রংপুর-৫: শেষ সময়ে ভোটারদের টান জাকিরের ট্রাক প্রতীকে
উপজেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৩:৫৬ অপরাহ্ন, ৪ঠা জানুয়ারী ২০২৪
ভোটের মাত্র একদিন বাকী। আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা বন্ধ হয়েছে। এখন চলছে ভোটারদের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনা। কাকে কেন ভোট দেবেন পক্ষে-বিপক্ষে তুমুল তর্ক-বিতর্ক। ভোটের মাঠে এমন চিত্র দেখা গেছে রংপুর-৫ আসনে। মিঠাপুকুরে ভোটাদের তর্ক যুদ্ধের কেন্দ্রে রয়েছে ট্রাক প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা চেয়ারম্যান থেকে পদত্যাগ করা জাকির হোসেন সরকার। মূলত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী রাশেক রহমানের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দিতা তুঙ্গে। ভোটাররা জানান, জাকির হোসেন সরকার মিঠাপুকুরের স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে ভোটারদের আলাদাভাবে মনোযোগ কাড়তে সক্ষম হয়েছেন।
দুর্যোগ-সংকটে সহায়তা করে সর্বজনের জনপ্রিয়তায় আত্মবিশ্বাসী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত জাকির হোসেন সরকার। জাকির সংসদ নির্বাচনে এবার লড়ছেন ‘ট্রাক’ প্রতীক নিয়ে। আর বিগত দিনে পিতা ও নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন রাশেক। ভোটের লড়াইয়ে বিজয় ছিনিয়ে নিতে অনড় এই দুই প্রার্থীই। নির্বাচন সংশ্লিষ্টরাও বলছেন, ভোট উৎসব হবে এই আসনটিতে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চেয়ারম্যান হিসেবে ভালো কাজের মাধ্যমে মিঠাপুকুরে ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে জাকির হোসেন সরকারের। তিনি আশাবাদী ছিলেন দলীয় মনোনয়নের। তবে মনোনয়ন না পেলেও স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী এবং জনগনের চাপে স্বতন্ত্র পদে নির্বাচন করতে বাধ্য হয়েছেন। স্থানীয়ভাবে চাঁদা তুলে নির্বাচনী খরচ পরিচালনা করছেন ভোটাররাই।
এদিকে, টানা তিনবার আওয়ামী লীগের দখলে থাকা আসনটিতে এবারো নৌকা পেয়েছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ও বর্তমান সংসদ সদস্য এইচএন আশিকুর রহমানের ছেলে রাশেক রহমান। প্রতীক ও পিতার ইমেজে তিনি হেভিওয়েট হলেও আসনটিতে এবার বাগড়া দিচ্ছেন নিজ দলের সাবেক সম্পাদক, দুইবারের উপজেলা চেয়ারম্যান জাকির হোসেন। ভোটের মাঠে এই দুই প্রার্থীকে নিয়ে চলছে তুমুল আলোচনা।
ভোটাররা বলছেন, স্থানীয় প্রার্থী জাকির দুর্যোগ, সংকটে পাশে থেকেছেন। দিয়েছেন সহায়তা। কিন্তু তিনবারের সংসদ সদস্য আশিকুর রহমান অধিকাংশ সময় ছিলেন নির্বাচনী এলাকার বাইরে। এবার প্রার্থী তার ছেলে হওয়ায় ভোটারদের সহানুভূতির তীর অনেকটাই জাকিরের দিকে।
আরও পড়ুন: একই স্থানে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমাবেশ, ১৪৪ ধারা জারি
উপজেলার পায়রান্দ এলাকার সোহেল রানা নামের এক ভোটার বলেন, ‘জাকিরের মনোনয়ন বাতিল হয়েছিল। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম এবার ভোট কেন্দ্রে যাবো না। কিন্তু তিনি এখন ভোটের মাঠে। খুব ভালো লাগছে যে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবো। কারণ জাকির ২০-২৫ বছর ধরে যে কোনো বিপদে আমাদের খোঁজ খবর রেখেছেন তাই আমি চাই তিনি নির্বাচিত হোক।
স্বতন্ত্র প্রার্থী জাকির হোসেন সরকার বলেন, নানা কুটকৌশলের মধ্যেও গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ১৪৮টির কেন্দ্রের মধ্যে ১৪৬টিতে আমাকে নিরঙ্কুশ জয় এনে দিয়েছিল এই আসনের মানুষ। সুষ্ঠুভাবে ভোট হলে আমার পক্ষে ভোট বিপ্লব হবে। আমি জনগণের পাশে ছিলাম, পাশে আছি এবং সবসময় থাকবো। জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার কাজকে বেগবান করবো।
আরও পড়ুন: কি আছে মাহিয়া মাহির ইশতেহারে?
প্রসঙ্গত, জাকির হোসেন সরকার ও রাশেক রহমান ছাড়াও আসনটিতে আরও ছয়জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন- জাতীয় পার্টির আনিছুর রহমান ‘লাঙ্গল’, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মাহবুবুর রহমান ‘ডাব’, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের আব্দুল হালিম ম-ল ‘গামছা’, ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশ মনোনীত এনামুল হক ‘চেয়ার’, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির আব্দুল ওয়াদুদ মিয়া ‘একতারা’ এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ফ্রন্টের (বিএনএফ) আব্দুল ‘টেলিভিশন’ প্রতীক। স্বাধীনতা পরবর্তী সংসদ নির্বাচনে রংপুর-৫ আসনে দুই বার বিএনপি, তিনবার জাতীয় পার্টি ও ৬ বার আওয়ামী লীগ জয় পেয়েছে। আসনটিতে মোট ভোটার ৪ লাখ ৩৯ হাজার ৩৪৭ জন।
জেবি/এসবি