সিন্ডিকেটে বাড়ছে পেঁয়াজের ঝাঁজ, দিশেহারা ক্রেতারা


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০২:০৯ অপরাহ্ন, ১০ই ডিসেম্বর ২০২৩


সিন্ডিকেটে বাড়ছে পেঁয়াজের ঝাঁজ, দিশেহারা ক্রেতারা
ছবি : সংগৃহীত

দেশে পেঁয়াজের বাজার আবারও লাগামহীনভাবে ছুটছে। গত দুই দিনের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারগুলোতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। মূলত ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার পরেই দেশের বাজারে পণ্যটির দাম বেড়েই চলছে। পেঁয়াজের এমন অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধিতে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত ক্রেতারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। পেঁয়াজের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির জন্য ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটকে দায়ী করছেন তারা।


রবিবার (১০ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা যায়, বর্তমানে প্রতি কেজি আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ পাইকারি বাজারে ১৮০ টাকা ও খুচরা বাজারে ২০০ টাকা দামে বিক্রি করছে বিক্রেতারা। অথচ দুই দিন আগেও একই বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ ১০০-১১০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল। অর্থাৎ এই দুই দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে।


এছাড়া বর্তমানে দেশি ফরিদপুরের পুরান পেঁয়াজ প্রতি কেজি ১৯৬ টাকা ও নতুন পেঁয়াজ ১৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পাবনার পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা দরে। আর চীন থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা দরে। তবে রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোতে দেশি পেঁয়াজ আরও বেশি দামে বিক্রি হতে দেখা গেছে।


আরও পড়ুন: পেঁয়াজের ডাবল সেঞ্চুরি!


দেশি পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে শাকিল হোসেন নামের নামের এক বিক্রেতা বলেন, দেশি পেঁয়াজ দিয়ে বাজারের চাহিদা মেটানো সম্ভব নয়। তাই ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি শুরু না করলে পেঁয়াজের দাম আর কমবে না। বরং আরও বাড়ার সম্ভানা বেশি।


পেঁয়াজের এই অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির জন্য ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করাকে দুষছেন বিক্রেতারা। শাহ আলক নামের বিক্রেতা বলেন, ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি নিষিন্ধ করায় আমাদের বাজারে পেঁয়াজের টান পড়েছে, যার ফলে দাম ক্ষণে ক্ষণে বাড়ছে।


কারওয়ান বাজারে ব্যবসায়ীদের কোনো সিন্ডিকেট নেই জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি শুরু করলে দেশের বাজারে দাম আবারও কমে যাবে।


সরেজমিন বাজার ঘুরে দেখা যায়, ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি নিষিদ্ধের পর অনেক ব্যবসায়ী আগের কিনে রাখা পেঁয়াজও বেশি দাম বিক্রি করছেন। অনেকে ১৪০ টাকা করে কিনে রাখা পেঁয়াজ ১৮০-২০০ টাকায় বিক্রি করছেন।


আরও পড়ুন: পেঁয়াজ রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছে ভারত


জানতে চাইলে আজহার নামের এক বিক্রেতা বলেন, আমদানিকারকরা আগে পেঁয়াজ কিনে রেখেছিল এখন বেশি দামে বিক্রি করছে। আমরা যে দামে কিনি সেই দামেই বিক্রি করি। আমরা বেশি দামে বিক্রি করছি না। বরং আমাদের এক মণ পেঁয়াজে দুই কেজি পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে ফেলে দিতে হয়। তবে এই বিক্রেতাকেই ১৪০ টাকা করে কেনা পেঁয়াজ ১৮০ টাকা করে বিক্রি করতে দেখা যায়।


এদিকে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির জন্য ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটকেই দুষছেন ক্রেতারা। সাইফুল ইসলাম নামের এক ক্রেতা জানান, পেঁয়াজের দাম ৪০-৫০ টাকা হওয়া উচিত। গত সপ্তাহে ৮০ টাকা করে কিনলাম। কিন্তু এখন দাম ২০০ টাকা। এরপরেও আমাদের না খেয়ে কোন উপায় নেই।  


পণ্যসামগ্রী কিনতে আসা এক ক্রেতা বলেন, এটা অস্বাভাবিক। এটা সাধারণ ক্রেতাদের জন্য অসহনীয় পর্যায়ে চলে এসেছে। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াচ্ছে। এতে সরকারের ব্যর্থতা আছে।


আলম নামের আরেক ক্রেতা বলেন, এটা ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট বা কারসাজি ছাড়া কিছুই না। না হলে এক লাফে পেঁয়াজের দাম এত বাড়ার কথা নয়। আমি ৭০-৮০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ খেতে চাই।


শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানি আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়। এই ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বাজারে পেঁয়াজের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে শুরু করে। যদিও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বিভিন্ন বাজারে গিয়ে অসাধু বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে এবং তাদের জরিমানা করছে।


জেবি/এজে