এই শীতে কম্বল জুটবে আমির হোসেনের?
ক্যাম্পাস প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৫:০০ অপরাহ্ন, ২৩শে জানুয়ারী ২০২৪
আল জুবায়ের: ঘড়ির কাটা প্রায় রাত ১টা ছুঁই ছুঁই। বাইরে কনকনে ঠান্ডা। সঙ্গে বইছে বাতাস। রাজধানীর রাস্তা প্রায় জনশূন্য বললেই চলে। রাস্তায় মাঝেমধ্যে চোখে পড়ে ২-১ টা প্রাইভেট কার এবং পণ্যবাহী ট্রাক। গিয়েছিলাম ঢাকা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে। ফেরার পথে চোখ গেল কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের অপরদিকের ফুটপাতের দিকে ষাটোর্ধ বয়সী এক বৃদ্ধ পুরুষের দিকে। সাদা চকচকে টাইলসের উপরে বসে আছে চাদর মুড়ি দিয়ে কান,নাক-মুখ ঢেকে , সাথে নগরীর আলোর ছটাক তাই দেখতে খুব একটা অসুবিধা হয় নি ,এগিয়ে গেলাম সামনে। একটু কাছে গিয়েই জানা গেল লোকটির নাম ইননাত মিয়া । বয়স ৬০ বছর। কয়েক দিন অপেক্ষা করছেন একটা কম্বলের জন্য। থাকেন ঢাকার হাজারিবাগে। বউ আছে কিন্তু পা ভাঙা। এক ছেলে, দুই মেয়ে। ছেলে বিয়ে করে নিজের মতো থাকেন আর মেয়েরা বিয়ে করে নিজের মতো থাকেন।সারারাত অপেক্ষা করে কম্বল না পেয়ে অনেক সময় খালি হাতেই ফিরতে হয় এই বৃদ্ধকে।
সোমবার (২২ জানুয়ারি) রাত ১২টা থেকে ১ টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত রাজধানীর টিএসসি,আজিমপুর,নিউমার্কেট নীলক্ষেত,সাইন্সল্যাব সহ আশেপাশের ফুটপাতে অন্তত ৮ জনের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের।
আরও পড়ুন: গরম কাপড়ের খোঁজে ফুটপাতে ভিড়
এসব এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, কয়েকদিন ধরে তীব্র শীতের কারণে অনেকেই রাতে ঘুমাতে পারছেন না। শীত নিবারণের সম্বল হিসেবে কয়েকজনের কাছে শুধু পাতলা কাপড় দেখা গেছে। যাদের কাছে কম্বল ছিল, সেগুলো অনেক পাতলা। হালকা শীতের জন্য এসব কম্বল উপযোগী হলেও রাজধানীতে গত ২-৭ দিন ধরে যে ঠান্ডা পড়েছে, তাতে এসব কম্বলে শীত নিবারণ হওয়ার কথা না। অনেকেই সারারাত বসে বসে কাটিয়ে দেন। ঘুম আসলে কেউ কেউ আবার বসেই ঘুমান। কারণ নিচ থেকেও ঠান্ডা লাগে।
একটু সামনে যেতেই জগন্নাথ হলের সামনের ফুটপাতে হালকা কম্বল গায়ে দিয়ে বসে আছে এক ব্যক্তি, থরথর করে কাঁপছে পুরো শরীর। ডাকলাম, কথা শুরু হলো নাম আমির হোসেন। দেশের বাড়ি চাঁদপুর।রঙ মিস্রির কাজ করতেন, এক দুর্ঘটনায় ডান পায়ে আঘাত পেয়ে ঠিকভাবে হাঁটতে পারেন না, কাজ করতেও পারেন না। ৪ বছর ধরেই ঢাকার অলি-গলি,ফুটপাতে কাটছে অসহায় জীবন-যাপন। স্রী মারা গেছে অনেক আগেই , আছে ৩ টা ছেলে। প্রশ্ন করে বসলাম, ছেলেরা কি খোঁজ নেয় নি কখনো? প্রশ্নের জবাবে আমির হোসেন বলেন,সব নিজেদের মতো, টাকা না থাকলে দুনিয়ায় কেউ খোঁজ নেয় না বাবা!
খাও কীভাবে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'মানুষের কাছে চেয়ে খাই। থাকার কোনো জায়গা নেই। কাজ করতে পারি না । কেউ কিছু খাবার দিলে খায় । আর খাবার না পেলে অনেক সময় না খেয়ে থাকতে হয়।
কয়টা কম্বল পেয়েছেন?প্রশ্নের জবাবে আমির হোসেন বলেন,"৩ ডা জুটছিল ন্যাশাখোররা এসে নিয়ে চলে যায় কি করমু কন আমি ঠিকভাবে হাঁটতে পারি না"যখন কম্বল দিতে আসে ঠিক ভাবে হাঁটতে না পারায় নিতে পারি আগেই সকলে নিয়ে নেয়।১০রাত বইস্যা আছি এড্যা কম্বলের জন্য, অনেক শীত লাগে।
যারা ফুটপাতে থাকেন, তাদের গল্পগুলো কমবেশি এমনই। কেউ সর্বস্ব হারিয়ে কেউবা আপনজন হারিয়ে ফুটপাতে বাস করছেন। যারা ফুটপাতে থাকছেন, তাদের অনেকেই খেয়ে না খেয়ে এভাবে দিন কাটাচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে তীব্র শীত যেন তাদের দুর্দশাকে আর কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের সামনের যাত্রী ছাউনিতে থাকা জব্বার আলী সারাদিন শহর ঘুরে প্লাস্টিকের বোতল সংগ্রহ করেন। এরপর সেগুলো বিক্রি করে সামান্য আয় হয় তার। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘গরীব মানুষ থাকার জায়গা নাই৷ রাস্তায় রাস্তায় ঘুমাই৷ কি করমু! ঘর ভাড়া নেওয়ার টাকা নাই৷ দিনের বেলা কিছু কাপড় গুছায়ে এক জায়গায় রাইখ্যা দেই৷ রাইত হইলেই এ্যামনে ঘুমায়ে যাই।’
আরও পড়ুন: শীতের দাপটে কাঁপছে দেশ, তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রিতে
শীত কারো জন্য উপভোগের বিষয় হলেও কারো জন্য নিদারুণ কষ্টের। বিশেষ করে নগরীর ছিন্নমূল মানুষ যারা দিন এনে দিন খায় তাদের কষ্টের শেষ নেই এই শীতে। গরম কাপড়ের অভাবে কষ্টেই রাত কাটাতে হয় এসব মানুষকে।
রাত গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে শীতের তীব্রতা। রাজধানীতে তীব্র শীতে অনেকেই খোলা আকাশের নিচে, যাত্রী ছাউনিতে, বড় দালানের দেওয়ালের পাশ ঘেঁষে ঘুমিয়ে রাত কাটান। এসব মানুষকে দেখার যেন কেউ নেই।
আরএক্স/