আবারো রক্তাক্ত সবুজ পাহাড়

গুলিতে ইউপিডিএফের ৪ নেতা নিহত, নিখোঁজ২


Janobani

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫:৫২ অপরাহ্ন, ১২ই ডিসেম্বর ২০২৩


গুলিতে ইউপিডিএফের ৪ নেতা নিহত, নিখোঁজ২
ফাইল ছবি

খাগড়াছড়ির পানছড়িতে গুলিতে প্রসীতপস্থী ইউপিডিএফ সমর্থিত গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাবেক সভাপতি বিপুল চাকমা,খাগড়াছড়ি জেলা সহ-সভাপতি লিটন চাকমা,পিসিপির সহ-সভাপতি সুনীল ত্রিপুরা ও ইউপিডিএফের সদস্য রুহিনসা ত্রিপুরাসহ ৪ জন নিহত হয়েছে এবং গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দু’জন নিখোঁজের ঘটনা ঘটেছে।  


সোমবার (১১ নভেম্বর) রাতে আবারো আধিপত্য বিস্তারের জেরে খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলায়  ৯ নং ওয়ার্ডের ফতেহপুর এলাকায় গণতান্ত্রিক ইউপিডিএফের গুলিতে এ ঘটনা ঘটে বলে জানা যায়। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে ৫৫ থেকে ৬০ রাউন্ড গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটে বলে অসমর্থিত একটি সূত্র জানায়। 


এতে ঘটনাস্থলে ইউপিডিএফ নেতা বিপুল চাকমা, খাগড়াছড়ি জেলা সহ-সভাপতি লিটন চাকমা পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি সুনীল ত্রিপুরা,সদস্য রুহিন ঘটনাস্থলে নিহত হয়। এ সময় কমান্ডার হরি কমল ত্রিপুরা ও চীফ কালেক্টর নীতি দত্ত চাকমাকে ধরে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেন ইউপিডিএফ। 


গোলাগুলির ঘটনায় ঐ এলাকায় আতঙ্ক ও থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে বলে স্থানীয় সূত্র জানায়। এদিকে একাধিক অসর্থিত সূত্র হতাহতের সংখ্যা আরো বেশি দাবী করলেও ৬ জনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ইউপিডিএফ। 


এ ঘটনার জন্য ইউপিডিএফ সংগঠন অংগ্য মারমা এর পক্ষ থেকে অভিযোগ করে, ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিককে নব্য মুখোশ আখ্যায়িত করে জেএসএস সংস্কারসহ দু’গ্রুপকে দায়ী করেন। একই সাথে হত্যাকান্ডের জন্য তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে হত্যার বিচার দাবী করেছে প্রসীত নেতৃত্বাধীন ইউপিডিএফ। তবে ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক এর পক্ষ থেকে দায় স্বীকার করেনি কেউ।  


খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার মুক্তা ধর জানান, পুলিশের পক্ষ থেকে আইনি যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে এবং লাশ উদ্ধারে পক্রিয়া পুলিশ কাজ করছে বলে বিষয়টি নিশ্চিত করেন তিনি।

 

এদিকে পাহাড়ে একের পর এক আধিপত্যের লড়াইয়ে ঝড়ছে তাঁজা প্রাণ। গোলাগুলিতে আবারো রক্তাক্ত হলো সবুজ পাহাড়। থেমে থেমে এমন ঘটনায় পাহাড়ের পরিস্থিতি দিনে দিনে ভয়স্কর রূপ নিচ্ছে। বাড়ছে লড়াই-সংঘাত আর হানাহানি। এলাকায় এই ঘটনায় উত্তোজনা বিরাজ করছে।


খাগড়াছড়ির পানছড়িতে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক ও পিসিপি’র সাবেক সভাপতি বিপুল চাকমাসহ চার জনকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় ইউপিডিএফ ও সহযোগী সংগঠনগুলো তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। উক্ত ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ, হরতাল, সড়ক অবরোধ ও বাজার বয়কটসহ বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। 


মঙ্গলবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৩ সংবাদ মাধ্যমে প্রদত্ত এক যুক্ত বিবৃতিতে ইউনাইটেড পিপল্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)এর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রবি শংকর চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি জিকো ত্রিপুরা, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের কেন্দ্রীয় সভাপতি কণিকা দেওয়ান, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি নীতি চাকমা ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি অংকন চাকমা এই নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। 


বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ উক্ত হত্যাকাণ্ডকে জঘন্য, ন্যাক্কারজনক ও কাপুরুষোচিত আখ্যায়িত করে বলেন, ‘সন্ত্রাসী অপতৎপরতার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামে যে অবাধ, সুষ্ঠ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পরিবেশ নেই তা এই হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে আর একবার প্রমাণিত হলো।’ ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তারা বলেন, গতকাল পিসিপি’র সাবেক সভাপতি ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিপুল চাকমা (৩২), পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি সুনীল ত্রিপুরা (২৮), গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সহ-সভাপতি লিটন চাকমা (২৯) ও ইউপিডিএফ সংগঠক রহিন বিকাশ ত্রিপুরা (৪৯), নীতি দত্ত চাকমা ও হরিকমল ত্রিপুরাসহ ৭ জন নেতাকর্মী যুব সম্মেলন সফল করার জন্য লোগাং এলাকায় সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাচ্ছিলেন। ১২ ডিসেম্বর সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। ‘ঘটনার সময় রাতে বিপুল চাকমাসহ উক্ত ৭ জন অনিল পাড়া নামক গ্রামে এক ব্যক্তির বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। এ সময় রাত আনুমানিক সাড়ে ৯টা থেকে সাড়ে ১০টা সময়ের মধ্যে পানছড়ি সদর এলাকা থেকে একটি সশস্ত্র দল ঐ বাড়িতে যায় এবং অত্যন্ত ঠাণ্ডা মাথায় একে একে বিপুল চাকমা, সুনীল ত্রিপুরা, লিটন চাকমা ও রুহিন বিকাশ ত্রিপুরাকে গুলি করে হত্যা করে। ‘নিহতদের মধ্যে বিপুল চাকমা চেঙ্গী ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের করল্যাছড়ি বুদ্ধধন পাড়ার সুনয়ন চাকমার ছেলে। সুনীল ত্রিপুরার বাড়ি মাটিরাঙ্গা উপজেলার বড়নাল ইউনিয়নের সুরেন্দ্র রোয়াজা হেডম্যান পাড়ায়। তার পিতার নাম সুখেন্দু বিকাশ ত্রিপুরা। লিটন চাকমার বাড়ি খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার ভাইবোনছড়া ইউনিয়নের দ্রোনচার্য কার্বারি পাড়ায়, তার পিতার নাম মৃত. চিন্তা মুনি চাকমা। রুহিন বিকাশ ত্রিপুরা পানছড়ির উল্টাছড়ি ইনিয়নের পদ্মিনী পাড়ার বাসিন্দা জনাধন ত্রিপুরার ছেলে। ‘উক্ত চার জনকে হত্যার পর সন্ত্রাসীরা সেখান থেকে ইউপিডিএফ সংগঠক নীতিদত্ত চাকমা, হরিকমল ত্রিপুরা ও সদস্য প্রকাশ ত্রিপুরাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। তাদের এখনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।’


কর্মসূচি: হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও শাস্তি এবং গঠিত বাহিনী ভেঙে দেয়ার দাবিতে ইউপিডিএফ ও সহযোগী সংগঠনগুলো নিম্নোক্ত কর্মসূচী ঘোষণা করেছে। ১৩ থেকে ১৫ ডিসেম্বর প্রতিবাদ সমাবেশ ও শোক সভা। বিভিন্ন স্থানে কালো পতাকা উত্তোলন। ১৫ ডিসেম্বর থেকে ১৫ জানুয়ারি ২০২৪ পর্যন্ত পানছড়ি বাজার বয়কট। (প্রয়োজনে বয়কটের মেয়াদ বাড়ানো হতে পারে।), ১৭ ডিসেম্বর পানছড়ি উপজেলাব্যাপী সাধারণ ধর্মঘট। ১৮ ডিসেম্বর খাগড়াছড়ি জেলাব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা শান্তিপূর্ণ সড়ক অবরোধ। বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ উক্ত কর্মসূচি সফল করার সকল শ্রেণী-পেশার জনগণকে উদাত্ত আহ্বান জানান।


আরএক্স/