৩০ ব্যাংকের অনূকুলে ১১ হাজার কোটি টাকার বন্ড ছাড়ছে সরকার
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৫৫ অপরাহ্ন, ৯ই ফেব্রুয়ারি ২০২৪
সরকার সংকটের কারণে বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর পাওনা প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি পরিশোধ করতে পারছিল না। শেষ পর্যন্ত বিশেষ বন্ড ছেড়ে সেই পাওনা টাকা পরিশোধ করা হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে সরকার গত তিন সপ্তাহে চার দফায় মোট ১১ হাজার ২৫৯ কোটি টাকার বিশেষ বন্ড ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর পাওনা পরিশোধে বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার বিদ্যুৎ ভবনে ২৪টি ব্যাংকের অনুকূলে ৫ হাজার ৬৬৫ কোটি টাকার বন্ড ছাড়ার জন্য সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর হয়েছে। ব্যাংক, পাওনাদার বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী কোম্পানি, বিদ্যুৎ বিভাগ এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের মধ্যে এই এমওইউ স্বাক্ষর হয়। ইতোপূর্বে গত মাসে ৬ ব্যাংকের অনুকূলে একই রকম এমওইউর পর তিন দফায় ছাড়া হয় ৫ হাজার ৫৯৪ কোটি ৫০ লাখ টাকার বন্ড। সব মিলিয়ে ৩০টি ব্যাংকের পাওনা পরিশোধে এমওইউ স্বাক্ষর করা হলো।
আরও পড়ুন: চাল-তেল-চিনি-খেজুরে কর ছাড় দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি
জানা গেছে, আগে ছাড়া বন্ডের বিপরীতে ইসলামী ব্যাংকসহ বেশ কয়েকটি ব্যাংক টাকা ঋণও নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের থেকে। বৃহস্পতিবার এমওইউর পর অর্থ বিভাগ এখন বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি পাঠাবে। সে অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকগুলোর অনুকূলে বন্ড ছাড়বে।
সূত্র জানায়, সরকার বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে ভর্তুকির টাকা দিতে পারছিল না। আর কেন্দ্রগুলোও ব্যাংকের পাওনা শোধ করতে পারছিল না কোনোভাবেই। কোনো কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্র অনেকটা ঋণখেলাপিও হয়ে পড়ছিল। সরকার এখন তাদের পক্ষেই দায়িত্ব নিয়েছে। পুরো পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্যই বিশেষ এই বন্ড ছাড়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ বন্ডের কুপন রেট বা সুদের হার হচ্ছে ৮ শতাংশ। এ হার বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারণ করা রেপো রেটের সমান বলে জানা গেছে। তবে ভবিষ্যতে রেপো রেট বেড়ে গেলে এই বন্ডের সুদের হারও বাড়বে, আর রেপো রেট কমলে বন্ডের সুদও কমে যাবে।
আরও পড়ুন: আগামী সপ্তাহে তেল-চিনির নতুন দাম নির্ধারণ
বন্ডগুলো ছাড়ার ফলে কোনো ব্যাংক আর সংশ্লিষ্ট দেনাদার বিদ্যুৎ কোম্পানির নিকট টাকা চাইতে পারবে না। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাংকের দায় এখন সমন্বয় হয়ে যাবে। আর ব্যাংকগুলো সুদ পাবে প্রত্যেক ছয় মাস পরপর। মেয়াদ শেষে সুদসহ ব্যাংকের দেনা-পাওনা পরিশোধ করবে সরকার। সরকার সেই সময় বন্ডগুলোও ফেরত নেবে। সাধারণত এ বন্ডের মেয়াদ ১৫ থেকে ২০ বছর হলেও বিশেষ বন্ডের ক্ষেত্রে তা সর্বোচ্চ ১০ বছর পর্যন্ত হয়ে থাকে।
নগদ টাকার পরিবর্তে বিশেষ বন্ড ছেড়ে সংকট মোকাবিলার উদ্যোগের ফলে কোম্পানিগুলোর কী লাভ হবে, আর এসব ব্যাংকগুলোই–বা কীভাবে সুবিধাভোগী হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এখন এটা সবার জন্যই বেশ লাভজনক হয়েছে। বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর লাভ, তাদের দায়টা সমন্বয় হয়ে যাচ্ছে এবং ব্যবসা করতে অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে না। আর ব্যাংকের সুবিধাগুলো হচ্ছে, তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের নিকটে বন্ড রেখে টাকা নিতে পারবে এবং অন্য ব্যাংকের কাছে এগুলো বিক্রিও করতে পারবে। এই বন্ডের মাধ্যমে এই ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে তাদের নগদ জমা (সিআরআর) ও বিধিবদ্ধ জমা (এসএলআর) রাখার বাধ্যবাধকতা সহজেই পূরণ করতে পারবে। অন্যদিকে সরকারের সুবিধা হচ্ছে, আপাতত নগদ অর্থ পরিশোধ করতে হলো না।
বিদ্যুৎ খাতের বাইরে এর আগে বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) সোনালী ব্যাংকের অনুকূলে ২ হাজার ৫৫৭ কোটি টাকা এবং আইএফআইসি ব্যাংকের অনুকূলে ৪৫৯ কোটি টাকার বন্ড ছাড়ার ব্যাপারে বহুপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়।
এমএল/