কিস্তির টাকা পরিশোধ না করতে পারায় ঘরে তালা


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৪:১০ অপরাহ্ন, ১লা মার্চ ২০২৪


কিস্তির টাকা পরিশোধ না করতে পারায় ঘরে তালা
ছবি: প্রতিনিধি

গাজীপুরের শ্রীপুরে এনজিও’র কিস্তি পরিশোধ করতে ব্যর্থ হওয়ায় ঋণ গ্রহীতার ঘরে তালা মেরে দিয়েছে আম্বালা ফাউন্ডেশন নামে একটি এনজিওর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এখন তিন সন্তান নিয়ে স্বামী-স্ত্রীকে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাতে হচ্ছে।


বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে শ্রীপুর পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের চন্নাপাড়া গ্রামের ফকির বাড়ি জামে মসজিদ এলাকার বাসের সুপারভাইজার আলাউদ্দিন ও গার্মেন্টস শ্রমিক শামীমা আক্তারের (২৮) ঘরে তালা লাগানোর ঘটনা ঘটে। বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ঘরে তালা লাগানোর বিষয়টি জানতে পারেন তারা।


আরও পড়ুন: বসন্তের উৎসব ঘিরে শ্রীপুরে জমজমাট ফুলের বাজার


ঋণ গ্রহীতা শামীমা আক্তার ময়মনসিংহের ত্রিশাল থানার বৈলর ইউনিয়নের দেওয়ানিবাড়ি গ্রামের মো. আলাউদ্দিনের স্ত্রী। প্রায় ২০-২২ বছর আগে স্বামী আলাউদ্দিনের বাবা আবুল বাশার শ্রীপুরের চন্নাপাড়া গ্রামে জমি কিনেন। সেখানে বাড়ি করে বসবাস করে আসছেন তারা। শামীমা পার্শ্ববর্তী ভিনটেজ ডেনিম লিমিটেড নামের একটি তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানে অপারেটর পদে চাকরি করতেন। সম্প্রতি তিনি চাকরি হারিয়েছেন। স্বামী আলাউদ্দিন এনা পরিবহন বাসের সুপারভাইজার পদে কাজ করেন।


শামীম আক্তার জানান, গত বছরের মে-জুন মাসে মাসিক ৯ হাজার ৫০০ টাকা কিস্তিতে আম্বালা ফাউন্ডেশনের শ্রীপুর শাখা থেকে ১ লাখ টাকা ঋণ নেন। ঋণের টাকায় সাবলম্বী হতে চেয়েছিলেন তিনি। ঋণের টাকা প্রতি মাসেই যথা সময়ে পরিশোধ করে আসছিলেন। জানুয়ারি মাসে গার্মেন্টস থেকে চাকরি হারিয়ে ফেব্রুয়ারি মাসের ঋণের টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হন। অপরদিকে শাশুড়ি অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সংসারে সন্তানদের পড়ালেখার খরচ, অসুস্থ শাশুড়ির চিকিৎসা সব মিলিয়ে চাকরি হারিয়ে ঋণের টাকা পরিশোধ করতে পারেননি তিনি। গত মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শাশুড়িকে দেখতে ঘরে তালা দিয়ে যান তিনি। বৃহস্পতিবার বিকেলে ফিরে এসে ঘরের দরজায় দুটি তালা দেখতে পান। প্রতিবেশীরা জানান এনজিও কর্মীরা তালা লাগিয়েছেন।


শামীমা বলেন, আমি যখন ১ লাখ টাকা ঋণ নিই, তখন আমাকে নগদ ৩২ হাজার টাকায় বাধ্যতামূলক একটি সেলাই মেশিন ধরিয়ে দেওয়া হয়। সবমিলিয়ে ঋণ বাবদ যাবতীয় খরচ ও সঞ্চয় বাদে আমাকে ১ লাখ টাকা স্থলের মাত্র ৫৮ হাজার টাকা দেওয়া হয়। আমি তখন সেলাই মেশিন না নিতে চাইলে আমাকে ঋণ দেওয়া হবে না বলে জানানো হয়। আমি ওই টাকায় একটি অটোরিকশা কিনে পরিচালনা করছি। প্রতি মাসের প্রথম বুধবার কিস্তি পরিশোধের কথা। আমার মাত্র এক মাস কিস্তির টাকা বকেয়া পড়েছে, তাই তারা (এনজিওকর্মীরা) আমার ঘরে তালা লাগিয়েছে। আমার যদি চাকরিটা না যেত তাহলে ঋণের টাকা বকেয়া পড়তো না, খেয়ে না খেয়ে আগে ঋণের টাকা পরিশোধ করেছি। আমি এখন আমার ৮ম শ্রেণি পড়ুয়া ১৫ বছরের মেয়ে শাহরিয়া আফরিন, মাদ্রাসার ছাত্র ১৩ বছর বয়সী ছেলে মো. মিনহাজ, ৬ বছর বয়সী ছেলে আলভিকে নিয়ে ঘরের সামনে বিকেল থেকে অপেক্ষা করছি। আমি তাদের সাথে যোগাযোগ করেছি, তারা বলে- আমরাও কিস্তির জন্য আপনার ঘরের সামনে গিয়ে বসে থাকি, আমাদের খুব কষ্ট হয়, এখন বুঝেন আমাদের কেমন লাগে। 


শামীমার স্বামী আলাউদ্দিন বলেন, দুইজনের আয়ে মা-বাবা ও সন্তান নিয়ে কোনো মতো চলতে হয়। এর মধ্যে মা অসুস্থ হয়ে পড়ায় এ মাসের কিস্তি বকেয়া পড়েছে। আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করেছি কিস্তি দিতে, কিন্তু মা হাসপাতালে ভর্তি থাকায় দিতে পারিনি। তাই তারা আমার ঘরে তালা মেয়ে দিয়েছে।


এ বিষয়ে জানতে আম্বালা ফাউন্ডেশনের  শ্রীপুর শাখার মাঠকর্মী কবির হোসেন বলেন, আমাদের লোনটা নিতে গেলে ১ লাখ টাকায় ১০ হাজার সঞ্চয় লাগে। ১ হাজার টাকা বীমা, আনুষঙ্গিক ২৬৫ টাকা খরচ আছে। আর জোর করে সেলাই মেশিন দেয়ার বিষয়টি হলো, যেদিন আমি ঋণ প্রস্তাব করি উনিই আমাকে বলেছিলেন, এক লাখ টাকা লোন দিলে আমি একটি সেলাই মেশিন নেব। পরদিন যখন স্যারেরা ভিজিট করে লোনটি বাদ দেবে উনিই আমাকে বলেছে আমার লোনটা বাদ দিয়েন না। মেশিনটা আমাকে নগদ টাকা দিয়ে দেন। সেই শর্তে মেশিনটা দেওয়া হয়েছে।


ঘরে তালা লাগানোর বিষয়ে তিনি বলেন, যখন ঋণ গ্রহীতা বাসায় থাকেন না তখন জামিনদারকে ধরবে এটাই স্বাভাবিক। আমি সব সময়ই তাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। কোনো কল তারা ধরছিল না। আমরা গতকাল গিয়ে তাকে বাসায় পাইনি। যাওয়ার সময় ঘরে জামিনদারের উপস্থিতিতে তালা লাগিয়েছি।


আরও পড়ুন: শ্রীপুরে 'স্ট্রবেরি' চাষে অভাবনীয় সাফল্য


কিস্তি না পেয়ে ঘরে তালা লাগানো বিষয়ের আম্বালা ফাউন্ডেশনের শ্রীপুর শাখার ব্যবস্থাপক আশিকুল ইসলাম বলেন, এই একটা ছোট্ট বিষয় নিয়ে কি একটা বিরক্তিকর পরিস্থিতি মধ্যে আছিরে ভাই, বলার মতো না। শামীমা আক্তারকে দেওয়া লোনের কিস্তি সঠিক সময়ে আসছিল না। প্রতি মাসেই মূল কিস্তি থেকে ৫০০ টাকা, ১ হাজার টাকা কম দিতো। গত বুধবার সন্ধ্যার কিছু সময় আগে আমার মাঠকর্মী কিস্তির টাকা জন্য তার বাসায় যায়। কিন্তু তাদের ঘরের দরজা খোলা থাকলেও তারা বাসায় ছিল না। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে তারা না আসায় আমরা তাদের আসার অপেক্ষা করছিলাম। সবশেষ রাতে আসার সময় ঋণের জামিনদারকে ডেকে এনে তার সামনেই ঘরে তালা লাগিয়েছি।


এ বিষয়ে জানতে আম্বালা ফাউন্ডেশনের এরিয়া ম্যানেজার টিটু চক্রবর্তীর বলেন, কিস্তি দেওয়ার কথা বলে কর্মকর্তাদের বসিয়ে রেখে বাড়ি থেকে চলে গিয়েছে। আমাদের প্রতিষ্ঠানিক নিয়মে ঋণ খেলাপিদের বাড়িতে তালা লাগানোর নিয়ম নেই। এটা পরিস্থিতির কারণে হয়েছে।


এ বিষয়ে শ্রীপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহ জামান বলেন, এ বিষয়টি কেউ থানায় জানায়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


আরএক্স/