বেগুন চাষে স্বাবলম্বী ভাঙ্গার সম্রাট মাতব্বর
উপজেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১:৪৭ অপরাহ্ন, ৮ই মার্চ ২০২৪
ফরিদপুরের ভাঙ্গায় বিভিন্ন জাতের বেগুন চাষ করে ভাগ্য পরিবর্তন করেছেন সম্রাট মাতব্বর (৩৫)। ভাঙ্গা পৌর সদরের পূর্ব সদরদী গ্রামের বাস্তখোলা এলাকায় তার দুই বিঘা জায়গার উপর বেগুন ক্ষেত রয়েছে। তিনি বিবাহিত। তিনি এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জনক। তার প্রথম সন্তান নবম শ্রেণীতে এবং দ্বিতীয় সন্তান চতুর্থ শ্রেণীতে পড়াশোনা করছে। তাদের লেখাপড়ার খরচ সহ সংসারের সকল ব্যয় তিনি বেগুন বিক্রি করে এবং গরুর খামার থেকে আয় করেন।
তিনি ভাঙ্গা বাজারে প্রতিদিন কমপক্ষে দুই মন বেগুন বিক্রি করে থাকেন। প্রতি কেজি বেগুনের মূল্য ৫০থেকে ৬০ টাকা। বিক্রির হিসাব অনুসারে তিনি প্রতিদিন ৪০০০ টাকা থেকে ৪৮০০ টাকা পর্যন্ত আয় করে থাকেন।
বারী -১২ ,পারপাল কিং ও ভাঙ্গর নামে তিন ধরনের বেগুন চাষ করেন তিনি। বারী -১২ বেগুন লাউয়ের মতো দেখতে। তাই এ বেগুনের অন্য নাম লাউ বেগুন। এই বেগুনগুলো ১ কেজি থেকে দেড় কেজি পর্যন্ত ওজনের হয়ে থাকে। পারপাল কিং বেগুনের রং বেগুনি। এগুলো বেশ লম্বা হয়। অন্যদিকে ভাঙ্গড় বেগুন সবুজ রংয়ের। এগুলো ৫০০গ্রাম থেকে ৭৫০গ্রাম পর্যন্ত ওজনের হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন: ফরিদপুরে যাত্রীবাহী বাস উল্টে নিহত ৩, আহত ২৫
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সম্রাট প্রায় দুই বিঘা জমিতে বেগুন চাষ করেছেন। প্রায় তিন হাজার গাছে বেগুন আর বেগুন ঝুলছে। তিনি বলেন, প্রতিদিন ভাঙ্গা বাজারে দুই বেলায় তিনি দুই মনের বেশি বেগুন বিক্রি করে থাকেন। বারী-১২ জাতের বেগুনগুলো একশত টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন। তিনি বলেন, আমার উৎপাদিত বেগুনের মধ্যে বারি-১২ জাতের বেগুনের চাহিদা সবচেয়ে বেশি রয়েছে। প্রতিদিন পাইকাররা এসে আমার বেগুন ক্ষেত থেকে বেগুন নিয়ে যান।
এছাড়া তিনি প্রতিদিন বিকেলে ভাঙ্গা বাজারে এবং সকালে ভাঙ্গা আদালত পাড়া কাঁচা বাজারে বেগুন বিক্রি করে থাকেন। বিগত তিন বছর পূর্বে তিনি বেগুনের খেত শুরু করেন। তিনি বলেন, অগ্রহায়ণ মাসে কৃষি অফিস থেকে বীজ এনে চারা তৈরি করে আমি বেগুনের চাষ শুরু করি। ভাঙ্গা উপজেলা কৃষি অফিস আমাকে যথেষ্ট সহযোগিতা করেন।
বেগুন চাষ সম্পর্কে তিনি বলেন, গোবর সার এবং জৈব সার মিশিয়ে আমি খেতে প্রয়োগ করি। তবে কিছু ইউরিয়াও দিয়ে থাকি। আমার নিজস্ব সেচ মেশিন রয়েছে। জৈব সার আমার গরুর খামার থেকে নিয়ে আসা হয়। তিনি আরো বলেন, বেগুন উৎপাদনে আমার খরচ খুব কম। মাঝে মাঝে সার দিতে হয় এবং কীটনাশক ঔষধ ব্যবহার করতে হয়। এছাড়া বেগুন চাষে তেমন কোন খরচ নেই।
আরও পড়ুন: সদরপুরে নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ পালিত
তিনি আরও বলেন, সঠিক পরিচর্যা করলে বেগুন গাছে কমপক্ষে ৮ মাস ফলন ভালো পাওয়া যায়। গাছের বয়স এক বছরের বেশি হলে ফলন কমে যায়। তাই আমরা প্রতিবছর বেগুন চারা উৎপাদন করে রোপন করে থাকি। আগামী রমজানে বেগুনি তৈরির জন্য তাকে ইতিমধ্যে বেশ কিছু দোকানী আগাম অর্ডার দিয়ে রেখেছেন। তিনি বলেন, আমার বেগুনের সর্বোচ্চ চাহিদা রয়েছে। সার দেই না বলে আমার বেগুনের অনেক স্বাদ রয়েছে। যারা একবার আমার বেগুন নেন, ওরা দ্বিতীয়বার আমার বেগুন নেওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকেন।
সাফল্যের কারণ জিজ্ঞেস করলে সম্রাট মাতব্বর জানান, আমি চ্যানেল আইয়ের শাইখ সিরাজ পরিচালিত মাটি ও মানুষ এবং বাংলাভিশনের শ্যামল বাংলা অনুষ্ঠান দেখে বেগুন চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছি। এ ছাড়াও এগ্রো ওয়ানের সামিউল ভাইয়ের কাছে আমি ঋণী। তিনি আমাকে সকল প্রশ্নের সঠিক সমাধান জানিয়েছেন। বেগুন চাষ করার কারণে আমার সংসারে স্বচ্ছলতা এসেছে। আমি বেকার যুব সমাজকে বলব, তারা যেন আধুনিক কৃষি পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা পালন করার জন্য এবং নিজেদের স্বচ্ছলতার জন্য এগিয়ে আসে।
ভাঙ্গা উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা জীবাংশু দাস বলেন, বর্তমানে হাইব্রিড বেগুন বীজের মাধ্যমে অনেক কৃষক ব্যাপক উৎপাদন করছেন। হাইব্রিড বেগুনগুলোয় কোন পোকা থাকে না। খেতেও সুস্বাদু। সম্রাট মাতুব্বরের মত অনেকে আমাদের পরামর্শ নিয়ে বেগুন চাষ করে যাচ্ছেন। এবং সাফল্যের মুখ দেখছেন তারা।
এমএল/