জাবিতে তৃতীয় দিনের মতো প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করে মৌন প্রতিবাদ


Janobani

ক্যাম্পাস প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১২:৫৪ অপরাহ্ন, ১৫ই ফেব্রুয়ারি ২০২৪


জাবিতে তৃতীয় দিনের মতো প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করে মৌন প্রতিবাদ
ছবি: জনবাণী

সজীবুর রহমান, জাবি প্রতিনিধি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) অভ্যন্তরে বহিরাগত নারী ধর্ষণের ঘটনায় ধর্ষক ও তার সহায়তাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা, নিপীড়কদের সহায়তাকারী প্রক্টর ও মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রভোস্টের অপরাধ তদন্ত করে সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাদেরকে তদন্ত চলাকালে প্রশাসনিক পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করাসহ পাঁচ দাবিতে নতুন প্রশাসনিক ভবন অবরোধ ও মৌন প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছে নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চ।


বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সকাল নয়টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়ে ভবনের ফটকের সামনে অবস্থান নেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এসময় দুই ঘন্টা প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করে রাখেন তারা। সকালে অফিসে যোগদান করতে আসা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এসময় ভবনের বাইরে অপেক্ষা করে থাকতে দেখা যায়। পরে বেলা ১১টায় অবরোধ তুলে নেন তারা।


শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বাকি দাবিগুলো হলো- নিপীড়ক শিক্ষক মাহমুদুর রহমানের বিচার নিষ্পত্তি করাসহ ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সময়ে নানাবিধ অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনা, নিপীড়কদের সহায়তাকারী প্রক্টর ও মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রভোস্টের অপরাধ তদন্ত করা এবং সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাদের তদন্ত চলাকালে প্রশাসনিক পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করা; মাদকের সিন্ডিকেট চিহ্নিত করে জড়িত ব্যক্তিদের ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।


কর্মসূচিতে ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার বলেন, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে পাঁচটি দাবি উত্থাপন করছি। কিন্তু এর সন্তোষজনক ও দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখতে পাইনি। প্রশাসনের এ নির্লিপ্ততা চোখে আঙুল দিয়ে ধরিয়ে দেয়ার জন্যই আমাদের মৌন অবরোধ। আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিবেকবান মানুষদের বিবেক জাগ্রত হবে। এ সমস্যা সমাধান না হলে আমরা আশংকা করছি, ভর্তি পরীক্ষা হয়তো ঠিকভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে না। প্রশাসন অনতিবিলম্বে এর সমাধান না করলে আমরা ভর্তি পরীক্ষার কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে বাধ্য হব।’


জানার্লিজম এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আমিনা ইসলাম বলেন, চলমান আন্দোলনের আজ ১২ তম দিনে আমরা কালো কাপড় ধারণ করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা, সংস্কৃতি, গবেষেণা কার্যক্রম চলমান রেখেই আমরা আমাদের দাবি আদায় করতে চাই। আমি প্রশাসনের কাছে প্রশ্ন রাখতে চাই আগামী সপ্তাহে ভর্তি পরীক্ষার জনসমাগমে হাজার হাজার মানুষের নিরাপত্তা দিতে প্রস্তুত আছে কিনা; প্রক্টর ও প্রশাসনিক টিম প্রস্তুত আছেন কিনা। আমরা ধর্ষণের ঘটনার সর্বোচ্চ বিচার ও পদক্ষেপ আশা করছি। প্রশাসন যদি আমাদের সহযোগিতা চায় তাদের সহযগিতায় আমরা এগিয়ে আসব। এই প্রশাসন যদি ব্যর্থ হয়, আমরা প্রধানমন্ত্রীকে এ ব্যাপারে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।


ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের আহ্বায়ক আলিফ মাহমুদ বলেন, প্রশাসনের কারণে যেভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের মান দেশবাসীর কাছে ক্ষুন্ন হয়েছে, প্রশাসনে থাকা দায়িত্বশীল ও জড়িত সেই শিক্ষকদের অপসারণের মাধ্যমে সেই সম্মান ফিরিয়ে আনতে হবে। অছাত্রদের বের না করে বরং প্রশাসন নিয়মিত শিক্ষার্থীদের হয়রানি করছে। সিন্ডিকেটের গৃহীত সিদ্ধান্ত না মেনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তার অবমাননা করেছেন। আমরা আজ কালো কাপড় মুখে বেধে প্রতিবাদ করছি। দাবি না মানলে সামনে আরো কঠোর কর্মসূচিতে যাবো।


আরও পড়ুন: জাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো প্রশাস‌নিক ভবন অব‌রোধ


নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চের সদস্য সচিব মাহফুজুল ইসলাম মেঘ বলেন, প্রশাসন জরুরি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। আইওয়াশের জন্য তারা যেসব কর্মসূচি ঘোষণা করেছে তা বাস্তবায়িত না হলে আমাদের আন্দোলন চলবে। আজকে মৌন মিছিল পরবর্তী আমাদের পরবর্তী কর্মসূচি জানিয়ে দেয়া হবে


আরও পড়ুন: জাবির প্রশাসনিক ভবন অবরোধ


এসময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রসায়নের অধ্যাপক মো. এনামউল্ল্যা, গণিতের অধ্যাপক মুহম্মদ নজরুল ইসলাম, পরিবেশ বিজ্ঞানের অধ্যাপক জামাল উদ্দিন রুনু, প্রাণরসান ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সোহেল আহমেদ প্রমুখ।


আরএক্স/