জাবির দুই হলের সংঘর্ষ: প্রশাসনের অবহেলাকে দুষছেন সংশ্লিষ্টরা


Janobani

ক্যাম্পাস প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৬:১১ অপরাহ্ন, ১০ই মার্চ ২০২৪


জাবির দুই হলের সংঘর্ষ: প্রশাসনের অবহেলাকে দুষছেন সংশ্লিষ্টরা
ছবি: প্রতিনিধি

সজীবুর রহমান, জাবি প্রতিনিধি: সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ রফিক-জব্বার হল এবং শেখ রাসেল হলের মধ্যখানের দেয়াল ভাঙা নিয়ে বড় সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এই সংঘর্ষের ফলে দুই হলেরই ‍প্রায় দশ শিক্ষার্থী আহতের পাশাপাশি হলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এই সংঘর্ষ ও ক্ষয়ক্ষতির জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অবহেলাকে দায়ী করছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে এই দেয়াল নির্মাণের পর অপসারণের বিষয়ে এবং এর মাধ্যমে যেকোনো সময় বড় ধরনের সংঘর্ষ ঘটার কথা বারংবার জানানো হয়েছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ তো দূরে থাক, উল্টো বিষয়টিকে অবহেলা করেছে। যার দরুণেই এত বড় সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়েছে।


আরও পড়ুন: জাবির আল-বেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষকে অব্যাহতির দাবিতে মানববন্ধন


সংশ্লিষ্ট হল সূত্রে জানা যায়, গত বছরের জানুয়ারিতে দুই হলের মাঝে দেয়ালটি নির্মাণ করে শহীদ রফিক-জব্বার হলের গুটিকয়েক শিক্ষার্থী। সেসময় তারা জানায়, হলের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ ও খেলার মাঠ নির্দিষ্টকরণ, সকল অব্যবস্থাপনা দূর করে স্যানিটাইজেশন ব্যবস্থা সংস্কার ও হলের মসজিদে স্থায়ী ইমাম নিয়োগ, ডাইনিংয়ের অব্যবস্থাপনা দূরীকরণ ও কমনরুমের প্রয়োজনীয় উপকরণের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতকরণ এবং তাজউদ্দীন আহমদ হল ও শেখ রাসেল হলের বিকল্প রাস্তার ব্যবস্থা করার দাবিতে দেয়ালটি নির্মাণ করা হয়েছে।


তবে শেখ রাসেল হলের শিক্ষার্থীরা জানায়, দেয়ালটি নির্মাণের পর পরই চালু হয় নবনির্মিত শেখ রাসেল হল। হলটিতে এক হাজার শিক্ষার্থীর আবাসন রয়েছে। দেয়াল নির্মাণের ফলে এই শিক্ষার্থীদের যেকোনো জায়গায় যেতে প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তা অতিরিক্ত ঘুরতে হয়। তাই দেয়ালটি অপসারণের জন্য গত এক বছর ধরে দুই হলের প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে একাধিকবার অবগত করা হয়েছে। কিন্তু কোনো ফলাফল তারা দেখতে পাননি।


শেখ রাসেল হল ছাত্রলীগের সভাপতি জোবায়েদ আশিক বলেন, সংঘর্ষের পূর্বে দেয়াল অপসারণের জন্য আমরা বারবার প্রভোস্টকে জানিয়েছি। ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে স্মারকলিপিও জমা দেয়া হয়েছে। এছাড়া হল চালু হওয়ার পর যখন দেয়াল দেয়া শুরু করেছিল তখন আমরা প্রভোস্টের মাধ্যমে উপাচার্য ও প্রক্টরকে জানিয়েছি। স্যাররা আমাদের আশ্বস্ত করেছিল এই দেয়াল ভেঙে ফেলা হবে এবং কিছুদিনের মধ্যে রাস্তা করে দেওয়া হবে। গত দুই-তিন মাস থেকেই এই আশ্বাসই দেয়া হচ্ছে।


দেয়াল অপসারণের বিষয়ে শিক্ষার্থীরা জানানোর পর কি ব্যবস্থা নিয়েছিলেন জানতে চাইলে শেখ রাসেল হলের প্রভোস্ট তাজউদ্দিন সিকদার বলেন, দেয়াল তো আমি দেইনি। আমি জানতাম যে নকশা অনুযায়ী এখানে রাস্তা হবে। আমার হলে ছাত্র ওঠার একদিন আগে রাতে জানতে পারি ওই হলের ছাত্ররা এখানে একটি দেয়াল উঠিয়ে দিচ্ছে। আমি সাথে সাথে এটা প্রশাসনকে জানিয়েছি। আমি অনেকবার দেয়াল ভাঙার উদ্যোগ নিয়েছি, আমার ছাত্ররাও নিয়েছে। আমরা অনেকবার স্মারকলিপিও দিয়েছি। রফিক জব্বার হলের সাথে সংশ্লিষ্ট অথরিটি সকলকে এ বিষয়ে অবহিত করেছি। অনেক আলোচনা হয়েছে। তবে এই বিষয়টা ওইভাবে সামনে আগায়নি।


আরও পড়ুন: তুচ্ছ ঘটনায় জবিতে সংঘর্ষ


রফিক-জব্বার হলের শিক্ষার্থীরা অবৈধভাবে দেয়ালটি নির্মাণের পর কি ব্যবস্থা নিয়েছিলেন জানতে চাইলে হল প্রভোস্ট অধ্যাপক শাহেদ রানা বলেন, এইটার জন্য আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানিয়েছি যখন দেওয়াল দেওয়া হয়েছে তখনই। স্মারকলিপিও দিয়ে এসেছি, স্টুডেন্টরাও দিয়ে এসেছে। এটা নিয়ে প্রভোস্ট কমিটির মিটিংয়ে একটা সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় রফিক-জব্বার হলের একটা সীমানা নির্ধারণ করে রাস্তায় একটা ওয়াক ওয়ে তৈরি করে দেওয়া হবে। কিন্তু সেটা এক্সিকিউট করার আগেই মারামারি লেগে গেল।


দেয়াল নিয়ে সমস্যার বিষয়ে বারবার অবগত করা হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কেন ব্যবস্থা নেয়নি তা জানতে উপাচার্যের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।


আরএক্স/