দীর্ঘ চারবছর পর দারুচিনি দ্বীপে জাবির লোক প্রশাসন পরিবারের মেলবন্ধন


Janobani

ক্যাম্পাস প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০২:১০ অপরাহ্ন, ১১ই মার্চ ২০২৪


দীর্ঘ চারবছর পর দারুচিনি দ্বীপে জাবির লোক প্রশাসন পরিবারের মেলবন্ধন
দারুচিনি দ্বীপে জাবির লোক প্রশাসন পরিবার। ছবি: জনবাণী প্রতিনিধি

সজীবুর রহমান, জাবি প্রতিনিধি: সংস্কৃতির রাজধানী নামের খ্যাত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) প্রতি বছর নতুন শিক্ষাবর্ষের শুরুতে প্রায় প্রত্যেক বিভাগই আয়োজন করে শিক্ষা সফরের। ঠিক তেমনি লোক প্রশাসন বিভাগে দীর্ঘ চার বছর পর আয়োজিত হয়েছে বার্ষিক শিক্ষা সফর। স্থান কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত, সেন্ট মার্টিন সমুদ্রসৈকত ও ছেড়া দ্বীপ। যাতে অংশ নেন বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী। তবে এ শিক্ষা সফর গুানুগতিক কোনো শিক্ষা সফর ছিল না। শিক্ষা সফরে ছিল নান্দনিক আর অনন্য সব আয়োজন। এই শিক্ষা সফরের  নেতৃত্বে ছিলেন বিভাগের অধ্যাপক ড. জেবউননেছা, সহযোগী অধ্যাপক  ড. মো. মাহমুদুর রহমান, সহযোগী অধ্যাপক আহ্সান আব্দুল্লাহ্, সহকারী অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান ও প্রভাষক ফাইরুয আনিকা প্রমুখ।


শিক্ষা সফর মানুষকে আত্মনির্ভরশীলতা হতে শেখায়। তেমনিভাবে মনের প্রকৃতি প্রেমের সুপ্ত বাতিগুলোকে জাগ্রত ও শিক্ষার আলোকে বিকশিত করতে সাহায্য করে। সৃষ্টির রহস্য, মানুষ ও প্রকৃতির বিভিন্ন রূপ দর্শনের মাধ্যমে যেমন নিজেকে জানে, তেমনিভাবে বিশ্বজ্ঞানও লাভ করে। শিক্ষা সফরের মাধ্যমে বিষয়গুলো সহজে আত্মস্থ হয়ে যায় এবং তা স্মৃতির পাতায় যুগের পর যুগ থেকে যায়। এমনই একটি গুরুত্বপূর্ণ স্মৃতি সংগ্রহ করতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা শিক্ষা সফরে পা রাখে কক্সবাজার সি বিচ ও দ্বারুচিনি দ্বীপ নামে খ্যাত সেন্টমার্টিনে। ৩রা মার্চ ২০২৪ খ্রীঃ গোধূলির অস্তমিত সন্ধ্যায় ক্যাম্পাস থেকে শুরু হয় আমাদের যাত্রা। বাস ক্যাম্পাস অতিক্রম করার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয় আমাদের নাচ-গানের আসর। নাচানাচিতে বাসের মাঝে স্যার সিট ছেড়ে উঠে আসলেন আমাদের মাঝে অংশ নিলেন আনন্দের মিছিলে। সেই সাথে দিক-নির্দেশনাও দিচ্ছেন সবাইকে সুস্থভাবে পৌঁছাতে হবে এবং ফিরে আসতে হবে যেন কোনো প্রকার অপ্রিতিকর ঘটনা না ঘটে সেদিকে কঠোর ভাবে খেয়াল রাখার পরামর্শ দিলেন।


আনন্দ মজা মাস্তির পর কুমিল্লায় মধ্যরাতে যাত্রাবিরতি দেয়া হলো রাতের খাবারের জন্য। সবার খাওয়া শেষ,  খাবার ভালো ছিল পেটপুরে সবাই খেয়ে নিল মন ভরে কেউবা অর্ধেক খেয়েই হাঁপিয়ে উঠলো। চলছে গাড়ি মহাসড়ক ধরে, দূর দ্বীপের শহরের দিকে। শিক্ষাসফরের গাড়িতে কখনো ঘুম হয় না! আবারও বিষয়টি সত্য প্রমাণ হলো। কারো চোখে একটুও ঘুম নেই। কিছু কিছু শিক্ষার্থী ও শিক্ষক একটু তন্দ্রাচ্ছন্ন হলেও আমরা অনেকেই কিন্তু সজাগ রয়েছি এক অদৃশ্যর আহ্বানে! দৃষ্টি ফেলছি বাসের জানালার বাইরে। অন্ধকারে দেখা যায় নতুন নগর,বাঁশ ঝাড়ে জোনাকি পোকার হাটবাজার। এভাবে চলতে চলতে ফজরের আজানের পরে নামাজের বিরতি দেয়া হলো অনেকেই নামাজ আদায় করে নিয়ে আবার বাসে চড়ে বসলাম। একটু করে সূর্যের আলো ফুটতে শুরু করেছে। কি সুন্দর স্নিগ্ধ সকাল!লাল বর্ণের গোলাকৃতি ধীরে ধীরে স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। এমন সকাল আগে কখনও এত কাছ থেকে দেখিনি। ক্যামেরাগুলো অন হতে শুরু করেছে অনেকেই, কেউবা সারা রাতের ক্লান্তিতে নিদ্রাচ্ছন্ন। দেখা মিলছে আঁকাবাকা রাস্তা, মাঠ ঘাট, কখনো বা পাহাড়ি টিলা। ততক্ষণে তন্দ্রা কাটিয়ে সবার সজাগ দৃষ্টি বাসের জানালার বাইরে।


কক্সবাজারের পৌঁছাতে আমাদের প্রায় দুপুর হয়ে গেল। বাস থেকে নেমে সবাই রিসোর্ট এ গিয়ে উঠলাম। সবার মাঝে রুম ভাগ করে দেওয়া হল এক রুমে চারজন করে। সবাই সবার মত ফ্রেশ হয়ে রেস্টুরেন্টে গিয়ে খাবার খেলাম। খাবার শেষ করে সবাই দৌড় দিলাম সুগন্ধা বিচের দিকে লবণাক্ত পানিতে নিজেকে ভিজিয়ে নিতে, অচেনা-অদেখা মানুষের সমাগম। অন্যরকম ভালো লাগা অনুভব হচ্ছে। গোসল করে সাঁতার কেটে ঘনিয়ে এল সন্ধ্যা। ম্যাম তড়িঘড়ি করে সবাইকে বিচ থেকে উপরে উঠে রিসোর্টে যেতে বললেন। সবাই এক বাক্য মেনে নিয়ে চলে এলাম রিসোর্টে। মিঠা পানি দিয়ে গোসল করে ফ্রেশ হয়ে রাতের খাবারের পালা। খাবার শেষ করেই সবাই ঘুমাতে চলে আসলাম সারাদিনের ক্লান্ত শরীর নিয়ে রুমের ভেতরে। বিছানায় হেলিয়া পরা মাত্রই অবশ শরীরে ঘুম চলে আসে। তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যেতে হবে সকালে উঠেই সেন্টমার্টিন এর উদ্দেশ্যে রওনা হবো আমাদের শিপ ধরতে হবে।


রাতের পর চলে এলো সেই কাঙ্ক্ষিত সকাল। এবার আমাদের জাহাজে ভ্রমণের পালা। সকালের নাস্তা শেষে শিপে যাত্রা করার পূর্বে আবার একবার সাধারণ দিক নির্দেশনা দেয়া হলো। অসীম কৌতূহল নিয়ে সবাই হেঁটে যাচ্ছি জাহাজের কাছে। জেটি ঘাটের বুকে দাঁড়িয়ে আছে জল-জাহাজ। এ এক অন্যরকম ভালো লাগা, অন্য রকম অনুভূতি! আমিসহ অনেকেই জীবনের প্রথম শিপে উঠতে যাচ্ছিলাম, চোখে মুখে বিস্ময়! জাহাজটি দুইতলা প্রায় ২০০০-৩০০০ মানুষ অনায়াসে উঠতে পারে। ডেকসহ পুরো জাহাজ পরিপূর্ণ। আমরা একে একে উঠে পড়লাম জাহাজের চূরায়। জাহাজে আমাদের স্ট্যান্ডিং টিকিট বুকিং ছিল।  এত বেশি উচ্ছ্বসিত ছিলাম যে জাহাজের উপরে ছাদে বসার সিট নিয়ে লাফাতে শুরু করলাম। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর পরই শুরু হলো আমাদের যাত্রা। যত সমুদ্রের মাঝে এগিয়ে যাচ্ছি ততই আমাদের আনন্দ বেড়েই চলেছে। মনে হচ্ছিলো আমরা সবাই টাইটানিক এর যাত্রী। রোমান্টিকভাবে দাঁড়িয়ে দু’হাত প্রসারিত করে যাচ্ছি সাগরের বুকে নতুন কিছু দেখার তীব্র ইচ্ছে নিয়ে, মহা আনন্দে ছুটে চলছি আমরা সবাই একই গন্তব্যে। সমুদ্র বয়ে এগিয়ে গেলে চোখে পড়বে গাঙচিলসহ নানা প্রজাতির পাখি। জাহাজ থেকেই দেখা যায় বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অংশ শাহ-পরীর দ্বীপ। এ দ্বীপের ছোট বড় পাহাড়ের মাঝে আঁকাবাঁকা রাস্তা যা শেষ হয়েছে বাংলাদেশের মূল ভূ-খণ্ডের সাথে যুক্ত সর্বশেষ ভূমি দক্ষিণ পাড়ায়। ধীর গতিতে সাগরের বিশাল জল রাশি বড় বড় ঢেউ কাটিয়ে জাহাজ যাচ্ছে কাঙ্ক্ষিত সেই সেন্টামার্টিনের দিকে। সাগরের মাঝে প্রায় চার ঘন্টা চলার পর চোখে ভেসে উঠলো সেই কাঙ্খিত সেন্টমার্টিন।সামুদ্রিক পাখিদের ওড়াউড়ি আর সাগরের মনোরম পরিবেশ দেখতে দেখতে পৌছে গেলাম সেন্টমার্টিনে।


আমরা ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছি নারিকেল জিঞ্জিরার দিকে। ক্রমশ দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে সেন্টমার্টিন। সবার মধ্যে উত্তেজনা, একটু পর দৃশ্যমান হবে সেই কাঙ্খিত দ্বীপ। সেন্টমার্টিন দূশ্যমান হওয়ার পর দুপুরের তীব্র রোদ, দীর্ঘ ভ্রমণ, ক্লান্তি সব যেন নিমিষেই উধাও। দেখতে দেখতে চলে আসলাম দ্বীপের কাছে জেটিঘাটে, এবার নামার পালা। পাশে রাখা নৌযানের মধ্য দিয়ে সবাই নেমে গেলাম। এবার যাত্রা আমাদের জন্য রিজার্ভ করা রিসোর্টের দিকে। জেটিঘাট থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে আমাদের সেই রিসোর্টটি।


জেটিঘাট থেকে ১০মিনিটের ব্যবধানে অটোরিকশায় অনেকেই আবার হেঁটে হেঁটেই পৌঁছে গেলাম রিসোর্টে। রিসোর্টে পৌঁছার পর  লোকপ্রশাসন বিভাগের আটচল্লিশ ব্যাচের বড় ভাই আমাদের রুম সিলেক্ট করে দিলেন চার বন্ধু মিলে রুমে ওঠে পড়লাম। নিজেদের মত ফ্রেশ হয়ে সবাই আমরা খেতে বসলাম। খাবারের জন্য প্রস্তুতি চলছে, ছোট বেলার বইতে পড়া উড়ুক্কু মাছ, সেলমন, করাল, সুন্দরী সেই সামুদ্রিক মাছ যা আজ দৃশ্যমান! করাল মাছ, সবজি, ডাল ভাত দিয়ে সবাই আমরা আনন্দের সাথে ভোজন করলাম। ভোজন শেষে, কেউ বিশ্রাম নিতে রুমে, কেউ রিসোর্টের দোলনাতে  এলিয়ে গা ভাসাচ্ছে পরম অনন্দে, আমরা কয়েক বন্ধু মিলে চলে গেলাম সাগরের তীরে। বিকাল চারটার মধ্যে আমাদের সবাই সমুদ্রের তীরে এসে ভিড় জমিয়েছে। বিকেলে দল বেধে পশ্চিম ও দক্ষিণ বীচে ঘুরতে বের হলাম কয়েকজন মিলে। দেখে নিলাম লেখক হুমায়ুন আহমেদের নিজের হাতে গড়া সমুদ্র বিলাস বাড়িটি।


ইতিমধ্যে জোয়ারের কারণে পানি আসতে শুরু করেছে, সাগর পাড়ের প্রবাল গুলো অদৃশ্যমান হয়ে উঠছে। সবাই সবার মতো ছবি তুলতে শুরু করে দিয়েছি। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামতে সাগরের বুকে সূর্যের হারিয়ে যাওয়াকে অবাক দৃষ্টিতে অবলোকন করলাম। নীল পানিতে গোসল শেষ করে সবাই চলে আসলাম রিসোর্টে ফ্রেশ হয়ে সবাই বিছানায় গা ছেড়ে দিয়ে ঢলে পড়লাম। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়েই চলে আসলাম সাগরের তীরে। অন্ধকারে দাঁড়িয়ে শুনলাম সাগরের বিশাল গর্জন। যা আগে কখনও এত কাছ থেকে শুনতে পারি নাই।


সকালের নির্মল পরিবেশে প্রবালের আস্তানা ছেড়াদ্বীপে ঘুরতে যেতে হবে। পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই সবাই এক সাথে নাস্তা করলাম। ছেঁড়া দ্বীপ যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। ছেঁড়া দ্বীপে ঘুরতে বের হলাম পুরো লোকপ্রশাসন পরিবার মিলে। সকালে ছেঁড়া দ্বীপের উদ্দেশ্যে স্থানীয় ইঞ্জিন চালিত স্পেশাল টলারে উঠলাম। আমাদের জন্য চারটি ছোট ট্রলার ভাড়া করা হয়েছে। সাথে লাইভ জ্যাকেটও পড়তে হয়েছে। কারণ কোস্টগার্ড নিয়মের ব্যতিক্রম করতে দেয়নি। ছেঁড়া দ্বীপ হলো বাংলাদেশের মানচিত্রে দক্ষিণের সর্বশেষ বিন্দু। দক্ষিণ দিকে এর পরে বাংলাদেশের আর কোনো ভূখণ্ড নেই। সেন্ট মার্টিন থেকে বিচ্ছিন্ন ১০০ থেকে ৫০০ বর্গমিটার আয়তনবিশিষ্ট কয়েকটি দ্বীপ রয়েছে, যেগুলোকে স্থানীয়ভাবে 'ছেঁড়াদিয়া' বা 'সিরাদিয়া' বলা হয়ে থাকে। ছেঁড়া অর্থ বিচ্ছিন্ন বা আলাদা, আর মূল দ্বীপ-ভূখণ্ড থেকে কিছুটা বিচ্ছিন্ন বলেই এ দ্বীপপুঞ্জের নাম ছেঁড়া দ্বীপ। এখান থেকে বেশ খানিকটা দূরে। ট্রলারে করে সবাই ছেঁড়া দ্বীপে গেলাম। ভ্রমনের সবচেয়ে সুন্দর সময়ের মধ্যে ট্রলারে করে ছেঁড়া দ্বীপ ভ্রমণ ছিলো অন্যতম আনন্দ। ছেঁড়া দ্বীপে নেমে প্রথমেই আমরা একটি গ্রুপ ছবি তুলি। সময় বেঁধে দেওয়া হলো দেড় ঘণ্টা তারপর পৃথক পৃথকভাবে ঘোরাঘুরি করি ও ছবি তুলে সেই ট্রলারে করেই আবার ফিরে আসি রিসোর্টে।


তারপর আমরা গোসল করতে নেমে যাই রিসোর্টের পাশের বীচে। শিক্ষকসহ আমরা সকলে সাগরে নেমে নানান ভঙ্গিতে মজা করছি। সকালের দিকে পূর্ব বীচে ফুটবল খেলা, অতপর দল বেধে সমুদ্রে ডুবোডুবি। দুপুরের আগ পর্যন্ত সেখানেই বিচরন করলাম দলবেধে। আল্লার অপার মহিমার সৃষ্টি এই দ্বীপটি সত্যিই সুন্দর। বিকেলে সূর্যাস্ত দেখলাম। ফেরার আগেরদিন রাতে হলো গানের আসর ও বার্বিকিউ পার্টি। তারপর রাতে খাবারের পর শুরু হলো সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা। বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষায় রম্য বিতর্ক প্রতিযোগিত, গান, নিত্য, কৌতুক তারপর পুরস্কার  বিতরণ সব কিছু মিলে দারুণ সময় উপভোগ করলাম যেন কোন কিছুই বাদ পড়েনি এইখান থেকে। যা জীবনের ফ্রেমে এক সোনালী সময় হয়ে থাকবে বহুযুগ ধরে। তৃতীয় দিন সবাই ঘুম থেকে উঠতে না উঠতেই খবর এলো বেলা ১১টার দিকে রুম গুলো ছেড়ে দিতে হবে। সবাই তড়িঘড়ি করে ব্যাগ গুলো গুছিয়ে নিলাম তারপর ফ্রেশ হয়ে বন্ধুরা মিলে নাস্তা করলাম। এর মধ্যেই জোয়ারের পানি কমতে শুরু করছে সবাই শেষবারের মত শাড়ি, পাঞ্জাবী, ও ফরমাল ড্রেস পরে ঘুরাঘুরি কেনাকাটা করছে যে যার মত করে ছবি উঠে নিতেছে। আমরাও নিজেদের মত কয়েকজন বন্ধু মিলে সমুদ্রের তীরে সাইকেল ভাড়া নিয়ে কিছুক্ষণ অ্যাডভেঞ্চার করে ছোট একটা দোকানে বসে বার্মিজ চা আর বিস্কুট খেয়ে সেন্টমার্টিন ভ্রমণ পরিসমাপ্তি করলাম।


এবার আমাদের ফেরার পালা। বেলা চারটায় আমাদের জাহাজ ছেড়ে দিবে কোনভাবেই জাহাজ মিস করা যাবে না তাই দুপুর তিনটার টার দিকে আমরা হেটে হেটেই পৌঁছালাম প্রথমবারের দেখা সেই জেটিঘাটে। কিন্তু এবার আর প্রথম দেখার মত যেমন আনন্দ অনুভূতি ছিল তা আর নেই, মনে কিছুটা বিষাদ! মন খারাপ করছিল। যাইহোক, উঠে পড়লাম জাহাজে মনকে বোঝাতে পারছি না ছেড়ে যেতে হচ্ছে হৃদয় জুড়ানো অপরূপ সৌন্দর্য্যমন্ডিত ছোট্ট দ্বীপটি এই তিন দিনেই মিশে গিয়েছি প্রকৃতির প্রাণে, সবার মনে কিছুটা খারাপ লাগা কাজ করছে। আবার কবে আসবো বলতে পারি না। কোনভাবে মনকে সান্ত্বনা দিলাম। রাত দশটার কক্সবাজার এসে পড়লাম। রাতের খাবার খেয়ে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা বীচে ঘোরাঘুরি এবং কেনাকাটা শেষে বাসে উঠে পড়লাম। শুরু হলো আমাদের ক্যাম্পাসমুখী যাত্রা।


মহাসড়ক দিয়ে দ্রুত গতিতে আমাদের বাস চলছে। অত্যন্ত ক্লান্ত সবাই ঘুমিয়ে পাড় করলাম দীর্ঘ যাত্রা। চলে আসলাম প্রানের প্রিয় জাবি ক্যাম্পাসে। যতই নগরমুখী হচ্ছি ততই খারাপ লাগছে। সকাল ১০ টায় পৌঁছালাম ব্যস্তময় শহরে। নামার আগে বিদায় নিলেন আমাদের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষক সবার প্রিয় আম্মাজান ড. জেবউননেছা ম্যাম। তিনি এসে সবাইকে স্বাগত জানিয়ে নেমে পড়লেন। বাসটি পুরো ফাঁকা হয়ে গেলো অবশেষে আমরাও নেমে পড়লাম। স্যার ম্যামসহ লোকপ্রশাসন বিভাগের সকল সিনিয়র জুনিয়র ভাই-আপুদের সাথে কয়েক দিন থেকে সবাই যেনো সত্যিকারের পরিবার হয়ে গিয়েছিলাম। কয়েকদিনের সফরে থেকে আরও কাছ থেকে দেখার সুযোগ হলো প্রিয় স্যার, ম্যাম, বড় ভাই ও আপুদের। কখনও একবারের জন্য মনে হয়নি আমরা ভিন্ন পরিবার থেকে আসা। শিক্ষকদের আচরণে মুগ্ধ না হয়ে উপায় ছিল না। হাসি ঠাট্টা, নাচ গানের আসরে সবাই আনন্দে একাকার হয়ে গেছিলাম। এভাবেই পরিসমাপ্তি হলো নতুন বছর ২০২৪ সালের লোকপ্রশাসন বিভাগের স্মৃতিময় একটি শিক্ষা সফর। বৃদ্ধ বয়সে বা কর্মব্যস্ত জীবনে সোনালী অতীত হয়ে থাকে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শিক্ষা সফর। না গেলে হয়তো অনুভব করতে পারতাম না। শেষ বেলাতে অতীতের স্মৃতি যা হাজার বছর ধরে সংরক্ষিত হয়ে থাকবে স্মৃতির পাতায় এবং আমাদের এই সোনালী অধ্যায়গুলো।


আরএক্স/