বিএসএমএমইউ এ বিশ্ব হসপিস অ্যান্ড প্যালিয়েটিভ কেয়ার দিবস পালিত
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০২:৪৩ অপরাহ্ন, ১৭ই অক্টোবর ২০২৩
‘মমতাময় জনগোষ্ঠী, প্রশমন সেবার জন্য একসাথে’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) বিশ্ব হসপিস অ্যান্ড প্যালিয়েটিভ কেয়ার দিবস পালিত হয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে (১৭ অক্টোবর) শহীদ ডা. মিল্টন হলে দিবসটি উপলক্ষে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করে প্যালিয়েটিভ কেয়ার মেডিসিন বিভাগ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যালিয়েটিভ কেয়ার মেডিসিন বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. নিজাম উদ্দিন আহমদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যালিয়েটিভ কেয়ার মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. একেএম মতিউর রহমান ভূঁইয়া।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন বলেন, সহানুভূতির সাথে, মমতার সাথে মুমুর্ষু মৃত্যু পথযাত্রীদের সেবাদানই প্যালিয়েটিভ কেয়ারে মূখ্য উদ্দেশ্য। বিশ বছর আগে এ নানান সীমাবদ্ধতার মাঝে বিভাগটি চালু করা হয়েছে। আমি, আপনি, আমার পরিবারের কোনো কোনো সদস্য একদিন ঠিকই এই প্যালিয়েটিভ কেয়ার সেবার দরকার হবে। নানান সীমবদ্ধতার মাঝেও বঙ্গবন্ধু শেখ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যালিয়েটিভ কেয়ার মেডিসিন বিভাগ বিশ্বমানের সেবা দিয়ে যাচ্ছে। বর্তমান প্রশাসন প্রতিটি সংকট নিরসনে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। মমতা দিয়ে রোগীদের সেবা করেন বিশ্ববিদ্যালয়কে ভালবাসেন। এটি করলেই এ দিবসের স্বার্থকতা আসবে।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সৃষ্টি কমিউনিটি ক্লিনিক সারা পৃথিবীতে ইউনিভার্সিটি হেলথ কাভারেজের স্বীকৃতি পেয়েছে। পেয়েছে সারা বিশ্বের স্বীকৃতি দ্যা শেখ হাসিনা ইনিটিয়েটিভ। এ কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে ৩২ ধরণের ওষুধ বিনামূল্য বিতরণ করে যাচ্ছে। কমিউনিটি ক্লিনিকের দরজায় গেলে অনন্ত একজন লোক পাওয়া যায় যার সাথে স্বাস্থ্য কি, স্বাস্থ্য সম্পর্কে কথা বলা যায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়নের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন।
অনুষ্ঠান থেকে জানানো হয়, প্যালিয়েটিভ কেয়ার সম্পর্কে প্রচারণা, জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং বিস্তার ঘটানোই এই দিবসটির মূল লক্ষ্য। প্যালিয়েটিভ কেয়ার একটি নাগরিক অধিকার। আমার বা আপনার যে কারোর যে কোন সময় এই সেবার প্রয়োজন হতে পারে। নিরাময় অযোগ্য রোগীর ক্ষেত্রে রোগের যে কোন সময় বা বয়স থেকেই রোগী এবং তার পরিবারের দৈনন্দিন কষ্টগুলোকে কমিয়ে আনা এবং জীবনের মান উন্নয়নে সহয়তা করাই এই সেবার মূল উদ্দেশ্য।
প্যালিয়েটিভ কেয়ার মৃত্যুকে তরান্বিত বা দেরী করায় না, বরং মৃত্যুকালীন ভোগান্তি লাঘবে চেষ্টা করে। গ্লোবাল অ্যাটলাস অফ প্যালিয়েটিভ কেয়ার, ২০২০ অনুসারে, প্রতি বছর ৫৬.৮ মিলিয়নেরও বেশি লোকের প্যালিয়েটিভ কেয়ারের প্রয়োজন অনুমান করা হয়েছে যার মধ্যে ৩১.১ মিলিয়ন প্রাথমিক পর্যায়ে এবং ২৫.৭ মিলিয়ন জীবনের শেষের দিকে। এর প্রায় ৬৭ শতাংশ ৫০ বছরের বেশি বয়সী এবং কমপক্ষে ৭ শতাংশ শিশু।
প্রায় ৫৪ শতাংশ মানুষের জীবনের শেষ সময়ে উপশমকারী যত্ন প্রয়োজন। সারাবিশ্বের এই চাহিদার ১০ শতাংশেরও কম পূরণ করা সম্ভব হয়। বেশিরভাগ মানুষ ক্ষেত্রে, বিশেষ করে নিম্ন এবং মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে এই সেরা এখনও অনুকূলে নয়। বিশ্বব্যাপী প্যালিয়েটিভ কেয়ারের চাহিদার ১২ শতাংশেরও কম মেটানো সম্ভব হয়। বাংলাদেশে বছরের যে কোন সময় লক্ষ মানুষের প্যালিয়েটিভ কেয়ার প্রয়োজন।
সারাদেশে বিক্ষিপ্তভাবে মাত্র অল্প কিছু স্থানে এই সেবার প্রচলন আছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুবন্ধ ৬৭.১৯ তে প্যালিয়েটিভ কেয়ারকে জাতীয় স্বাস্থ্যনীতিতে অন্তর্ভুক্তকরণের সুপারিশ করা হয়েছে যান অন্যতম স্বাক্ষরকারী দেশ বাংলাদেশ। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (ঝউএ) ৩.৮ এ উল্লিখিত সর্বজনীন পরিধি (টঞঈ) স্বজনের অন্যতম প্রধান অংশ এই প্যালিয়েটিভ কেয়ার। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যালিয়েটিভ মেডিসিন বিভাগ ২০০৭ সাল থেকে এ সেবা প্রদান করে আসছে। বহিঃবিভাগ, অন্তঃবিভাগ, দিবা সেবা, রেজিস্টার্ড রোগীদের জন্য ২৪ ঘন্টা টেলিফোন সার্ভিস, বিনামূল্যে গৃহ সেবা প্রদান সহ করাইল এবং নারায়ণগঞ্জে কমিউনিটি লেভেলে জনসাধারণের মাঝে এই সেবা নিশ্চিত করে আসছে এই বিভাগ।
এছাড়াও এই বিভাগের পক্ষ থেকে ডাক্তার, নার্স, প্যালিয়েটিভ কেয়ার সহকারী (পিসিএ), স্বেচ্ছাসেবক এর পাশাপাশি রোগীর পরিবার বা পরিচর্যাকারীদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়।
আরএক্স/