ভাষার মাসেও অযত্নে পড়ে আছে জবির শহীদ মিনার


Janobani

ক্যাম্পাস প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১১:৩১ এএম, ১৮ই ফেব্রুয়ারি ২০২৪


ভাষার মাসেও অযত্নে পড়ে আছে জবির শহীদ মিনার
জবির শহীদ মিনার। ছবি: জনবাণী

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থিত ভাষা শহীদদের স্মরণে নির্মিত শহীদ মিনার। বছরজুড়ে অরক্ষিত থাকা শহীদ মিনারটি ভাষার মাসেও অযত্ন ও অবহেলায় পড়ে আছে।


প্রতিবছর শহীদ দিবস এলেই ধুয়েমুছে পরিষ্কার করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র শহীদ মিনারটি। ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের দু-এক দিন আগে করা হয় পরিষ্কার। তবে এ বছর এখনও শহীদ মিনারটি পরিষ্কারের উদ্যোগ নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক সংগঠন বিএনসিসি প্রতিবছর মিনারটি ধুয়েমুছে পরিষ্কার করলেও এ বছর তারাও কোনো উদ্যোগ নেয়নি। এ নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।


আরও পড়ুন: তুচ্ছ ঘটনায় জবিতে সংঘর্ষ


সরেজমিনে দেখা গেছে, শহীদ মিনারের চারপাশে থাকা রেলিংগুলোর বেশিরভাগ নষ্ট হয়ে গেছে। খাবারের প্যাকেট, প্লাস্টিকের বোতল পড়ে রয়েছে। সিঁড়ির টাইলস বেশ কয়েক জায়গায় নষ্ট। দীর্ঘদিন কোনো যত্ন না নেওয়ায় মিনারের সাদা রং উঠে কালো হয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের দর্শনার্থীরা কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে মূল বেদিতে যত্রতত্র জুতাসহ প্রবেশ করছে।


শহীদ মিনারের টাইলস কোথাও অর্ধেক ভাঙা, আবার কোথাও কোথাও টাইলস নেই। বেদির রঙও প্রায় উঠে গেছে। এ ছাড়াও টাইলসে জমে আছে শ্যাওলার আস্তরণ। শহীদ মিনারের দেওয়ালগুলো পোস্টার ও ব্যানারে ছেয়ে আছে।


এ শহীদ মিনারের একটি প্রধানসহ মোট আটটি বেদি রয়েছে। প্রতিটি বেদি বৃত্তাকারে সাজানো। প্রত্যেকটি নিজ অবস্থানে পেছনের দিকের পাদদেশে কোমর ভেঙে হেলানো। প্রধান বেদিটি দাঁড়ানো অবস্থায় সামনের দিকে অর্ধনমিতভাবে রয়েছে।


শিক্ষার্থীরা বলছেন, শহীদ মিনারটি নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না রাখলে অনেকেরই শ্রদ্ধা কমে যাবে। শুধু ২১শে ফেব্রুয়ারিকেন্দ্রিক ভাষা সচেতনতা তৈরি করবে না, সারা বছরই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ বাইরের দর্শনার্থীদের বাংলাভাষার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ তৈরি করবে। শুধু এক দিন ফুল দেওয়ার জন্যই যেন শহীদ মিনারের অবস্থান না হয়, সেদিকে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তারা।


শহীদ মিনারের আকৃতি দেখে কেউ প্রথমেই না বোঝায় অনেকেই এটিকে অবজ্ঞা বা ভিন্ন চোখে দেখে। এটিকে একটি সাইনবোর্ডেও তুলে ধরার দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।


বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, এটি আর সংস্কার করা সম্ভব নয়। নতুন ক্যাম্পাসে নতুন শহীদ মিনার স্থাপন করা হবে। এমনকি এটি অপরিচ্ছন্ন করার ব্যাপারে শিক্ষার্থীরাই দায়ী বলে মনে করছে প্রশাসন।


তবে শিক্ষার্থীরা বলছেন, মিনারটি রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা প্রশাসনেরই দায়িত্ব।


রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রিয়ন বলেন, ’শহীদ মিনার আমাদের আবেগের স্থান। এটার সৌন্দর্য রক্ষায় প্রশাসনের এমন উদাসীনতা সত্যিই বেদনাদায়ক। প্রশাসনের কাছে দাবি থাকবে দ্রুত যেন শহীদ মিনারের সংস্কার করা হয়।’


রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী মুর্শেদ আলম বলেন, “যাদের কারণে আজকে আমরা বাংলায় কথা বলি,তাদের শ্রদ্ধার্থে নির্মিতি এই শহীদ মিনার। প্রায় এটা উপেক্ষিত থাকে এই বিষয়টা আমার খুব খারাপ লাগে”


নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রিংকু বলেন, ’শহীদরা আমাদের গর্ব। তাদের স্মরণে নির্মিত এই স্তম্ভ অযত্নে রাখা খুবই লজ্জার বিষয়। আমরা চাই শহীদ মিনারসহ ক্যাম্পাসের পরিবেশ সব সময় যেন পরিচ্ছন্ন রাখা হয়। আমরা আমাদের এই পবিত্র স্থানটিকে সব সময় পরিষ্কার দেখতে চাই’।


আরও পড়ুন: জবিতে গ্রীণ ইউনিট ফর নেট জিরো শীর্ষক সেমিনার


বহিরাগত কয়েকজনকে জুতা পায়ে শহীদ মিনারে আড্ডা দিতে দেখা যায়। কারণ জানতে চাইলে তারা বলেন, দেশের সকল শহীদ মিনার একই রকম। এটা যে শহীদ মিনার সেটা আমরা বুঝতেই পারিনি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারটি একটু ভিন্ন ধরনের হওয়ায় প্রথমে আমরা এটাকে বসে সময় কাটানোর জন্য একটি স্থাপত্য ভেবেছিলাম।


বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে কলা অনুষদের ডিন ও বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. হোসনে আরা বেগম বলেন, “ভাষার মাস আসলে আমরা শহিদ মিনারের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিয়ে ভাবি। অথচ সারা বছর আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনার পরিষ্কার রাখা উচিত। সামনে ভাষা দিবস উপলক্ষে আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এবং আমি শহিদ মিনারের সমস্যার বিষয়গুলো প্রস্তাবনা করেছি”।


আরএক্স/