ইবি শিক্ষার্থীদের রঙের ছোঁয়ায় রঙিন ইন্দ্রজিতের মাটির ঘর


Janobani

ক্যাম্পাস প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৩:৪৯ অপরাহ্ন, ৩০শে ডিসেম্বর ২০২৩


ইবি শিক্ষার্থীদের রঙের ছোঁয়ায় রঙিন ইন্দ্রজিতের মাটির ঘর
রঙের ছোঁয়ায় রঙিন মাটির ঘর। ছবি: জনবাণী

মংক্যচিং মারমা: অনেকদিন আগে সুদিপ দাদার সাথে ত্রিবেণীতে ইন্দ্রজিৎ মামার বাড়িতে গেছিলাম ঘুরতে। সুদিপ দাদা বলেছিলো, ইনার এই মাটির বাড়িতে আল্পনার কাজ করলে কেমন হয়? তখন উৎসাহ থাকলেও সাহস হয়নি। প্রায় এক বছর পর আমাদের জুনিয়রদের সাথে চা আড্ডার সময় হলো হঠাৎ প্লান যে মাটির বাড়িতে আল্পনা দেওয়া হবে। সাথে সাথে ইন্দ্রজিৎ মামাকে কল করলে তিনি তার বাড়িতে আল্পনা করতে রাজি হয়ে যান। তারপর পরীক্ষা শেষ করে সবাই মিলে রঙ, তুলি, মগ ইত্যাদি সরঞ্জামের বন্দবস্ত করে নেমে পড়ি রংতুলির যুদ্ধে। এভাবেই ভ্যানচালক ইন্দ্রজিৎ সাহার বাড়িটিকে নতুন রুপ দেওয়ার গল্পটি বলেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) চারুকলা বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সজল রয়। 


আরও পড়ুন: বটতলায় ভ্রাম্যমাণ তারুণ্য লাইব্রেরি


শুধু সজল নয় বিভাগটির ২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সুদিপ রয়, মিষ্টি, হিমিকা, ২১-২২ শিক্ষাবর্ষের প্রমি, নুসরাত ঐশি, নেহা ও ২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের প্রনয় অন্ত, মাহমুদ নাহিন, শাহেদ বিশ্বাস, অর্ক, জুবায়ের, দীনবন্ধু রায় দেবা, প্রাপ্তি, যুক্তা জ্যোতি, সুমি, শিমু , কবিতা, তাসনিম সহ আরো অনেকে মিলে হাতখরচের টাকা জমিয়ে নিজ অর্থায়নে বিশ্ববিদ্যালয়ের শীতকালীন অবকাশ শুরু হওয়ার পরেরদিন নেমে পড়ে বাড়িটি রঙ তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তুলতে। 


বাড়িটির একাধিক ঘরের মোট ৮টি দেয়ালের উপরে দেওয়া হয় শিল্পকর্মের আঁচড়। বিভিন্ন দেয়ালে শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন ডিজাইনের আলপনা। বাড়ির দরজা জানালা গুলোকে আকর্ষণীয় করে তুলতে ব্যবহার করা হয়েছে একাধিক রঙ। একটি ঘড়ের সদর দেয়ালে দেখা যাচ্ছে হিন্দু ধর্মের শ্রীকৃষ্ণ এবং দেবীর প্রতিকৃতি। পাশাপাশি অন্যান্য দেয়াল সাজানো হয়েছে মাছ, পালকি, গ্রামীণ বধু এবং হরেকরকম গ্রাফিতি দিয়ে। 


পুরো বিষয়টির তত্ত্বাবধানে থাকা চারুকলা বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের সুদিপ রায় বলেন, ইবির চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে রং তুলি হাতে একটা ছোট্ট যুদ্ধ ছিলো এটি। ভিন্নধর্মী কিছু করার ইচ্ছা থেকেই এই শিল্পকর্ম করা হয় যা আমাদের জুনিয়রদের সাথে পরবর্তীতে বড় পরিসরে কাজ করার অনুপ্রেরণা যোগাবে। বাড়িটিতে রঙ তুলির আঁচড় ফুটিয়ে তুলতে পেরে আমাদেরও ভালো লাগছে। 


আরও পড়ুন: ২০২৩ সালে উপাচার্য-শিক্ষার্থীসহ যাদের হারিয়েছে জবি


২০২২-২৩ সেশনের শিক্ষার্থী প্রণয় বলেন, হঠাৎ গল্পে গল্পেই এমন একটি কাজের উদ্যোগ নেওয়া হয়। আমরাও অনেক আগ্রহী ছিলাম। অতঃপর দিনক্ষণ ঠিক করে সকালে কাজ শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করি৷ এই কর্মযজ্ঞের মাধ্যমে আমরা এক নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করি। 


নিজ বাড়িতে এভাবে শিল্পকর্ম দেখে আনন্দিত ইন্দ্রজিৎ সাহাও। তিনি বলেন, অনেকদিন থেকেই ছেলেপেলেদের সাথে আমার চেনাজানা। কয়দিন আগে বললো যে আমার বাড়িতে ওরা আঁকাআকি করবে। আমিও এতে রাজি হয়ে যাই। পরে ওরা এসে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করে আমার বাড়ির দেয়াল সাজিয়ে দেয়। নিজের বাড়ির দেয়ালে এত সুন্দর শিল্পকর্ম দেখে নিজের মধ্যেই ভালো লাগে কাজ করছে। সাজানো দেখে বাড়ির বাচ্চারাও খুব খুশি। আশপাশের সবাইও খুব প্রশংসা করতেছে। অনেকেই আমার বাড়ি দেখতে আসতেছে, এটা আমার কাছে খুবই ভালো লাগে।



আরএক্স/