চুয়াডাঙ্গায় পান চাষ করে লাভবান হচ্ছে কৃষকেরা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:১৬ অপরাহ্ন, ১৫ই ফেব্রুয়ারি ২০২৪
শাহাদাৎ হোসেন লাভলু: চুয়াডাঙ্গা জেলার আশীর্বাদ সরুপ সোনালী সবুজ ফালনশীল ফসল পান। পান বারমাসি ফলনযুক্ত একটি অন্যতম অর্থকরী ফসল। আবাদ ও উৎপাদনের দিক থেকে বাংলাদেশের ৯টি জেলাকে পান উৎপাদনের জেলা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা জেলা তার মধ্যে অন্যতম। বছরের জুলাই মাসের ১৫ তারিখ হতে এখান থেকে উৎপাদিত পান UEC ভুক্ত দেশে রপ্তানি শুরু হয়েছে।
বাংলাদেশ প্রায় প্রতিটি ঘরেই পান খাওয়ার প্রচলন রয়েছে। কেউ অভ্যাস করে, কেউ বা আবার শখের বস পান খেয়ে থাকেন। কৃষিনির্ভর এই দেশে পান একসময় জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে গণ্য হতো। বিশেষ করে ব্রিটিশ ও মোঘল আমলে বাসা-বাড়িতে মেহমান বা আত্মীয়-স্বজন এলে তাদের সর্ব প্রথম আপ্যায়ন করা হতো পান দিয়ে। পান ছাড়া বিয়ে-শাদি বা পূজা-পার্বণ হতো না।
আরও পড়ুন: কচু চাষ করে বেশি আয় করার চ্যালেঞ্জ মাসুমের
আমাদের পূর্বপুরুষরাও বিশ্বাস করতেন বাড়ি থেকে মেহমান খালি মুখে বিদায় হলে গৃহস্থের অমঙ্গল হয়। তাই আর কিছু না হোক এক খিলা পান খাওয়ানো চাই। মিষ্টি পানের জন্য বাংলাদেশে সোনাম অর্জন করেছে চুয়াডাঙ্গা জেলা। এখনো চুয়াডাঙ্গার এই মিষ্টি পান রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ও বাহিরের দেশে রপ্তানি হয়ে থাকে। কালের বিবর্তনে চুয়াডাঙ্গায় পান চাষে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। সরেজমিন পানের বরজ / পানক্ষেত ঘুরে চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
পানচাষি নাঈম হোসেন বলেন, এ বছরে আমি তিন বিঘা জমিতে পান চাষ করেছি, সাধারণত পানচাষ বারোমাসি ফসল । পান চাষ শুরুর দিকে একটু জটিল কষ্টসাধ্য হয়ে ওঠে। যখন পান খেক্ষে, পান বেঁচে কেনার উপযুক্ত শুরু হয় তখন থেকেই এক বিঘা জমি পান বরজের প্রতিদিন দুই থেকে তিনজন শ্রমিক রাখতে হয় তাহলে ওই পান খেক্ষে নিয়মিত পরিচর্যা করা সম্ভব হয়, পান বরজ থেকে পান বেচাকেনা শুরু হয়ে গেলে তখন আর তেমন কিছু মনে হয় না। তবে এখনো পর্যন্ত দেশের যে সকল কৃষকেরা পান চাষ করেনি আমি বলব পান চাষ একটি লাভজনক ফসল তাই সকলকে পান চাষের আহ্বান করব।
কৃষক হাকিমুর রহমান বলেন, প্রথম দিকে পান চাষে, প্রয়োজনীয় বাঁশ, পাটখড়ি, তার, খৈড়, সোচ-বাদা, থিউনি, বা জিগা গাছ, খৈল, জৈব সার ও রাসায়নিক সার ইত্যাদি উপকরণের ব্যবহার করে পান চাষ করতে হবে। জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলায় পানচাষের উৎপাদন ছিল আশানুরূপ।
চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, জেলায় বর্তমানে ১৬০৭ হেক্টরের উপরে জমিতে পানের আবাদ রয়েছে। এরমধ্যে আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৭৭০ হেক্টর, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ৫০০ হেক্টর, দামুড়হুদা উপজেলায় ২৭৭ হেক্টর এবং জীবননগর উপজেলায় ৬০ হেক্টর। এসব জমিতে ছোট-বড় চার হাজার বরজ রয়েছে। ১৩ হাজার ৪০০ জনের অধিক কৃষক পানচাষের সঙ্গে জড়িত। এ ফসলের সঙ্গে প্রায় ৪৫ থেকে ৫৫ হাজার মানুষের জীবন-জীবিকা সম্পৃক্ত। জেলার আলমডাঙ্গা ও সদর উপজেলায় পানের বেশি আবাদ হয়।
আলমডাঙ্গা উপজেলার আসমানখালী শালিকা গ্রামের পানচাষি মাসুদ রানা বলেন, আমাদের এলাকায় ৩৩ শতক জমিতে একবিঘা জমি বলা হয়ে থাকে, এক বিঘা জমি পানের বরজ করতে প্রথমে জমি তৈরি করতে হয়। তারপর পানের বরজ চারদিকে ঘরের মতো বেড়া দিয়ে তার ওপরে ধানের বিচালি বা খৈড় দিয়ে ছাউনি দিতে হয় যাতে করে রোদ, বৃষ্টি, কুয়াশা ও পাখি থেকে পানকে রক্ষা করা যায়। এরপর জীগা গাছের ডাল /নলা বা বাঁশের শলি, পাটখড়ির শলি দিতে হয়। এবং পানের লতা লাগাতে হয়। একবিঘা জমিতে বছরে পান উৎপাদন, রক্ষণাবেক্ষণ ও শ্রমিকের খরচ পড়ে এক লাখ টাকার মতো। আর উৎপাদিত পান দেড় থেকে দুই লাখ টাকায় বিক্রি হয়।
দামুড়হুদা উপজেলার পাঠাচুরা গ্রামের আব্দুল আলিম বলেন, পান চাষের দিকে শুধু আমরা নয় আপনারও ভালো করে নজর দিবেন এবং বেশি বেশি করে পান চাষ করবেন এতে লাভবান হবেন একটি সফল ও লাভজনক চাষ।
আলমডাঙ্গা উপজেলা আসমানখালী বাজারের গ্রামের পানচাষি লিঠু মিয়া বলেন, এক পন (৮০টি) বড় পান গত বছরের জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে বিক্রি হয়েছে ২ শত থেকে ৩ শত টাকায় । এবং একই সময়ে ছোট পান বিক্রয় হয় ৩৫ টাকা থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রতিপণ পর্যন্ত। তবে এ বছরে পান বেচ কিনা শুরু হয়েছে পানির বাজার একটু বেশি হওয়া সম্ভাবনা রয়েছে।
আরও পড়ুন: আমের মুকুল রক্ষায় যা করতে হবে
এ বিষয়ে পান ব্যবসায়ী নাজিম মুন্সী বলেন, আমি এক সপ্তাহে স্থানীয় বাজার থেকে ছয় দিন পান ক্রড়ায় করে রাজধানীসহ দেশে বিভিন্ন মোকামে এই পান বিক্রয় করে থাকি আমার আড়তে ১৫ জন শ্রমিক আছে তাদের প্রতিদিন ৯০০ থেকে ১৫০০ টাকা হাজিরা খরচ দিতে হয় এই নিয়ে তারাও সন্তুষ্টবোধ করছে এবং আমিও সন্তুষ্ট আছি তবে যদি এল সি পান আমাদের দেশে না আসে, তাহলে স্থানীয় চাষীরা পান বিক্রয় করে অধিক লাভবান হতে পারবে।
পানের দোকানি রহমত উল্লাহ জোয়ার্দ্দার বলেন, আমি আমার দোকানে চার টাকা খিলা হিসেবেই পান বিক্রয় করতাম এখন এক টাকা বাড়িয়ে ৫ টাকায় বিক্রয় করেছি আমি সাধারণত এক খিলা পানে ব্যবহার করি পান, চুন, সুপারি, ক্ষয়ের ও জর্দ্দা দিয়ে এই খিলা তৈরি করে বিক্রয় করে থাকি এতে আমার সীমিত কিছু লাভ হয় এই লাভের টাকা দিয়ে আমি আমার সংসার চালায় এবং আমার বাচ্চাদের লেখাপড়ার খরচ বহন করছি।
খোদর গ্রামের উকিল আলী বলেন, আগে পান কিনে খেতাম চার টাকা খিলা এখন এক খিলা পান কিনে খাচ্ছি ৫ টাকায় আমাদের এলাকার পান খুবই সুস্বাদু ও মিষ্টি পান এই পান খেয়ে আমি অনেকটাই তৃপ্তি মেটাতে পারি।
আরএক্স/