জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্টের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা


Janobani

জনবাণী ডেস্ক

প্রকাশ: ১১:৫৬ পূর্বাহ্ন, ৫ই মার্চ ২০২৪


জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্টের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা
ছবি: সংগৃহীত

দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্ট এমারসন মানাঙ্গাগওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সেইসঙ্গে জিম্বাবুয়ের আরও ১০ ব্যক্তি এবং তিনটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।


এছাড়া একই অভিযোগে আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত এই দেশটির ফার্স্ট লেডি, ভাইস প্রেসিডেন্ট, প্রতিরক্ষামন্ত্রীসহ অন্যান্য নেতার ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।


মঙ্গলবার (৫ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।


আরও পড়ুন: ইলন মাস্ককে ছাড়িয়ে বিশ্বের শীর্ষ ধনী জেফ বেজোস


প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্ট এমারসন মানাঙ্গাগওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া নিষেধাজ্ঞার এই আদেশটি দেশটির অন্যান্য সিনিয়র নেতাদেরও ক্ষতির মুখে ফেলবে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা তাদের সম্পদ আটকে যাবে এবং সেখানে বেসরকারি উদ্যোগে বা ব্যক্তিগতভাবে ভ্রমণ করতে পারবেন না তারা।


বিবিসি বলছে, নতুন এই নিষেধাজ্ঞাগুলো একটি বিস্তৃত প্রোগ্রামের স্থালাভিষিক্ত হবে যা দুই দশক আগে চালু হয়েছিল। হোয়াইট হাউস এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমরা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন প্রত্যক্ষ করছি।’


বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘সুশীল সমাজকে লক্ষ্যবস্তু করা এবং রাজনৈতিক কার্যকলাপের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে যা মৌলিক স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন করেছে এবং সরকারলীয় নেতারাসহ নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা ব্যক্তিগত লাভের জন্য জনগণের সম্পদ লুণ্ঠন করেছে।’


হোয়াইট হাউস বলছে, ‘এই অবৈধ কার্যকলাপগুলো ঘুষ, চোরাচালান এবং অর্থ পাচারে জড়িত বিশ্বব্যাপী অপরাধমূলক নেটওয়ার্ককে সমর্থন করে এবং একইসঙ্গে অবদানও রাখে। যা জিম্বাবুয়ে, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং বিশ্বের অন্যান্য অংশে মানুষ ও সম্প্রদায়গুলোকে আরও দরিদ্র করে তোলে।’


মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন ইতোমধ্যেই জিম্বাবুয়েতে ‘বহু অপহরণ, শারীরিক নির্যাতন এবং বেআইনি হত্যার ঘটনা’ উল্লেখ করেছেন যা মানুষকে ‘চরম শঙ্কার’ মধ্যে ছেড়ে দিয়েছে।


হোয়াইট হাউস বলেছে, ‘এই শোষণ ও নির্যাতনের জন্য দায়ী ব্যক্তিসহ অন্যদের জবাবদিহি করার প্রচেষ্টার দিকে পুনরায় নজর দিচ্ছে’ তারা।


বিবিসি বলছে, প্রেসিডেন্ট এমারসন মানাঙ্গাগওয়ার পাশাপাশি জিম্বাবুয়ের আরও ১০ জন ব্যক্তি এবং তিনটি ব্যবসার বিরুদ্ধেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। নিষেধাজ্ঞা প্রাপ্তদের তালিকায় ফার্স্ট লেডি অক্সিলিয়া মানাঙ্গাগওয়া, ভাইস প্রেসিডেন্ট কনস্টান্টিনো চিওয়েঙ্গা এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওপাহ মুচিঙ্গুরিও রয়েছেন।


জিম্বাবুয়ের জাতীয় পুলিশ এবং সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স অর্গানাইজেশন (সিআইও)-এর সদস্যসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন নিরাপত্তা কর্মকর্তাদেরও এই নিষেধাজ্ঞায় টার্গেট করা হয়েছে। এছাড়া ব্যবসায়ীরা রাষ্ট্রীয় দুর্নীতিতে সহায়তা করেছেন বলেও খবর পাওয়া গেছে।


এছাড়া প্রেসিডেন্ট এমারসন মানাঙ্গাগওয়ার উপদেষ্টা কুদাকওয়াশে ট্যাগওয়াইরি, তার স্ত্রী এবং তাদের দুটি ব্যবসার ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।


অবশ্য অন্যান্য যেসব লোক আগে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার অধীনে ছিল এবং কিন্তু নতুন তালিকায় নাম নেই তাদের ওপর থেকে বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।


জিম্বাবুয়ের সরকারের মুখপাত্র নিক মানাগাগওয়া পুরোনো নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়াকে ‘প্রেসিডেন্ট মানাঙ্গাগওয়ার বৈদেশিক নীতির একটি মহান প্রমাণ’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন এবং নতুন নিষেধাজ্ঞাকে ‘অবৈধ’ বলে অভিহিত করেছেন।


প্রেসিডেন্ট এমারসন মানাঙ্গাগওয়ার ক্ষমতাসীন জানু পিএফ পার্টির মুখপাত্র ফারাই মুরোইওয়া মারাপিরা বলেছেন, ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব এবং কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়’ এবং আমাদের দরজা সবার জন্য উন্মুক্ত রাখার বিষয়ে প্রেসিডেন্টের যে নীতি রয়েছে তাতে তিক্ত-মধুর ফল এসেছে।’


আরও পড়ুন: ইউক্রেনের ৩১ হাজার সেনা নিহত: জেলেনস্কি


যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ১৯৯০ এর দশকের গোড়ার দিকে জিম্বাবুয়ের ওপর অর্থনৈতিক এবং ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবে এবং অন্যান্য উচ্চ-পদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে সেসময় এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।


মূলত তাদেরকে দেশে গণতন্ত্রকে দুর্বল করার জন্য অভিযুক্ত করেছিল ওয়াশিংটন। এছাড়া যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যসহ বিভিন্ন দেশ জিম্বাবুয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।


গত বছর দ্বিতীয় মেয়াদে শপথ নেওয়া প্রেসিডেন্ট মনাঙ্গাগওয়া অতীতে দেশের উন্নয়নকে পঙ্গু করার জন্য অর্থনৈতিক শুল্ককে দায়ী করেছেন।


জেবি/এজে