জাবিতে ছাত্রলীগের সিট মন্ত্রীরা ঊনিশটি হল নিয়ন্ত্রণ করছে
ক্যাম্পাস প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৩:২৫ অপরাহ্ন, ১১ই ফেব্রুয়ারি ২০২৪
সজীবুর রহমান: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক শামছুল আলম বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এখন এমন অবস্থায় পরিণত হয়েছে যে ছাত্রলীগের সিট মন্ত্রীরা ঊনিশটি হল নিয়ন্ত্রণ করছে। এই সিট মন্ত্রীদের কারণেই মাদকদ্রব্য থেকে শুরু করে সকল ধরনের অপকর্ম চলছে। জাহাঙ্গীরনগরে ক্ষমতাসীনদের ছাত্র সংগঠন অবস্থান করছে। তাদের বেশিরভাগেরই ছাত্রত্ব নেই। তারা কীভাবে হলে অবস্থান করে! প্রশাসন কী করছে? কেন জাহাঙ্গীরনগরের ইতিহাসে সিট সংকট চালু হলো, গণরুম কালচার শুরু হলো? একটাই কারণ প্রশাসনের ব্যর্থতা। বিরাট সাইজের প্রক্টরিয়াল বডি রয়েছে। তিনটি গাড়ি ব্যবহার করে কিন্তু তারা প্রতিটি হলের খোঁজ নিতে পারেনা। পাঁচ কার্যদিবস পার হলো, এখনো প্রশাসন কোনো ছাত্রকে বের করতে পারেনি।
রবিবার (১১ জানুয়ারি) বেলা ১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সংলগ্ন সড়কে সম্প্রতি গণধর্ষণের ঘটনায় নিপীড়নের সাথে জড়িতদের বিচার দাবিতে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচিতে এ কথা বলে তিনি।
আরও পড়ুন: ছাত্রত্ব শেষ হওয়ার পরও যারা হলে থাকে তাদের লজ্জিত হওয়া উচিত
দর্শন বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান বলেন, র্যাব বলেছে জাবি প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছেন, ইউজিসি চেয়ারম্যান বলেছেন জাবি প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছেন। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে জাবি উপাচার্য এবং প্রশাসনের দায়িত্ব কি শুধু বাসভবনে থাকা? আর উপাচার্য ভবনে উপাচার্য পদ উপভোগ করা নাকি? জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান জড়িত এখানে। যদি আপনি জাহাঙ্গীরনগরের অভিভাবক ও উপাচার্য হিসেবে মনে করেন আপনি ব্যর্থ হয়েছে তাহলে এটা স্বীকার করতে সমস্যা কোথায়? আমরা এখানে দাঁড়িয়েছি এটা কোনো দলের প্রোগ্রাম নয়, এটা বিশ্ববিদ্যালয় বাঁচাও আন্দোলন। জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের ব্যানারে দাঁড়িয়েছি বলে রাজনৈতিক বক্তব্য ভাবার কোনো কারণ নেই, পতাকাটা বাঁচানোর প্রশ্ন এসেছে। ১৯৯৮ সাল থেকে আমরা দেখেছি একটি বিশেষ রাজনৈতিক দল যখন ক্ষমতায় থাকে তাদের ছাত্র সংগঠনের ছত্রছায়ায় মেধাবী শিক্ষার্থীরা মাদকাসক্ত হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার করে এবং ক্ষমতায় থেকে ধর্ষক হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করতে চায়। আমরা জানি র্যাব এবং ইউজিসি অভিযোগ তুলেছে প্রশাসনের বিরুদ্ধে। আসুন দলমত নির্বিশেষে নিপীড়কের বিরুদ্ধে সবাই সোচ্চার হই।
গণিত বিভাগের অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ঠিক ২৫ বছর পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণের একই ঘটনা ঘটেছে এবং একই ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ দ্বারা এ ঘটনাটি সংগঠিত হয়েছে। নতুন করে ধর্ষণের সাথে নতুন করে যুক্ত হয়েছে মাদক। অসংখ্য শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঝরে গেছে মাদকের ভয়াল থাবায়। আবাসিক হলগুলোতে অবৈধ ছাত্ররা অবাধে থাকছে, চাঁদাবাজি হচ্ছে, মাদকের প্রসার হচ্ছে। উপাচার্য এগুলো জেনেও যদি না জানার ভান করেন তাহলে তিনি পদে থাকার অযোগ্য। বিশমাইল এলাকায় ছাত্রদল একটা স্লোগান দিলে তিন মিনিটের মধ্যে ছাত্রলীগের ছেলেপেলেরা দৌড়ানো শুরু করে। অথচ সাত-আট ঘণ্টা যাবত ধরে একটি গ্রাফিতি আকা হয়েছে, এটা তাদের চোখেই পড়েনি।
আরও পড়ুন: চোরাই বাইক বিক্রি করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়েছে জাবি ছাত্র
পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ’৯৮ এর আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমস্ত অনিয়মকে দূর করা হয়েছিল। পবিত্র এ জায়গায় আবার কেন এই অনৈতিক কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে, কারা এর জন্য দায়ী তা খুঁজে বের করতে হবে। হলগুলোতে অবাধে অছাত্ররা থাকছে। আমি যখন হাউজ টিউটর ও ওয়ার্ডেন ছিলাম তখন রুমগুলোতে গিয়ে গিয়ে খোঁজ নিয়েছি। কিন্তু বর্তমান শিক্ষকরা তা করছেন না। অবশ্যই হলগুলোতে একটি ডাটাবেজ তৈরি করা দরকার। কে কোন রুমে থাকে তার তথ্য হল প্রশাসনের কাছে থাকা প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে পাঁচদিনের সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল আজ তার শেষ দিন। উপাচার্যকে বলছি যদি প্রশাসনে থাকে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন, তাহলে আপনাকে স্যালুট করব। আর না পারলে এর দায়ভার আপনাকেই নিতে হবে।
এসময় ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক মাফরুহী সাত্ত্বারের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন, সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক নাসরীন সুলতানা, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক নূরুল ইসলাম, অধ্যাপক জামাল উদ্দিন প্রমুখ।
জেবি/এসবি