শীতের আগমনে প্রকৃতি কন্যা সেজেছে অপরুপ সৌন্দর্যে


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:০৮ অপরাহ্ন, ১২ই ডিসেম্বর ২০২৩


শীতের আগমনে প্রকৃতি কন্যা সেজেছে অপরুপ সৌন্দর্যে
ছবি: জনবাণী

উত্তর জনপদের জেলা নওগাঁয় এখন ঘন কুয়াশার মাঝে প্রতিটি মাঠ জুড়ে সরিষা ফুলের মৌ মৌ গন্ধে মুখরিত ফসলের মাঠ। শীতের শিশির ভেজা সকালে কুয়াশার চাদরে ঘেরা বিস্তীর্ন প্রতিটি মাঠ যেন হলুদ বর্ণে ঘেরা এক সপ্নিল পৃথিবী। সরিষার সবুজ গাছের হলুদ ফুলে শীতের সোনাঝরা রোদে ঝিকিমিকি করছে। এ যেন এক অপরুপ সৌন্দর্য প্রাণ ফিরে পেয়েছে প্রকৃতি।


যেদিকে তাকায় শুধু সরিষা ফুলের হলুদ রঙের চোখ ধাঁ-ধাঁলো বর্ণীল সমরাহ। মৌমাছির গুনগুন শব্দে শরিষা ফুলের রেণু থেকে মধু সংগ্রহ আর প্রজাপতির এক ফুল থেকে আরেক ফুলে পদার্পন এ অপরুপ প্রাকৃতিক দৃশ্য সত্যিই যেন মনো মুগ্ধকর এক মূহুর্ত। ভোরের বিন্দু বিন্দু শিশির আর সকালের মিষ্টি রোদ ছুঁয়ে যায় সেই ফুলগুলোকে। ভালো ফলনের আশায় উপজেলার কৃষকেরা রাতদিন পরিশ্রম করে যাচ্ছে। কৃষকের পাশাপাশি বসে নেই কৃষি কর্মকর্তারাও।


আরও পড়ুন: সরিষা ফুলের ম-ম গন্ধে ভরে গেছে ফসলের মাঠ


চলতি রবিশস্য মৌসুমে কোন প্রকার প্রাকৃতিক দূর্যোগ হানা না দেওয়ায় এবং সরিষা চাষের পরিবেশ অনুকূলে থাকায় সরিষার পাশাপাশি আলু, গম ও ভোট্টার বাম্পার ফলনের সম্ভবনা রয়েছে এবার। গ্রামীণ জনপদের কৃষকরা এই সরিষা যথা সময়ে ঘরে তুলতে পাড়লে এবং বিক্রয় মূল্য ভাল পেলে ইরি-বোরো ধান চাষে কৃষকদের আগ্রহ বৃদ্ধি পাবে বলে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা মনে করছেন।


জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে ৬ হাজার ৭শত ৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও এবছর উপজেলায় প্রায় ৬ হাজার ৩শ’৫০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। এখনও পর্যন্ত সরিষা ক্ষেতে পোকা-মাকড়ের আনাগোনা দেখা না দিলেও মাঠ পর্যায়ে সরিষা চাষিদেরকে কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে যথাযথ পরামর্শ ও প্রত্যক্ষ কারিগরী সহযোগিতা করার কারণে সরিষা ক্ষেত অনেকটা রোগ-বালাই মুক্ত হওয়ায় বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকরা। সরকারী পর্যায় থেকে কৃষকদের মাঝে মান সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে সরিষার বীজসহ অন্যান্য কৃষি উপকরণ বিতরণ করার ফলে কৃষকের মাঝে সরিষা চাষের আগ্রহ বেড়েছে। উপজেলার শাহাগোলা, ভোঁপাড়া, কালিকাপুর, মনিয়ারী ও আহসানগঞ্জ ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি সরিষা চাষ হয়েছে বলে কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে।


উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের ওয়াজেদ আলী প্রামানিক জানান, আমি এবছর ৪বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছি। কৃষি অফিস থেকে কিছু বীজ পেলেও আমি নিজে বাঁকিটা কিনে জমিতে বোপন করেছি। সরিষা গাছে প্রচুর পরিমানে ফুল ধরায় মনে হচ্ছে এবার সরিষার আশানুরুপ ফলন পাব।


উপজেলার শাহাগোলা গ্রামের সরিষা চাষি আজাদ সরদার জানান, আমি চলতি মৌসুমে প্রায় ২বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছি। কোন প্রকার দূর্যোগ ও রোগবালাই না থাকায় এবছর সরিষার বাম্পার ফলন পাব বলে আমি আশা করছি।


এ বিষয়ে উপজেলার তারাটিয়া ব্লকের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মো. জাহিদ হাসান বলেন, সরিষা চাষে কৃষকরা যাতে লাভবান হতে পারেন এবং কৃষকরা যেন কোনো প্রকার সমস্যায় না পড়েন এ জন্য আমরা সার্বক্ষণিক নজর রাখছি। যেখানেই সমস্যা সেখানেই আমাদের উপস্থিতি এবং সমস্যা সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।


আরও পড়ুন: নিয়মিত সরিষার তেল খেলে যে উপকারিতা


উপজেলার ভবানীপুর ব্লকের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মার্জিয়া পারভিন বলেন, সরিষা চাষে কৃষক যাতে অধিক লাভবান হতে পারে সে জন্য মাঠ পর্যায়ে আমরা কৃষকদের প্রয়োজনীয় প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে পরামর্শ দিয়ে আসছি। আশা করছি এবার সরিষার বাম্পার ফলন হবে।


উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা তাপশ কুমার রায় জানান, এবারে আত্রাই উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে বিগত বছরের তুলনায় সবচেয়ে বেশি পরিমান সরিষা চাষ হয়েছে। যথা সময়ে জমি চাষ যোগ্য হওয়ায় এলাকার কৃষকরা সুযোগ বুঝে সরিষা চাষ করেছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তাদেরকে যথাযথ পরামর্শ ও পরিচর্যার বিষয়ে দিক নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।


তিনি আরোও বলেন, এবার প্রাকৃতিক দূর্যোগে কোন প্রকার ক্ষতি না হলে এ উপজেলায় সরিষা আবাদের বাম্পার ফলনের সম্ভবনা রয়েছে। শুধু তাই নয় সরিষা চাষের জমিগুলো উর্ব্বরতা বেশি থাকায় কৃষকরা ইরি-বোরো চাষেও এর সুফল পাবে।


আরএক্স/