দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে গোলপাতার চাহিদা


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৯ অপরাহ্ন, ২রা ফেব্রুয়ারি ২০২৪


দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে গোলপাতার চাহিদা
ছবি: প্রতিনিধি

সুন্দরবনে বনজদ্রব্য আহরণ সংকুচিত, চাহিদা হ্রাসসহ নানা সংকটে খানিকটা অনাগ্রহের মধ্যেই পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জ'র একটি কুপে গোলপাতা সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন বাওয়ালীরা। তবে বন বিভাগের কঠোর নিরাপত্তা ও কড়াকড়ির মধ্যে নির্বিঘ্নে মৌসুমের প্রথম ট্রিপের গোলপাতা কাটতে পেরে খুশি বাওয়ালীরা।


বনবিভাগের বিভিন্ন সুত্র ও বাওয়ালীরা জানায়, ক্রমশ গোলপাতার চাহিদা হ্রাস ও সুন্দরবন থেকে বনজদ্রব্য আহরণ সঙ্কুচিত হওয়ায় সুন্দরবনে গোলপাতা সংগ্রহে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন বাওয়ালীরা। আহরণের ভরা মৌসুমেও এবার বাওয়ালীদের বিএলসি (অনুমতি) দেওয়ার ক্ষেত্রে কঠোর ছিল বন বিভাগ। সকল আইন মেনেই সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের শ্যালা কূপ (জোন) থেকে ব্যবসায়ীরা পারমিট গ্রহণ করে গোলপাতা আহরণে সুন্দরবন অভ্যন্তরে প্রবেশ করেছেন বাওয়ালী ও এর উপর নির্ভরশীল শ্রমজীবীরা। যদিও বনের উপর চাপ কমাতে বনজদ্রব্য আহরণ সঙ্কুচিত করার সিদ্ধান্ত আগেই নিয়েছে বন বিভাগ।


আরও পড়ুন: সুন্দরবনে গোলপাতা আহরণ মৌসুম শুরু


বাওয়ালীরা সুন্দরবনে যাতে নির্বিঘ্নে গোলপাতা কাটতে পারে তার জন্য বনবিভাগ থেকে যেমন নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা তেমনি এ গোলপাতা আহরণে রয়েছে শর্তও। গোলপাতা আহরণের সময় বনের অন্য কোনো ধরনের গাছপালা কাটা যাবে না। কোনো বাওয়ালী যদি গোলপাতার পাশাপাশি অন্য প্রজাতির গাছ কাটেন কিংবা বনের ক্ষতি করেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে বন আইনে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


মহাজন সুলতান মাহমুদ জানান, গোলপাতা আহরণে বন কর্মকর্তারা আমাদের যথেষ্ট সহোযোগিতা করছে। সরকারী রাজস্বের বাইরে বনবিভাগের কোন চাহিদা না থাকলেও গোলপাতার চাহিদা কমে যাওয়ায় বিক্রি করতে আমাদের হিমসিম খেতে হয়। এ ব্যবসা বাব-দাদা চৌদ্দ পুরুষ আমল থেকেই চলে আসছে তাই ছাড়তে পারি না। কিন্তু এ ব্যবসাটা তেমন লাভবান না।


মহাজন গফফার হাওলাদার বলেন, সরকারী রাজস্বের বাইরে বনবিভাগের কোন চাহিদা না থাকলেও গত বছরের তুলনায় নৌকা অনেক কমে গেছে কেননা গোলপাতায় ব্যবসা এখন অনেক কম। নৌকার খরচ না ও ওঠায় অনেক নৌকা কমে গেছে।


সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের (মোংলা) স্টেশন অফিসার শেখ মো. আনিসুর রহমান বলেন, সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জে দুটি গোলপাতার কূপ রয়েছে। একটি হলো শ্যালা গোলপাতা কূপ অপরটি চাঁদপাই গোলপাতা কূপ। এসব কূপে বাওয়ালীরা যাতে নির্বিঘ্নে গোলপাতা কাটতে পারেন তার জন্য বন বিভাগের পক্ষ থেকে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। তাছাড়া নিয়মিত কুপের পক্ষে থেকে তদারকিও করা হচ্ছে। এ মৌসুমে শ্যালা ও চাঁদপাই কূপ থেকে ৭ হাজার মেট্রিক টন গোলপাতা আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। তবে নানা সংকটে ব্যবসায়ীদের মধ্যে আগ্রহ না থাকায় চলতি মৌসুমে গোলপাতা আহরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার আশংকাও করেন তিনি।


আরও পড়ুন: সুন্দরবনে চলছে ঐতিহ্যবাহী তিন দিনব্যাপী রাস পূর্ণিমা পূজা ও পুণ্যস্নান


তিনি আরও বলেন, এবার মৌসুমে প্রতি কুইন্টাল গোলপাতা আহরণে ভ্যাট ব্যতিত রাজস্ব নেওয়া হচ্ছে ৬০টাকা। তবে দিনদিন গোলপাতার ব্যবহার কমে আসায় কূপ থেকে গোলপাতা আহরণের পরিমাণ কমে আসছে। আগে যেখানে ১৫০-২০০ নৌকা হতো সে তুলনায় এবার প্রচুর কম নৌকা গোলপাতা আহরণে যাচ্ছে। নৌকার সংখ্যা কমে যাওয়ায় বাওয়ালীর সংখ্যাও কমে গেছে। এবারও লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কম গোলপাতা আহরণ হবে বলেও জানান বনবিভাগের এ কর্মকর্তা।


সর্বশেষ বনবিভাগ ও বাওয়ালীদের পক্ষে জানানো হয়েছে, ইতোমধ্যে বাওয়ালীরা সুন্দরবনে প্রবেশ করে নিয়ম মাফিক গোলপাতা আহরণে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। এ গোলপাতা আহরণ চলবে আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত।


আরএক্স/