এক যুগ ধরে অযত্নে ইবির প্রথম শহীদ মিনার


Janobani

ক্যাম্পাস প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৮:২০ অপরাহ্ন, ২০শে ফেব্রুয়ারি ২০২৪


এক যুগ ধরে অযত্নে ইবির প্রথম শহীদ মিনার
ইবির প্রথম শহীদ মিনার। ছবি: জনবাণী

মংক্যচিং মারমা, ইবি প্রতিনিধি: শিক্ষার্থীদের দাবিতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে(ইবি) প্রথম শহীদ মিনার স্থাপিত হয় ১৯৯১ সালে। তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ সিরাজুল ইসলাম এর ভিত্তি স্থাপন করেন। তবে শিক্ষার্থীদের শত আবেগ ও ত্যাগের ফসল শহীদ মিনারটি এখন অযত্নে ও অবহেলায় ভরে আছে আগাছা ও আবর্জনায়।


জানা যায়, ২০১১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন শহীদ মিনার নির্মাণের পর থেকে সেখানে ব্যাপক পরিসরে মাতৃভাষা দিবস উদযাপন হয়ে আসছে। এরপর থেকে প্রায় এক যুগের বেশি সময় ধরে অযত্নে পড়ে আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম শহীদ মিনারটি। 


সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্র-নজরুল কলা অনুষদ ভবনের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে শহীদ মিনারটির অবস্থান। অনেকদিন ধরে ভবনটির কাজ চলতে থাকায় ভবনটির কাজে ব্যবহৃত সরঞ্জাম সমূহ শহীদ মিনারটির আশপাশে পড়ে আছে। পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকায় মিনারটির চারিদিকেও ভরে গেছে ময়লা-আবর্জনা ও আগাছা। 


এ বিষয়ে কথা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচের ছাত্র এবং বর্তমান ফাইন আর্টস বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. এ. এইচ.এম আক্তারুল ইসলাম। তিনি স্মৃতিচারণ করে বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশের এই ভূখন্ডে ভাষা শহীদদের স্মরণে আমরা যারা ফুল দিতে যেতাম তখন ক্যাম্পাসের শিবিরের সদস্যরা 'আজকের এই দিনে গোলাম তোমায় মনে পড়ে ' এরকম স্লোগানে কুখ্যাত রাজাকারদের নাম মুখে নিয়ে আমাদের প্রতিহত করার চেষ্টা করতো। তখনকার চিত্র দেখে আমরা যারা সচেতন ও প্রগতিশীল মানুষ ছিলাম আমরা সবাই বিস্মিত হতাম। ফুল দিতে গেলেই আশপাশে গুলির শব্দ হতো, ককটেলের শব্দ হতো। এরপরও জীবনের শঙ্কা নিয়ে আমরা শহীদ মিনারে ফুল দিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম শহীদ মিনার হিসেবে এটি আমাদের ত্যাগ তিতিক্ষার বহনকারী। এর সংস্কার করে স্মৃতিবিজড়িত হিসেবে রাখা উচিত।


শহীদ মিনার নির্মাণ করতে গিয়ে বহিষ্কারকৃত শিক্ষার্থীদের মধ্যে একজন হলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোঃ শাহজাহান আলম সাজু। তিনি বলেন, উপাচার্যের বাধা উপেক্ষা করেই আমরা বাঁশ, রড ব্যবহার করে তখনকার গাজীপুর ক্যাম্পাসে শহীদ মিনার তৈরি করেছিলাম। এরজন্য আমাদের অনেকেই বহিষ্কারও হতে হয়েছিলো। আমাদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতেই তখনকার উপাচার্য অধ্যাপক ড. সিরাজুল স্যারা এই শহীদ মিনারের ভিত্তি তৈরি করেছিলেন। এখন যদি শহীদ মিনারের পবিত্রতা না থাকে এটা খুবই দুঃখজনক। এত আন্দোলনের পরে পাওয়া শহিদ মিনার যদি আজকে এভাবে অযত্নে অবহেলায় থাকে এর চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক আর কিছু নেই।


এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিস প্রধান ও উপ-রেজিস্ট্রার মোঃ সামছুল ইসলাম জোহা বলেন, আমরা তৎকালীন সময়ে নানা বাধা উপেক্ষা করে শহীদ মিনারে ফুল দিতাম। নতুন শহীদ মিনার স্থাপিত হওয়ায় এই শহীদ মিনারটি দৃষ্টির আড়ালে পড়ে যায়। ফলে পরবর্তীতে আর সংস্কার কাজ করা হয়নি। যেহেতু এটি এখন নজরে এসেছে এ বিষয়ে কি ব্যবস্থা নেওয়া যায় উপাচার্য স্যারের সাথে কথা বলব। 


উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, মাতৃভাষা দিবস এবং শহীদ মিনার আমাদের জাতীয় ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান জুড়ে রয়েছে। প্রথম শহীদ মিনারটি এখন কি অবস্থায় আছে এবং এ সম্পর্কে কি ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় তা আমি খতিয়ে দেখবো। 


আরএক্স/