নিজ দেশে ফিরে যেতে আরাকান আর্মির দিকে তাকিয়ে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:১১ অপরাহ্ন, ৩রা ফেব্রুয়ারি ২০২৪
রাখাইনে চলমান সংঘাতের ফলে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের জন্য সীমান্তের ওপারে অবস্থান নিয়েছে মিয়ানমারের অনেক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। উখিয়া-টেকনাফে আশ্রিত রোহিঙ্গারা তাদের এদেশে ঢোকার ব্যাপারে বিরোধিতা করছে। তাদের ভাষ্য, নিজ দেশ ছেড়ে এবার আর কোনো ভুল করা যাবে না।
শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) ক্যাম্পে আয়োজিত কনভেনশনে রোহিঙ্গা নেতারা জানান, আরাকান আর্মি তাদের অবস্থান স্পষ্ট করলে এখনই তারা মিয়ানমারে ফিরে যাবেন।
দেশটির অভ্যন্তরে জান্তা বাহিনীর সাথে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির তুমুল সংঘর্ষ চলমান। ইতোমধ্যে রাখাইন রাজ্যের বেশ কিছু অঞ্চল দখল করেছে এই সংগঠনটি। ফলে বুচিডংসহ রাখাইনের বিভিন্ন এলাকা থেকে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের জন্য সীমান্তে ওপারে অবস্থান করছে।
আরও পড়ুন: বায়ুদূষণের তালিকায় শীর্ষ অবস্থানে ঢাকা
এদিন উখিয়া ক্যাম্পের কয়েকজন রোহিঙ্গা বলেন, রাখাইনে দুই পক্ষের হামলায় রোহিঙ্গারা প্রতিনিয়ত নিঃশেষ হচ্ছেন। তাই তারা সবাই বাংলাদেশে আসার জন্য নিয়মিত যোগাযোগ করছেন এখানকার রোহিঙ্গাদের সাথে।
রোহিঙ্গা নেতারা আহ্বান জানিয়েছেন এবার নিপীড়নের শিকার হলেও কোনো অবস্থাতেই নিজের জন্মভূমি না ছাড়ার। তারা জানান, ২০১৭ সালে বাংলাদেশে এসে বড় ভুল করেছেন তারা। তবে সেটা দ্বিতীয়বার যেন অন্যরা না করেন। মিয়ানমারে এখন জান্তা সংগঠন দুর্বল হয়ে পড়েছে। ফলে এখনই নিজ দেশে ফিরে যাওয়া বেশ জরুরি।
এ সময় এক রোহিঙ্গা বলেন, আমরা আর কোনও রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে প্রবেশের অনুমতি দিতে চাই না। বরং এখনই সময় আমাদের সবাইকে সেখানে চলে যাওয়ার। এসময়ে যেতে পারলে আমাদের জন্য খুবই ভালো হয়। সেই সুরে সুর মিলিয়ে অন্য এক রোহিঙ্গা বলেন, কষ্ট পেলেও, নির্যাতনের শিকার হলেও মিয়ানমারেই থাকা দরকার ওপারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর। তারা সেখানে থাকতে পারলে পরে আমরাও ফিরে যেতে পারবো।
আরও পড়ুন: খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে নিয়মিত নজরদারির রাষ্ট্রপতির আহ্বান
এফডিএমএন রিপ্রেজেন্টেটিভ কমিটি মিয়ানমারে দ্রুত ফিরে যাওয়ার জন্য এদিন সকালে উখিয়ার লম্বাশিয়া ক্যাম্পে সম্মেলন করেন। এতে নির্বাচিত বিভিন্ন ক্যাম্পের ৪ হাজার প্রতিনিধি উপস্থিত হন। আরাকান আর্মিকে উদ্দেশ্য করে কমিটির নেতা মাস্টার ছৈয়দ উল্লাহ বলেন, তাদের সংগঠনটি রোহিঙ্গাদের অবস্থান স্পষ্ট করলে তারা এখনই সেখানে চলে যেতে প্রস্তুত আছে।
তিনি আরও বলেন, ‘মিয়ানমারের আরকান রাজ্যে আমাদের সবার আত্মীয়স্বজন, মা-বাবা, ভাই-বোন আছেন। তাদের ওপর সবসময় অনেক নির্যাতন হচ্ছে। তাদের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে, তারা যেন কোনদিনও নিজদেশ ছেড়ে চলে না আসে। জাতিসংঘের সংস্থাগুলোকে প্রত্যাবাসন ইস্যুতে রোহিঙ্গাদের সাথে আলাপ করে বিভিন্ন উদ্যোগ নিতে হবে। অন্যথায় একজোট হয়ে আমরা সবাই মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তন করব।’
এদিন ছলিম উল্লাহ নামে এক রোহিঙ্গা বলেন, ‘আমাদের নিজেদের দেশ আছে। মিয়ানমারের আরকান রাজ্য আমাদের দেশ। আমরা সবাই নিজের দেশে ফিরে যেতে চাই।’
আরও পড়ুন: ছুটির দিনে বইমেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ভিড়
এদিকে শরণার্থী কমিশন বলছে, সরকার নতুন করে যেকোনো অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে আছে। শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসান কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, আরও রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢোকার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে আমাদের বর্ডার গার্ড (বিজিবি) অত্যন্ত সতর্ক অবস্থানে আছেন।
বিজিবির টেকনাফ ব্যাটালিয়নের কমান্ডার লে. কর্নেল মহিউদ্দীন আহমেদ জানান, বিজিবি রোহিঙ্গাদের সম্ভাব্য প্রবেশ নিয়ে সতর্ক অবস্থানে আছে। সীমান্ত এলাকাতে কঠোর নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। একজন রোহিঙ্গাকেও আর প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না বাংলাদেশে। আমরা সব সময়ই সজাগ অবস্থানে আছি।
এমএল/