গণতন্ত্রের জন্যই বাংলাদেশের জন্ম: পররাষ্ট্রমন্ত্রী


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


গণতন্ত্রের জন্যই বাংলাদেশের জন্ম: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

সাইফুর তালুকদার, সিলেট: র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) কার্যক্রমকে তুলে ধরে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনকে বাংলাদেশ চিঠি দিয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের অভিজ্ঞতা অনেক পুরনো। আর গণতন্ত্রের জন্যই বাংলাদেশের জন্ম । বাংলাদেশের জন্মই হয়েছে গণতন্ত্র আর মানবাধিকারের জন্য। এগুলো আমাদের রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি। 

যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক গুম-খুনের ঘটনা থাকলেও এটাকে ইন দ্য লাইন অফ ডিউটি হিসেবেই ধরা হয়। কিন্তু বাংলাদেশের অল্প কিছু ঘটনা নিয়ে দোষারোপ শুরু হয়েছে, যা তাদের হাসির খোরাক করেছে। নিষেধাজ্ঞার খবর পাওয়ার পর মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের সংশ্লিষ্ট কর্তার সঙ্গে বিস্তারিত কথা হয়েছে। তিনি আমাকে আশ্বস্ত করেছেন। ওই কর্মকর্তা বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের বিষয়ে কথা বলেছেন। তখন আমি উনাকে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ঐতিহ্য এবং মানবাধিকারের বিষয়ে জানিয়েছি, বলেছি গণতন্ত্র হচ্ছে বাংলাদেশের মূল স্তম্ভ।

গতকাল রোববার দুপুরে সিলেট নগরীর কুমার পাড়ায় এনজিও সংস্থা জমজম এর প্রধান কার্যালয় উদ্বোধনকালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন।

তিনি বলেন, ফোনে কথা বলার সময় বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে ওঠা হত্যা ও গুমের অভিযোগের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। আমি তাদের বলেছি আমেরিকার তুলনায় আমাদের দেশে হত্যা ও গুমের ঘটনা খুবই কম। আলোচনার পর এসব প্রসঙ্গে বিস্তারিত উল্লেখ করে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠি পাঠানো হলেও ক্রিসমাস ডের বন্ধের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এখনও কোনও উত্তর আসেনি। আশা করছি তারা উত্তর দেবে। গত ৩১ ডিসেম্বর মোমেনের স্বাক্ষরিত এই চিঠি দূতাবাসের মাধ্যমে প্রেরণ করা হয়।

এই চিঠির বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মোমেন বলেন, এর আগে ব্লিঙ্কেনের সাথে আমার ফোনালাপ হয়েছে। তখন যে কথা হয়েছিলো সেগুলোই চিঠিতে লিখেছি। তিনি আমাদের দেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিয়ে তার সরকারের উদ্বেগের কথা জানিয়েছিলেন।

চিঠিতে আমি লিখেছি, আমাদের এখানে গণতন্ত্র চর্চা আজকের না। যখন আমেরিকা আবিষ্কৃত হয়নি, সেই ছয় শতকেও এই অঞ্চলে গণতন্ত্র ছিল, যদুকে জনগণ ম্যান্ডেট দিয়ে নির্বাচিত করেছিলো। ফলে গণতন্ত্রের অভিজ্ঞতা আমাদের অনেক পুরনো। আর আমাদের দেশের জন্মই তো গণতন্ত্রের জন্য।

মন্ত্রী বলেন, র‍্যাবের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের যে অভিযোগ তা অমূলক। বাংলাদেশে ১০ বছরে ৬০০ জন নিখোঁজের অভিযোগ তোলা হলেও আমেরিকাতে প্রতি বছর লক্ষাধিক মানুষ নিখোঁজ  হচ্ছে এবং পুলিশি কারণে হাজারো মানুষ মারা  যাচ্ছে। এসব নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলছে না। তাদের গুলোকে বলা হয় লাইন অব ডিউটি। অথচ আমাদের এখানকার সামান্য কিছু ঘটনা নিয়ে অনেক কথা হয়। বলা হয় 'এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং'। এসব হাসির খোরাক।

ফলে আমার মনে হয় তাদের নিষেধাজ্ঞা সঠিক হয়নি। এটি পুনর্বিবেচনার সুযোগ আছে। চিঠিতে এ কথাই লিখেছি। র‍্যাব বাংলাদেশে মাদক, সন্ত্রাস রোধে সফলতা দেখিয়েছে বলেও মন্তব্য করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

চিঠিতে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদকসহ আন্তঃ রাষ্ট্রীয় অপরাধ দমনে বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগ ও কর্মকাণ্ডের বিস্তারিত তুলে ধরেছেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ বছরের সম্পর্ক। সব কিছুর আলোকে এই নিষেধাজ্ঞা  তুলে নেবার জন্য  লিখিত ভাবে অনুরোধ জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

তবে এখনো চিঠির কোনো জবাব পাওয়া যায়নি জানিয়ে মোমেন বলেন, তারা তো এখন ক্রিসমাসের ছুটিতে আছেন। চিঠি এখনও তার হাতে পৌঁছেছে কি বা তাও জানি না।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগ তুলে র‍্যাবের বর্তমান-সাবেক ৭ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় বাইডেন প্রশাসন। এটি বাংলাদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নিষেধাজ্ঞা, যা সরকারকে বেশ চাপে ফেলেছে বলে মনে করছেন দেশি-বিদেশি বিশ্লেষকরা। এ নিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও কূটনৈতিক অঙ্গনেও উত্তাপ তৈরি হয়েছে।