‘কুষ্টি বন্দর’ বা ‘ছাই দ্বীপ’ থেকে কুষ্টিয়া


Janobani

মো. রুবেল হোসেন

প্রকাশ: ০৭:২৬ অপরাহ্ন, ৮ই ফেব্রুয়ারি ২০২৪


‘কুষ্টি বন্দর’ বা ‘ছাই দ্বীপ’ থেকে কুষ্টিয়া
বিজয় চত্ত্বর, কুষ্টিয়া - ছবি: সংগৃহীত

সাংস্কৃতিক রাজধানী খ্যাত কুষ্টিয়া। এই জেলার নামকরণের পিছনে রয়েছে লোকমুখে চলে আসা নানা লোককথা, রহস্য। এ জেলার উত্তর-পশ্চিম ও উত্তরে পদ্মা অপর পারে রাজশাহী, নাটোর ও পাবনা, দক্ষিণে ঝিনাইদহ, পূর্বে রাজবাড়ী ও পশ্চিমে মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা ও ভারতের মুর্শিবাদ জেলা। ভারতের সাথে কুষ্টিয়ার সীমানা রয়েছে ৪৬ দশমিক ৬৯ কিলোমিটার। 


কুষ্টিয়া তার বুকে লালন করেছে কতশত সাধক, কবি-সাহিত্যিক ।রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত কুষ্টিয়ার শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বাংলাদেশকে করেছে সমৃদ্ধ। 


‘বিষাদ সিন্ধু’র রচয়িতা মীর মশাররফ হোসেন ও বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের তীর্থভূমি কুষ্টিয়া। এছাড়া গীতিকার, সুরকার ও কবি আজিজুর রহমানের বাস্তুভিটা ও করব, হযরত নফর শাহ (র.), আশেক কবি হযরত দাদ আলী (র.), হযরত সোনাবন্ধু শাহ (র.), হযরত মনসুর শাহ উদিবারী (র.), লেখিকা মাহমুদা খাতুন, ‘এই পদ্মা এই মেঘনা’ গানের রচয়িতা আবু জাফর, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজুর রহমান।


আরও পড়ুন: নাম ধরে ডাক দিলেই সামনে উপস্থিত হয়ে যায় সাপের দল



এ জনপদের সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রতিষ্ঠাতা ও‘গ্রামবার্তা প্রবেশিকা’র সম্পাদক কাঙাল হরিনাথ মজুমদার, নীল বিদ্রোহের নেত্রী প্যারী সুন্দরী, স্বদেশী আন্দোলনের নেতা বাঘা যতিন, বিচারপতি রাধা বিনোদ পাল, ড. কাজী মোতাহার হোসেন, কাজী আরেফ আহমেদ, বিচারপতি স্যার মন্মথনাথ মুখোপাধ্যায়,স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) প্রতিষ্ঠাতা প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম সিদ্দিকী, সংগীতশিল্পী আবদুল জব্বার, অভিনেতা মিজু আহমেদ, আহমেদ শরীফসহ অসংখ্য গুণীজনের পীঠস্থান কুষ্টিয়াকে সমৃদ্ধ করেছে। 


কুষ্টিয়ার নামকরণ নিয়ে রয়েছে নানা লোকগাথা। এই জনপদে এক সময় প্রচুর ‘কুষ্টা’ (পাট) চাষ হতো বলে ‘কুষ্টা থেকে ‘কুষ্টিয়া’ নামকরণ হয়েছে। হেমিলটনের গেজেটিয়ারে উল্লেখ রয়েছে, স্থানীয় জনগণ একে ‘কুষ্টা’ বলে ডাকত, পরে কালের বিবর্তনে নাম পরিবর্তন হয়ে হয়েছে ‘কুষ্টিয়া’। 


অনেকে ফারসি শব্দ ‘কুশতহ’ যার অর্থ ‘ছাই দ্বীপ’ থেকে কুষ্টিয়ার নামকরণ হয়েছে বলে মনে করেন। আবার সম্রাট শাহজাহানের সময় ‘কুষ্টি বন্দর’কে কেন্দ্র করে ‘কুষ্টিয়া’ শহরের উৎপত্তি হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।


আরও পড়ুন: ‘মৃত’ ব্যক্তিকে জীবিত উদ্ধার করে আবার বিয়ে দেওয়া হয়



১৭২৫ সালে কুষ্টিয়া নাটোর জমিদারের অধীনে ছিল। পরে এর পৃথক পরিচিতি আসে কাণ্ডানগর পরগণার রাজশাহী ফৌজদারির সিভিল প্রশাসনের অন্তর্ভুক্তিতে। 


ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৭৭৬ সালে কুষ্টিয়াকে যশোরের অন্তর্ভুক্ত করে। কিন্তু ১৮২৮ সালে কুষ্টিয়া পাবনা জেলার আওতাধীন হয়। এরপর ১৮৬১ সালে নীল বিদ্রোহের কারণে কুষ্টিয়া মহকুমা প্রতিষ্ঠা লাভ করে। 


১৮৭১ সালে কুমারখালী ও খোকসা থানা নিয়ে কুষ্টিয়া মহকুমা নদীয়ার অন্তর্গত হয়। ভারত উপমহাদেশ বিভক্তির আগে কুষ্টিয়া নদীয়া জেলার আওতাধীন মহকুমা ছিল। 


১৯৪৭ সালে কুষ্টিয়া জেলার অভ্যুদয় ঘটে। তখন তিনটি মহকুমা নিয়ে গঠিত ছিল এ জেলা। এগুলো হলো কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর। ১৯৮৪ সালে চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরকে পৃথক জেলা ঘোষণা করে সরকার। কুষ্টিয়া মহকুমার দৌলতপুর, ভেড়ামারা, মিরপুর, কুষ্টিয়া সদর, কুমারখালি ও খোকসা থানা নিয়ে এ জেলা গঠন হয়।


জেবি/এসবি