নতুন মুদ্রানীতি আসছে আজ


Janobani

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২:১৭ অপরাহ্ন, ১৭ই জানুয়ারী ২০২৪


নতুন মুদ্রানীতি আসছে আজ
ফাইল ছবি

নিয়ে নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে যাচ্ছে। বুধবার (১৭ জানুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংক মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ চ্যালেঞ্জ নিয়ে মুদ্রানীতি ঘোষণা হবে। ডলারের বিপরীতে টাকার মান শক্তিশালী করার পরিকল্পনা। 


মুদ্রানীতি এমন সময় ঘোষণা হতে যাচ্ছে, যখন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থবার সরকার গঠন করেছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে যখন নাভিশ্বাস অবস্থা, তখন নতুন মুদ্রানীতিকে জনবান্ধব করা বড় চ্যালেঞ্জ বলেই দেখা হচ্ছে।


কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, পূর্বেরন্যায় এবারের মুদ্রানীতিতেও সংকোচনমূলক নীতি গ্রহণ করা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, নতুন মুদ্রানীতি ডলারের মূল্য নিয়ন্ত্রণে ক্রলিং পেগ পদ্ধতি নেওয়া হতে পারে। 

এছাড়া বৈদেশিক লেনদেনে ভারসাম্যহীনতা ও নিয়ন্ত্রণহীন ব্যাংকখাত নিয়ন্ত্রণের জোর উদ্যোগ নেওয়া হবে। মূল্যস্ফীতির লাগাম টানার চ্যালেঞ্জ থাকতে।


মুদ্রানীতি হলো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য আর্থিক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক গৃহীত নীতি যা দেশের অর্থনীতিতে অর্থ সরবরাহ নিশ্চিত ও নিয়ন্ত্রণ করে। মুদ্রানীতি দেশের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে সুদের হার এবং অর্থ সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে। 


ক্রলিং পেগ হলো নিজের দেশের মুদ্রার সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার সমন্বয়ের একটি পদ্ধতি; যেখানে একটি নির্দিষ্ট বিনিময় হারসহ একটি মুদ্রাকে একটি সীমার মধ্যে ওঠা-নামা করার অনুমতি দেওয়া হয়। অস্থিরতার সময় দেশীয় মুদ্রার মূল্য এবং হারের সীমাও ঘন ঘন সমন্বয় করা হয়। অর্থাৎ মুদ্রার মূল্যের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন সীমা নির্ধারণকেই ক্রলিং পেগ বলে।


বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, গত ডিসেম্বরে মূল্যস্ফীতি ছিলো ৮ শতাংশ। আগামী জুনের মধ্যে তা ৬ শতাংশে নামার লক্ষ্য নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত নভেম্বরের শেষে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.৪৯ শতাংশ। এই মূল্যস্ফীতি কমাতে ঋণের সুদহার কিছুটা বাজারভিত্তিক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি নীতি সুদহারও বাড়িয়েছে। এতে ঋণের সুদের হার ৯ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৮৯ শতাংশ।


আগের বছর বা মাসের সাথে অথবা কোন নিদিষ্ট সময়কালের সাথে বর্তমানের তুলনা করে খাদ্য, কাপড়, বাড়ি,সেবা ইত্যাদি বিভিন্ন উপাদানের মূল্য বৃদ্ধির পার্থক্যই মূল্যস্ফীতি। মুদ্রাস্ফীতি বলতে বোঝায় পণ্য ও সেবার দাম বেড়ে যাওয়াকে।


বাংলাদেশ ব্যাংক যে সুদহারে তফসিলি ব্যাংকগুলোকে স্বল্প সময়ের জন্য ঋণ দেয়, সেটায় হচ্ছে নীতি সুদহার। ইংরেজিতে একে বলে রেপো রেট। এটা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য মুদ্রানীতির একটি অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে পরিচিত।


এদিকে তারল্য সংকট ও সুদহারের কারণে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমে গেছে। গত নভেম্বরে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল ৯ দশমিক ৯০ শতাংশ। ডিসেম্বর পর্যন্ত ১০ দশমিক ৯ শতাংশ ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ছিলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের।

আরও পড়ুন: মুদ্রানীতি ঘোষণা ১৭ জানুয়ারি


ডলার সংকটের কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমেছে অর্ধেকের বেশি।


আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের হিসাব পদ্ধতি অনুযায়ী দেশের বর্তমান রিজার্ভ ২০.৩৮ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৩৮ কোটি ডলার। তবে প্রকৃত বা নিট রিজার্ভ বর্তমানে ১৬ বিলিয়ন ডলারের কম। যা দিয়ে তিন মাসের ব্যয় বহন করা যাবে। এটা যথেষ্ট নয় বলেও দাবি করছে খাত সংশ্লিষ্টরা।


অন্যদিকে ব্যাংকগুলোর তদারকিতে দুর্বলতা ও নিয়ন্ত্রণহীনতার কারণে খেলাপি ঋণ বেড়ে দেড় লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এক ডজনের বেশি আর্থিক প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতে পারছে না। তার মধ্যে ১৭টির ঋণই ৫০ শতাংশের উপরে।


আর্থিক খাতে খেলাপি ঋণ ২১ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে। পাশাপাশি শরিয়াহভিত্তিক পাঁচ ব্যাংক চাহিদামতো কেন্দ্রীয় ব্যাংকে টাকা জমা রাখতে পারছে না, তাদের চলতি হিসাবেও ঘাটতি রয়েছে। আবার কিছু ব্যাংক পরিদর্শনে গিয়ে অনিয়ম ধরায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তাদের বদলি করার ঘটনাও ঘটছে।


এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে এবারের মুদ্রানীতি সংকোচনমূলক হবে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।


অর্থনৈতিক সংকট নিরসনের মূল কাজ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে থাকা মূল অস্ত্র হচ্ছে মুদ্রানীতির কার্যকর ব্যবহার। যা দিয়ে করা হবে দ্রব্যমূল্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ।


আরও পড়ুন: ১২ দিনে প্রবাসী আয় এলো ৯১ কোটি ডলার


বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান বলেন, 'চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতির প্রধান লক্ষ্যই থাকবে মুদ্রাস্ফীতি কমিয়ে আনা। এবারের মুদ্রানীতিতে এটিই যে প্রাধান্য পাবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।' 

তিনি বলেন, 'মূল্যস্ফীতি কমানোর নানা উপায় আছে। তার মধ্যে মুদ্রানীতিতে বড় ইম্প্যাক্ট আছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন ব্যাংককে যে ঋণ দেয় আর্থাৎ পালিসি রেটের সঙ্গে মুদ্রানীতি উঠা নামা করে। আমাদের মানি মার্কেটও যথেষ্ট টাইট না, লুজ আছে। প্রচুর টাকা বাজারে আছে। যার কারণে জিনিস পত্রের দাম কমানো যাচ্ছে না। এই কারণেই আমার বিশ্বাস এবারের মুদ্রানীতিতে পলিসি রেট বাড়বে। তবে কত বাড়বে তা শেষ মুহূর্তে গভর্নর ঠিক করবেন। নিঃসন্দেহে বলা যায়, এবারের মুদ্রানীতি হবে সংকোচনমূলক। যার মাধ্যমে আমদানি করা পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে।'


আতিউর রহমান বলেন, 'ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণে এবারে মুদ্রানীতিতে ক্রলিং পেগ নীতি অনুসরণ করা হবে। অর্থাৎ ডলারের দাম স্থিতিশীল না হয়ে উঠা-নামা করবে। দ্রব্যের দাম নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতি কোনো কাজ করে না। তবে শুল্ক কমিয়ে আনতে হবে যাতে বাজারে দ্রব্যমূল্যের দাম কমে আসে।'

তিনি বাজার ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন। তার ভাষায়, 'মুদ্রানীতি মুল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের একমাত্র টার্গেট হতে পারে না। মুদ্রানীতি হতে হবে মাল্টি টার্গেটেড। যাতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও উপকৃত হয়। একইসঙ্গে আমদানি করা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশাপাশি কাজ করতে হবে এনবিআরকে। যাতে আমদানি করা পণ্যের দামও মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকে।'


তিনি বলেন, 'আমরা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের প্রোগ্রামের মধ্যেই আছি। তারা বিনিময় হার করিডোরের মধ্যে রাখতে বলেছে। ডলারের দাম বাজার দরের কাছাকাছি রাখতে হবে। এটা করা হলে রেমিট্যান্স ফ্লো বাড়বে। এতে করে রিজার্ভ স্থিতিশালী হবে। সব মিলিয়ে সামষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীল হবে।'


জেবি/এজে