‘আরসার’ সেকেন্ড ইন কমান্ডসহ ৩ শীর্ষ সন্ত্রাসী গ্রেফতার


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০২:০২ অপরাহ্ন, ১৪ই ফেব্রুয়ারি ২০২৪


‘আরসার’ সেকেন্ড ইন কমান্ডসহ ৩ শীর্ষ সন্ত্রাসী গ্রেফতার
ছবি: প্রতিনিধি

কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে আরকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) সেকেন্ড ইন কমান্ড, আরসা প্রধানের দেহ রক্ষীসহ ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব ১৫। এসময় ২ টি বিদেশী অস্ত্র, একটি দেশীয় অস্ত্র ও ৪ রাউন্ড গুলিও উদ্ধার করা হয়েছে।


বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) মধ্যরাতে উখিয়ার ২০ নম্বর এক্সটেনশন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের একটি ঘর থেকে এদের গ্রেফতার করা হয়।


আরও পড়ুনমিয়ানমারের বিজিপির ৩৩০ সদস্যকে হস্তান্তর বৃহস্পতিবার


বৃহস্পতিবার দুপুরে র‌্যাব ১৫ এর কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কক্সবাজারস্থ র‌্যাব ১৫ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।


গ্রেফতারকৃতরা হলেন, উখিয়ার ৪ নম্বর ক্যাম্পের মো. নুরের ছেলে আবুল হাসিম (৩১), ১২ নম্বর ক্যাম্পের মৃত আলী আহমেদের ছেলে হোসেন জোহার প্রকাশ আলী জোহার (৩২) ও ৬ নম্বর ক্যাম্পের নুর আলমের ছেলে মো. আলম প্রকাশ শায়ের মুছা (৩৫)।


র‌্যাব জানিয়েছেন, গ্রেফতার আবুল হাসিম আরসার সেকেন্ড ইন কমান্ড, মো. আলম আরসা প্রধান আতাউল্লাহ জুনুনির দেহরক্ষী এবং আলী জোহার আরসার পরিবহন শাখার কমান্ডার। এদের সকলের বিরুদ্ধে হত্যা সহ বিভিন্ন মামলা রয়েছে।


সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব ১৫ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন জানান, রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগীতায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে, কয়েকজন আরসা সদস্য ২০ নম্বর এক্সটেনশন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের একটি ঘরে অবস্থান করছে। এ তথ্যের ভিত্তিতে বুধবার মধ্যরাতে র‌্যাব-১৫, কক্সবাজার এর একটি চৌকস আভিযানিক দল বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় র‌্যাবের উপস্থিতি বুঝতে পেরে দিক-বিদিক কৌশলে দ্রুত পালায়নের চেষ্টাকালে তিন আরসা সন্ত্রাসী গ্রেফতার করে অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করে।


তিনি বলেন, আবুল হাসিম ২০১৭ সালে বাংলাদেশে এসে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নে। ২০১৮ সালে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী সংগঠন আরসায় যোগদান করে। সে প্রথম দিকে নেট গ্রুপের সদস্য হিসেবে কাজ করতো। এরপর ২০২০-২২ পর্যন্ত ব্লক জিম্মাদারের দায়িত্বে ছিল। তার নেতৃত্বে ৪ নম্বর ক্যাম্প ও বর্ধিত অংশে আরসার সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য নতুন করে ঘাঁটি তৈরী করে। পরে আবুল হাসিম সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করে। সে আরসার নির্দেশনা মোতাবেক আরসার আধিপত্য বিস্তার জেন্য ক্যাম্পে সহিংসতা সৃষ্টি, মারামারি, প্রতিপক্ষ গ্রæপকে ক্যাম্প এলাকা থেকে বিতাড়িত করার জন্য দফায় দফায় সশস্ত্র হামলা, আরসার টার্গেটকৃত মাঝি, সাধারণ রোহিঙ্গা ও বিত্তশালী রোহিঙ্গাদের হত্যা ও অপহরণসহ নানাবিধ অপরাধমূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করতো। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে সন্ত্রাসী কার্যক্রম শেষে সে আত্মগোপনে চলে যেত। আবুল হাসিম ৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এরশাদ, ইমাম হোসেন ও সাব মাঝি সৈয়দ আলম হত্যা, ৩ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আব্দুল হামিদ, মো. কাসিম ও ইউনুস হত্যা এবং ১৭ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাছিম হত্যা সহ ৭ টি মামলা রয়েছে।


লে. কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন বলেন, হোসেন জোহার প্রকাশ আলী জোহার মিয়ানমারে থাকাকালীন আরসার সদস্য হিসেবে নিয়োজিত ছিল এবং ২০১৭ সালে বাংলাদেশে প্রবেশ করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থান করছে তাদের খুঁজে বের করে পুনরায় আরসায় ফেরত আনা ছিল তার মূল কাজ। ২০২০ সালের প্রথম হতে সে মৌলভী লাল মোহাম্মদ এবং মুফতি আতিক এর সহযোগী হিসেবে আরসার কাচারী বা আদালতে বিচার কাজ করতো। তখন আরসার কাচারীতে বিভিন্ন নির্যাতন ও জরিমানা আদায়ের মূল কাজটা করতো। ২০২২ সালে কোনারপাড়া ডিজিএফআই কর্মকর্তা হত্যাকান্ডের পর আরসার কমান্ডাররা মিায়ানমারের অভ্যন্তরে চলে গেলে সে আরসার পরিবহন শাখার কমান্ডার হিসেবে নিয়োগ পায়। তার উখিয়া থানায় ২টি মামলা রয়েছে।


আরও পড়ুন: ঘুমধুম সীমান্তে অবিস্ফোরিত ‘রকেট লঞ্চার’ আতংক


র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, মো. আলম প্রকাশ শায়ের মুছা ২০১৬ সালে মিয়ানমার থাকতেই আরসায় যোগদান করে। সে মিয়ানমারে প্রথমে আরসার পাহারাদার হিসেবে কাজ করতো এবং পরবর্তীতে আরসা নেতাদের এক স্থান হতে অন্য স্থানে গমনাগমনের ক্ষেত্রে তার মোটর সাইকেল যোগে পৌঁছে দিতো। পরে আতাউল্লাহ জুনুনির দেহরক্ষী হিসেবে কাজ করে। তার বিরুদ্ধে উখিয়া থানায় ৫টি মামলা রয়েছে।  


গ্রেফতার ৩ জনের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করে উখিয়া থানায় সোপর্দ করা হয়েছে জানিয়েছেন র‌্যাব অধিনায়ক বলেন, এক বছরে র‌্যাব-১৫ আরসার ১০১ জন শীর্ষ সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করেছে। উদ্ধার করেছে ৭টি বিদেশী পিস্তল, ৫২টি দেশীয় তৈরী অস্ত্র, ১৪০ রাউন্ড গুলি/কার্তুজ, ৬৭ রাউন্ড খালি খোসা, ৫০.২১ কেজি বিস্ফোরক, ২৮ পিস ককটেল, ০৪ পিস আইইডি, ১.৫ কেজি মার্কারী (পারদ)।


আরএক্স/