ভেড়ামারায় কর্মকার পরিবারের মানবেতর জীবন যাপন
উপজেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৫:১৯ পিএম, ১০ই ফেব্রুয়ারি ২০২৪

প্রাচীনকাল থেকে লোহাকে কয়লার আগুনে পুড়িয়ে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে কামার সম্প্রদায়ের লোকেরা তৈরী করে আসছে বিভিন্ন ধরনের জিনিস-পত্র। কিন্তু কালের বিবর্তনে লোহা শিল্পের প্রয়োজনীয় উপকরণের দ্রব্য মূল্যবৃদ্ধি, আধুনিক চাষাবাদ ও ক্রেতা স্বল্পতার কারণে কক্সবাজারের পেকুয়ায় এ সম্প্রদায়ের শতাধিক পরিবার মানবেতর জীবন যাপন করছে।
ভেড়ামারার কর্মকাররা বলছেন, লোহা শিল্পের দ্রব্য মূল্যবৃদ্ধি, আধুনিক চাষাবাদ, ক্রেতা সংকট ও দিন দিন নিত্যপন্য সামগ্রীর ক্রয় মূল্য বৃদ্ধি, ছেলে মেয়েদের পড়াশোনা এবং সাংসারিক ঘানি টানতে চরম বিপাকে তারা। তাদের দাবি, সরকারি সাহায্য সহযোগিতা, ব্যাংক বা এনজিও থেকে ঋণ পাওয়া গেলে তাদের এই পেশাকে টিকিয়ে রেখে সুখে- শান্তিতে জীবন যাপন করতে পারবেন।
আরও পড়ুন: আলমডাঙ্গায় স্বাস্থ্য কর্মকর্তার অনুমোদন বিহীন ক্লিনিক বন্ধ ঘোষণা
তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, ক্ষুদ্রশিল্পের আওতায় থাকা কামারদের ক্ষুদ্র কারখানায় হাতুড়ি পেটানোর টুং টাং শব্দ আর হাপর দিয়ে কয়লার আগুনকে উস্কে তাতে লোহা গরম করে পিটিয়ে-পিটিয়ে বিভিন্ন আকারের লোহার জিনিসপত্র তৈরি করে আসছে। আদি যুগ থেকে এগুলোর ব্যবহার বেশি থাকলেও কালের পরিবর্তনে লোকজন এখন এসব লোহার তৈরি পণ্য তেমন ব্যবহার করতে আগ্রহী নয়। যার ফলে ক্রেতার সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, ভেড়ামারা বাজার, ধরমপুর বাজার, কুচিয়ামোড়া, বাহিরচর মুচিপাড়া, বার মাইল, জুনিয়াদহ বাজারে শতাধিক কর্মকারদের কারখানা ছিল। এ সব কারখানা থেকে তৈরি কৃত বিভিন্ন প্রকারের জিনিসপত্র গুলো দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলায় পাইকারী ব্যবসায়ীরা নিয়ে যেত। সেই সময়ে তাদের ব্যবসা ছিল জমজমাট। লৌহজাত শিল্পের এসব সংকটের কারণে পেশাদার কর্মকাররা তাদের বাপ-দাদার ঐতিহ্যবাহী পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় যোগ দিচ্ছেন। আর যারা এই পেশা ছাড়া কোনো কাজ পারে না তারাই এখনো এপেশায় জড়িত আছেন।
আরও পড়ুন: ‘কুষ্টি বন্দর’ বা ‘ছাই দ্বীপ’ থেকে কুষ্টিয়া
ধরমপুর বাজারে কর্মকার সনজিত (৪৮) বলেন, আমি ১৮ বছর ধরে এ পেশায় কর্মরত আছি। আমাদের তৈরিকৃত জিনিস পত্রগুলো দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলায় পাইকারেরা নিয়ে যেত কিন্তু এখন পাইকারী তো দূরের কথা খুচরাও বিক্রি করা বেশ কষ্ট সাধ্য। বউ বাচ্ছা নিয়ে অনেক কষ্টে জীবনযাপন করছি। আমাদের এই পেশা আজ বিলুপ্তির পথে। সরকার যদি একটু সুদৃষ্টি বা সহযোগিতা করলে আমাদের বাপ দাদার এই পেশাটা ধরে রাখতে পারতাম। বর্তমানে আমাদের তৈরি দা, বঁটি, খুন্তি, কোদাল, কাস্তে, বেলচা, কুড়াল, কাটারি, নিরানি, কাঁচি ইত্যাদি। এসব জিনিস বিক্রি করে দৈনিক ৪শ-৫শ টাকা করে মাঝে মধ্যে আরো কম ইনকাম হয়। এ টাকা দিয়ে পরিবার নিয়ে কোনরকম দিন পার করছি। কুরবানির ও রমজানে ঈদে সামনে আসলে কিছু কাজ হয় এবং ধান কাটার সময় কিছু কাজ হয়। তাছাড়া কাজ তেমন হয় না। সারা বছর অনেক কষ্ট করে চলতে হয়।
এমএল/