মুরাদনগরে তরুণীদের সফল উদ্যোক্তা হয়ে উঠার সাহসী সংগ্রামের গল্প
উপজেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৪:১৪ অপরাহ্ন, ২২শে জানুয়ারী ২০২৪
প্রিয়ন্ত মজুমদার: নারীদের করতে হবে গৃহস্থালির কাজ, সমাজের প্রচলিত প্রথা অনুসারে পুরুষরা টাকা রোজগার করবে। নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগামী মূল্যের সময়ে একজনের আয়ে প্রতিনিয়ত হিমসিম খেতে হচ্ছে ঘরের কর্তাদের। নারীদের কর্মমুখী শিক্ষায় আগ্রহ বৃদ্ধিতে, বেকারত্ব সমস্যার অবসানের পাশাপাশি নিজের হাতখরচ নিজেই উপার্জন করে অবদান রাখছে পরিবারে। সৃষ্টি হচ্ছে নতুন সব চমকপ্রদ কর্মক্ষেত্র। তারই ধারাবাহিকতায় আজকে আলোচনা করছি সম্ভ্রান্ত পরিবারের আদর্শ নারীদের বেকিং আইটেমের কাজে উদ্যোক্তা হয়ে উঠার গল্পকথা নিয়ে।
কুমিল্লার মুরাদনগরে নারী উদ্যোক্তাদের বেকিং আইটেমের উপর অভূতপূর্ব সাফল্য প্রতিনিয়ত নজর কাড়ছে সকলের। তাদের আগ্রহীচেতা মনোভাবে সফল উদ্যোক্তা হয়ে উঠার শক্তি ও সাহস পাচ্ছে বিভিন্ন স্থানের মানুষজন। অল্পসময়ের মাঝেই গড়ে উঠেছে অনলাইন ভিত্তিক বেশ কিছু বেকিং শপের পথচলা।
আরও পড়ুন: মুরাদনগরে শিশুশ্রমের প্রভাবে হুমকির মুখে স্বর্ণালি শৈশব
উল্লেখযোগ্য হিসেবে বলা যায়, ভূবনঘরের কেকের সমাহার, মাস্টারপাড়ার সামিরা বেকিং, চৌধুরীকান্দির বেকিং শপ বিডি ও ড্রিমি কেক হাউজ, নগরপাড়ের আফরিন¯ শপ, ঘোড়াশালের কেক কর্ণার প্রভৃতি। সবগুলো বেকিং শপই পরিচালনা করছেন উঠতি বয়সের নারী উদ্যোক্তারা। শুরুটা মোটেও সরলতায় পূর্ণ ছিলোনা তাদের জন্য। সমাজের দৃষ্টিকটু পিছুটানকে দুমড়েমুচড়ে চলেছেন তারা সাফল্যের পথে। বর্তমানে এলাকাজুড়ে তাদের মর্যাদা ও সম্মান বৃদ্ধি পেয়েছে অন্যসব মানুষ থেকে অত্যাধিক।
নারী উদ্যোক্তা শারমিন আক্তার জনবাণীকে বলেন, বাবার কাছ থেকে হাতখরচ নিয়ে চলতাম। মজার ছলেই সিদ্ধান্ত নিয়ে শুরু করলাম বেকিং আইটেমের কাজ। সহপাঠীদের সহযোগিতায় আমি অনেক সাহস পেয়েছি। দেখলাম মানুষজন ভালোই সাড়া দিচ্ছে, আর পিছুফিরে তাকানো নয়। এখন আগের মতো সবকিছুতে বাবার কাছ থেকে টাকা চেয়ে নিতে হয়না। নিজের প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস নিজের উপার্জনের টাকায় ক্রয় করতে পেরে মনে আনন্দই লাগে।
মুরাদনগরের প্রথম বেকিং বিষয়ক নারী উদ্যোক্তা সামিরা মাহমুদ(বৃষ্টি) জনবাণীকে বলেন, মুরাদনগরে বেকিং আইটেমের কাজ আমিই প্রথম শুরু করেছিলাম, শুরুর দিকে মানুষজন বিভিন্ন কটূকথা বলতো, পিছুটান দিয়ে হতাশাগ্রস্ত করতে চেষ্টা করতো। ভয় দেখাতো আমি নাকি এগিয়ে যেতে পারবোনা। কিছু কাছের মানুষ ভরসা দিয়ে এতদূর নিয়ে এসেছে তাদের প্রতি সবসময় কৃতজ্ঞতা। এলাকার মানুষ আমাকে আমার ডাক নামের থেকে বেকিং আইডির নামে অধিক চিনে যা সত্যিই গর্বের। আশেপাশের বিভিন্ন উপজেলার মানুষ আমার থেকে কেক নিতে আসতো। অন্যান্য নারীদের কথা বিবেচনা করে আমি তাদেরকেও শিখিয়েছি কেক বানানো।
নারী উদ্যোক্তা আফরোজা বিথী ও সুমাইয়া আফরিন বলেন, নারীদের স্বাবলম্বী হওয়া প্রয়োজন। আমার পরিবার আমাকে ভরসা দিয়েছে সবসময়। ক্রেতাদের ভালোবাসায় উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন মেলাতেও স্টল রাখা হয় আমাদের জন্য। নারীদেরকে চাকুরীর পেছনে না ছুটে নিজের অবস্থান থেকে কিছু করা শিখতে হবে। দিনশেষে নিজের হাতখরচের পাশাপাশি পরিবারকেও সাহায্য করা যায়। বর্তমানে আমরা মেয়েদেরকে কেক তৈরীর প্রশিক্ষণ দিচ্ছি, যাতে করে সকলে স্বাবলম্বী হতে পারে। সবচেয়ে বড় অর্জন হলো আমি সুমাইয়া নিজের গায়ে হলুদের কেক নিজে তৈরী করেছি। যেটার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা যাবেনা।
আরও পড়ুন: মুরাদনগরে উন্নয়নের স্নিগ্ধ হাওয়া বঞ্চিত চুলরিয়া গ্রাম
কেক কর্ণারের ফারজানা অফা জনবাণীকে বলেন, শুরু থেকেই দেখতাম মানুষজন বেকারির ডালডা যুক্ত অস্বাস্থ্যকর কেক গুলো কিনছে। ভাবলাম শুরু করি স্বাস্থ্যকর উপায়ে কেক তৈরী। প্রথমে অর্ডার আসতো না, মনোবল হারিয়ে ফেলেছিলাম। পরিবার ও বন্ধুরা সাহস দিয়ে চাঙা করে রাখতো। ভালো মান বজায় রাখায় এখন উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন সংগঠনের কেক তৈরীর অর্ডার আসে।
স্থানীয় সচেতন মহল বলেন, আমাদের অনেক উঠতি শিক্ষার্থী বেকিং আইটেমের কাজ শুরু করছে, আমাদের উচিত অনুপ্রেরণা দেওয়া। কারণ ঘরে বসেই তারা কাজ করে টাকা রোজগার করতে পারছে। এই ধরনের ব্যবসায় নারীদের ঘরের বাহিরে গিয়ে সর্বসম্মুখে কর্মপরিচালনা করতে হয় না। সামন্য পরিমানে নারীদের উপার্জিত এই অর্থ পরিবারে কিছুটা হলেও গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
আরএক্স/