৩০শে ফেব্রুয়ারি দিনটি ইতিহাসে একবারই এসেছিল


Janobani

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১:০০ অপরাহ্ন, ২৯শে ফেব্রুয়ারি ২০২৪


৩০শে ফেব্রুয়ারি দিনটি ইতিহাসে একবারই এসেছিল
ফাইল ছবি

২৯ ফেব্রুয়ারির কথা আমাদের সকলেরই জানা আছে কিন্তু ৩০ ফেব্রুয়ারিও ছিল এই কথাটি বর্তমান ক্যালেন্ডারে নেই। কবে কখন ৩০ ফেব্রুয়ারি ছিল, কেন ছিল চলুন জানা যাক। আমরা জানি, চার বছরে একবার আসে লিপ ইয়ার। অনেক বছর ধরেই লিপ ইয়ারের মাধ্যমে বছর গণনাকে সমন্বয় করা হয়। 


লিপ ইয়ার ক্যালেন্ডারে ফেব্রুয়ারির শেষে বাড়তি একটি দিন যোগ হয়। লিপ ইয়ারের বছর হয়ে থাকে সাধারন বছরের চেয়ে এক দিন বেশি অর্থাৎ সাধারনত আমরা সবাই জানি ৩৬৫ দিনে বছর কিন্তু লিপ ইয়ার বছর হয়ে থাকে ৩৬৬ দিনে। পৃথিবীর ইতিহাসে শুধুমাত্র একবার এমন সময় এসেছিল যখন ক্যালেন্ডারে ৩০ ফেব্রুয়ারি তারিখটি যোগ করা হয়েছিল। সময়টা হচ্ছে ১৭১২ সাল। ওই বছরে ক্যালেন্ডারে ৩০শে ফেব্রুয়ারি যুক্ত করেছিল।


আরও পড়ুন: আজ ধনেপাতা অপছন্দ করা দিবস


সুইডেন একটি ডাবল লিপ ইয়ারের অংশ হিসেবে এটি করা হয়েছিল। তাহলে ভেবে দেখুন, সেই তারিখে যারা জন্মগ্রহণ করেছিলেন তাদের ভাগ্যে কী হয়েছে? এই ৩০শে ফেব্রুয়ারি কেন যুক্ত করতে হয়েছিল সেই ব্যাখ্যার আগে লিপ ইয়ার কেন আসে, কবে থেকে লিপ ইয়ার যুক্ত হয়েছে সেই ইতিহাস জানা প্রয়োজন।আপনি কী জানেন, যখন কোনো মানুষের মৃত্যুর তারিখ অজানা থাকে তখন তাদের এপিটাফে জন্ম তারিখ হিসেবে ৩০শে ফেব্রুয়ারি দিনটিকে রেকর্ড করা হয়।জানা যায়, প্রাচীন রোমের মানুষেরা সৌর ক্যালেন্ডার ধরে বছর গণনা করতেন।কিন্তু ওই ক্যালেন্ডার সৌর বছরের সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না।কারণ,পৃথিবী সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করতে কাঁটায় কাঁটায় ৩৬৫ দিন সময় নেয় না।এতে ৩৬৫ দিনের সাথে পাঁচ ঘণ্টা, ৪৮ মিনিট এবং ৫৬ সেকেন্ড বেশি সময় লাগে।


এই বাড়তি সময়কে সমন্বয় করতে সোসিজেনেস একটি ক্যালেন্ডার তৈরির প্রস্তাব করেছিলেন, যা মিশরীয়দের ক্যালেন্ডারের সাথে প্রায় হুবহু মিলে যায়।সৌর বছরের সাথে সন্নিবেশ করতে প্রতি চার বছরে ৩৬৫ দিনের সাথে একটি অতিরিক্ত দিন যোগ করা হয়। এভাবে জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের জন্ম হয়,এর প্রবর্তক জুলিয়াস সিজারের সম্মানে এই নামকরণ করা হয়েছিল। কিন্তু এই জুলিয়ান ক্যালেন্ডারও বেশিদিন টেকেনি। ওই ক্যালেন্ডারে কিছু অসামঞ্জস্য থাকায় ১৫৮২ সাল থেকে ক্রমান্বয়ে জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের জায়গা প্রতিস্থাপন করে নেয় গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার। 


যেহেতু প্রতি চার বছরে একটি অতিরিক্ত দিনের প্রয়োজন ছিল, ত্রয়োদশ পোপ গ্রেগরি একটি ডিক্রি জারির মাধ্যমে ক্যালেন্ডারটিকে 'নিখুঁত' করার সিদ্ধান্ত নেন। তারা বলেন, লিপ ইয়ারের অতিরিক্ত দিনটি হবে ২৯শে ফেব্রুয়ারি।জ্যোতির্বিজ্ঞানী ক্রিস্টোফার ক্ল্যাভিয়াসের পরামর্শে, তখনকার জ্ঞানী ব্যক্তিরা বছরের হিসেবে এই সমন্বয় আনার জন্য সিদ্ধান্ত নেন যে, ১৫৮২ সালে চৌঠা অক্টোবরের পরের দিনটি হবে ১৫ই অক্টোবর। 


অর্থাৎ মাঝে ১০ দিন গায়েব হয়ে যাবে। মূলত এই উপায়ে সৌর বছরের মাঝে সময়ের যে ব্যবধান হয়েছিল সেটা দূর করা হয়।ইতিহাস জুড়ে বিভিন্ন শাসক রাজনৈতিক প্রয়োজনে এক বছরকে কয়েক মাসে ভাগ করেছেন।অর্থাৎ সব সময়ে ১২ মাসে এক বছর ছিল না। আবার তাদের ব্যক্তিগত ইচ্ছা অনুসারে মাসগুলোয় বাড়তি দিন যোগ করা হতো, নাহলে সরিয়ে নেয়া হতো। ফলে সৌর বছরের সঙ্গে এই ক্যালেন্ডারগুলোকে সমন্বয় করা প্রয়োজনীয় হয়ে ওঠে, যা উপেক্ষা করার উপায় ছিল না।


সম্রাট জুলিয়াস সিজার, প্রায় দুই হাজার বছর আগে, আমরা বর্তমানে যে ক্যালেন্ডার ব্যবহার করি তার অনুরূপ একটি ক্যালেন্ডার প্রবর্তন করেছিলেন।সেই তথাকথিত জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ১২ মাসে এক বছর ছিল। এবং মাসগুলোর কিছু ৩০ দিন এবং কিছু ৩১ দিনে গণনা করা হতো।শুধুমাত্র ফেব্রুয়ারি মাস গণনা হতো ২৮ বা ২৯ দিনে।বছর শুরু হতো মার্চ মাস থেকে। কারণ এটি বসন্তের শুরু। 


এজন্য বছরের শেষ মাস ফেব্রুয়ারিকে লিপ ইয়ারের জন্য বেছে নেয়া হয়। এক বছর যেহেতু ৩৬৫ দিন ছয় ঘণ্টায় হয়, তাই বাড়তি এই ছয় ঘণ্টাকে সমন্বয় করার জন্য সেই রোমান সময় থেকে লিপ ইয়ার চিহ্নিত করা হয়েছে।


এই গণনা শতাব্দী ধরে চলে আসছে, কিন্তু এই গণনা পদ্ধতি সঠিক নয়। সৌর বছর আসলে একটু ছোট - সুনির্দিষ্টভাবে বললে ১১ মিনিট ১৪ দশমিক ৭৮৪ সেকেন্ড কম।আদতে মনে হতে পারে এটি এমন কোন বড় পার্থক্য নয়, যা তাৎক্ষণিক প্রভাব ফেলতে পারে। তবে বছরের পর বছর ধরে, এই বাড়তি মিনিট/সেকেন্ড যোগ হয়ে সেটি বড় ব্যবধান তৈরি করে। এ কারণেই ত্রয়োদশ পোপ গ্রেগরি ১৫৮২ সালে তার ক্যালেন্ডারে থাকা অসঙ্গতিগুলো ঠিক করার জন্য কিছু পরিবর্তন এনেছিলেন। 


আরও পড়ুন: বিস্কুটের গায়ে ছিদ্র থাকে কেন


যারা ক্যাথলিক চার্চের সাথে যুক্ত ছিল, প্রথমে তারা এই ক্যালেন্ডার গ্রহণ করে। পরবর্তী চার দশকে লিপ ইয়ার নির্মূল করার পরিবর্তে, তারা অক্টোবর মাস থেকে এক লাফে ১০ দিন কমিয়ে দেয়। ১৫৮২ সালে ৫ই অক্টোবর বৃহস্পতিবারের পরের দিন ১৪ই অক্টোবর শুক্রবার করা হয়।অন্যান্য প্রোটেস্ট্যান্ট জাতি এবং সাম্রাজ্যগুলো শুরুতে এই ক্যালেন্ডার গ্রহণে অনিচ্ছুক ছিল, কিন্তু অবশেষে তারাও এই পরিবর্তিত ক্যালেন্ডার গ্রহণ করে। 


সুইডেন যখন গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়, তখন তারা ধীরে ধীরে এই পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়াকে উপযুক্ত বলে মনে করেছিল। এজন্য তারা টানা ৪০ বছরের জন্য ফেব্রুয়ারির লিপ দিনগুলো এড়িয়ে যায়, যতক্ষণ না সেগুলো সামঞ্জস্যপূর্ণ হচ্ছে। তাদের এতদিনের অনুসরণ করা জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে ১৭০০ সালে একটি লিপ ইয়ার ছিল, কিন্তু তারা ফেব্রুয়ারি মাস শুধুমাত্র ২৮ দিনেই কাটায়। একইভাবে ১৭০৪, ১৭০৮ সাল লিপ ইয়ার হলেও তারা ফেব্রুয়ারি মাস ২৮ দিনেই সীমাবদ্ধ রাখতে চেয়েছিলেন।


কিন্তু, ওই সময়ে যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। লিপ ইয়ার না কাটানোর পরিবর্তনের কথা তারা ভুলে যায়। কয়েক বছর পরে, সম্রাট দ্বাদশ চার্লস বুঝতে পেরেছিলেন যে সুইডেনের ক্যালেন্ডারটি জুলিয়ান বা গ্রেগরিয়ান কোনটিই নয়। এরপর তিনি ক্যালেন্ডার প্রণয়নে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেন এবং আগের সব পরিবর্তন বাতিল করেন।কিন্তু, যেহেতু তারা ইতিমধ্যেই ১৭০০সালের অধিবর্ষ বাদ দিয়েছিল, তাই সম্রাট দ্বাদশ চার্লস আদেশ দেন যেন ১৭১২ অর্থাৎ আরেকটি লিপ ইয়ারে ২৯শে ফেব্রুয়ারির পাশাপাশি আরেকটি অতিরিক্ত দিন যোগ করা হয়। এভাবে জুলিয়াস সিজারের সময়ে ইতিহাসে প্রথম এবং শুধুমাত্র এক বারের জন্য ৩০শে ফেব্রুয়ারি তারিখটি ক্যালেন্ডারে যুক্ত হয়েছিল।


তথ্যসূত্র-বিবিসি


আরএক্স