ফিলিস্তিনে যুদ্ধ বন্ধে প্রধানমন্ত্রীর ৫ সুপারিশ
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৮:৩২ অপরাহ্ন, ১২ই নভেম্বর ২০২৩
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে ইসরাইলের বর্বর আগ্রাসন বন্ধে ৫ সুপারিশ পেশ করেছেন। অবিলম্বে এই আগ্রাসন বন্ধের জন্যে বিশ্ব ক্রমাগত আহ্বান জানিয়ে আসছে। তা সত্ত্বেও ইসরাইলের এই আগ্রাসন অব্যাহত রয়েছে।
গত ৯ নভেম্বর সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে ৮ম বিশেষ ইসলামিক শীর্ষ সম্মেলনে সম্প্রচারিত ভাষণে তিনি এই পরামর্শ দেন। ৮ম বিশেষ সম্মেলনের আগেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুদ্ধ বন্ধের জন্য পরামর্শ দিয়েছিলেন।
সৌদি আরবের রিয়াদে ফিলিস্তিনি জনগনের বিরুদ্ধে ইসরাইলের নৃশংস ও নজিরবিহীন আগ্রাসন নিয়ে আলোচনার জন্য সৌদি আরবের আমন্ত্রণে এই শীর্ষ সম্মেলন আহব্বান করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী প্রথম দফায় ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে ইসরাইল পরিচালিত জঘন্য একতরফা যুদ্ধ বন্ধে অবিলম্বে ‘যুদ্ধবিরতির’ আহব্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই যুদ্ধ অন্যায্য এবং এটি মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের লঙ্ঘন। এক মাসের বেশি সময় ধরে গাজা জ্বলছে এবং এখনও তা অব্যাহত রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ইসরাইল কোন বিরতি ছাড়াই নির্দয় তা-ব চালাচ্ছে, হাসপাতাল ও বেসামরিক অবকাঠামোতে বোমাবর্ষণ করছে এবং হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা করছে, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।
দ্বিতীয় সুপারিশে বলেন, বিধ্বস্ত গাজায় আটকে পড়া বাসিন্দাদের জন্য খাদ্য, পানি,ওষুধ এবং অন্যান্য জীবন রক্ষাকারী উপকরণের অবিচ্ছিন্ন এবং নিরাপদ সরবরাহের জন্য একটি মানবিক করিডোর খোলার প্রয়োজন রয়েছে। বিরামহীন ইসরাইলি বোমা হামলায় হাজার হাজার মানুষ নিহত হওয়ার এ সময়ে, মনে হচ্ছে আমরা, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মৃত্যু ও ধ্বংসের দৃশ্য দেখে অচল হয়ে পরেছি।
শেখ হাসিনা ভাষণে বলেন, অন্তত একটি নিরাপদ মানবিক করিডোরের জন্য আমাদের দ্রুত কাজ করা দরকার।
তৃতীয় সুপারিশে শেখ হাসিনা বলেন, নিরপরাধ বেসামরিক মানুষ হত্যা এবং বর্বর উপায়ে এলাকাগুলো উচ্ছেদ করায় সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করছে।
তিনি বলেন, এ ধরনের জঘন্য কাজের শাস্তি হওয়া উচিত যাতে গাজায় যাদের বাড়িঘর রয়েছে তারা আবার তাদের নিজ দেশে শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন করতে পারে।
আরও পড়ুন: চলমান পোশাক খাতের অস্থিরতায় বিএনপির ইন্ধন আছে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
চতুর্থ সুপারিশ, আমাদের অবশ্যই জাতিসংঘ, আরব শান্তি উদ্যোগ এবং কোয়ার্টেট রোড ম্যাপে সম্মত হওয়া সিদ্ধান্তগুলো পুনরায় দেখে নেয়া এবং দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে যা এই অঞ্চলের জনগনের মধ্যে স্থায়ী শান্তি আনবে।
পঞ্চম সুপারিশে তিনি বলেন, ফিলিস্তিনের এই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে মুসলিম উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
বঙ্গবন্ধু কণ্যা শেখ হাসিনা আরও বলেন, তারা আমাদের ভাই ও বোন যারা গত ৫৫ বছর ধরে তাদের আত্মনিয়ন্ত্রনের অধিকার এবং তাদের নিজস্ব মাতৃভূমির অধিকার থেকে বঞ্চিত। এখন সময় এসেছে যে আমরা সবাই একসাথে তাদের পাশে দাঁড়াই এবং তাদের ন্যায্য দাবিটি উপলব্ধি করতে তাদের সহায়তা করি। নারী ও শিশুরা যুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং যুবকরা তাদের জীবন দেয়
আরও পড়ুন: ‘নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলস লিমিটেডের’ আখ মাড়াই কার্যক্রম উদ্বোধন
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা শান্তিতে বিশ্বাসী এবং অন্য দেশের সব ধরনের যুদ্ধ ও দখলদারিত্বের বিরোধিতা করেন। আমরা চাই যে কোন সমস্যা শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান হোক। সবার কাছে আমার আবেদন, যুদ্ধ বন্ধ করুন; অস্ত্রের প্রতিযোগিতা বন্ধ করুন। প্রতিটি দেশ তার সার্বভৌমত্ব এবং শান্তিতে বসবাসের অধিকার ফিরে পাক। এতেই নিহিত রয়েছে মানবজাতির কল্যাণ। বাংলাদেশ ১৯৬৭ সালের সীমান্তের ভিত্তিতে এবং আল-কুদস আল-শরীফকে রাজধানী করে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের ভিত্তিতে আমাদের ফিলিস্তিনি ভাই ও বোনদের আত্মনিয়ন্ত্রণ, সার্বভৌমত্ব এবং স্বাধীনতার অধিকারকে সমর্থন করে এবং তাদের পাশে দাড়িয়েছে। আজকের শীর্ষ সম্মেলনের জন্য তিনি মোহাম্মদ বিন সালমান বিন আবদুল আজিজ আল-সৌদের প্রতি গভরিভাবে কৃতজ্ঞ।
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, আমি বিশ্বাস করি বৈঠকটি ইসরাইলকে প্রতিরক্ষাহীন ফিলিস্তিনিদের উপর নিষ্ঠুর আক্রমণ বন্ধ করার জন্য একটি শক্তিশালী প্ল্যাফর্ম হিসেবে কাজ করবে। কয়েক দশক ধরে গাজাকে বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ উন্মুক্ত কারাগার হিসেবে বর্ণনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একসময় নির্যাতিত ইহুদি জনগণ এখন নির্মমভাবে ঘরবাড়ি, আশা-আকাঙ্খা ও পরিবার গুলোকে ধ্বংস করেখে যারা তাদের কঠিন দিনগুলোতে আশ্রয় দিয়েছিল।
জেবি/এসবি