ার কারণেও মাছের প্রজনন হারিয়ে যাচ্ছে। রাতের অন্ধকারে বিষ প্রয়োগ ও নিষিদ্ধ পদ্ধতিতে অবাধে মাছ শিকার করা হয়। শুধু মাছ নয়, নাছের পাশাপাশি জলজ প্রাণীগুলোও বিলুপ্ত হচ্ছে।


আরএক্স/