জবি ছাত্রীর আত্মহত্যা: অভিযুক্ত শিক্ষার্থী বহিষ্কার, শিক্ষক বরখাস্ত
ক্যাম্পাস প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০২:০৪ অপরাহ্ন, ১৬ই মার্চ ২০২৪
শিক্ষক-সহপাঠীকে দায়ী করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার আত্মহত্যাজনিত কারণে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার ও ওই শিক্ষার্থীকে সহায়তাকারী শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি এ ঘটনার তদন্তে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম এ তথ্য জানিয়েছেন। শুক্রবার রাতে জরুরি বৈঠক শেষে এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
উপাচার্য অধ্যাপক সাদেকা হালিম জানান, আইন বিভাগের ২০১৭-১৮ বর্ষের শিক্ষার্থী ফাইরুজ অবন্তিকার মৃত্যুর কারণ হিসেবে তার সুইসাইড নোটে দেয়া আইন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের অভিযুক্ত শিক্ষার্থী রায়হান সিদ্দিকি আম্মানকে সাময়িক বহিষ্কার ও দ্রুত গ্রেফতারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে সহায়তাকারী ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক দ্বীন ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত ও প্রক্টরিয়াল বডি থেকে তাৎক্ষনিক অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. জাকির হোসেনকে আহবায়ক করে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটিকে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত পূর্বক দ্রুত প্রতিবেদন পেশ করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
তিনি জানান, তদন্ত কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবুল হোসেন, আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মাসুম বিল্লাহ ও সঙ্গীত বিভাগের চেয়ারম্যান ড. ঝুমুর আহমেদ। এছাড়াও কমিটিতে সদস্য সচিব হিসেবে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার রঞ্জন কুমার দাস।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, সর্বশেষ শনিবার সকাল ৯টায় তার সহপাঠীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ী নিয়ে অবন্তিকার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার উদ্দ্যেশ্য রওনা হয়েছে। উপাচার্য ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি আরও জানান, নতুন দায়িত্ব নেয়ার পর পূ্র্বের ঘটনা নিয়ে নিয়ে অবগত ছিলাম না। আমি দায়িত্ব নেযার পর সে যদি আসতো তাহলে আমি ভিসি ম্যামের সাথে পরামর্শ করে ব্যবস্থা নিতাম। বিষয়টি নিয়ে আমি অত্যন্ত দুঃখিত।
এর আগে শুক্রবার দিবাগত রাত ১টায় উপাচার্য ক্যাম্পাসে গেলে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে আটকে দেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তখন ড. সাদেকা হালিম শিক্ষার্থীদের শান্ত করার চেষ্টা করলে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ায় ঘোষণা দেন।
আরও পড়ুন: জবি শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, সহপাঠীকে গ্রেফতারের নির্দেশ
এসময় এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য সাত কর্মদিবস সময় নিতে চাইলে শিক্ষার্থীরা তা প্রত্যাখ্যান করে ১২ ঘণ্টায় মধ্যে তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পেশ করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থার দাবি জানান। একই সঙ্গে রাতের মধ্যেই অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে থাকেন।
এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক বন্ধ করে সেখানে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে তারা ক্যাম্পাসে অবস্থান নেন। উপাচার্যের আশ্বাসে রাত ৩টার পর তারা নতুন কর্মসূচি দিয়ে ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগের বিষয়ে উপাচার্য বিগত সময়ে ঘটে যাওয়া সব বিষয়ের সুষ্ঠু তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন। এছাড়াও এ ঘটনায় প্রথমে গঠন করা তদন্ত কমিটির একজনের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ থাকায় শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে তাকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: ‘বিচার কার কাছে দেব’, জবি ছাত্রী অবন্তিকার মায়ের আহাজারি
এদিকে এ ঘটনায় অভিযুক্তদের বিচারের দাবিতে ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়’ ব্যানারে শনিবার বিকেল তিনটায় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
এর আগে শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে কুমিল্লার ঠাকুরপাড়ার নিজ বাড়িতে ফ্যানের সাথে গলায় ফাঁস দেন। কুমিল্লা সদর হাসপাতালের রাত্রিকালীন দায়িত্বে থাকা ডাক্তার জুবায়ের তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, হাসপাতালে নিয়ে আসার পর তার গলায় একটি দাগ (রশ্মি) দেখতে পাই। সেই অবস্থায় তার দেহ নিথর অবস্থায় ছিল। আমরা তাকে মৃত অবস্থায় পেয়েছি। ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।
মৃত্যুর ১০ মিনিট পূর্বে নিজের ফেসবুক আইডিতে এক পোস্টে তিনি এ ঘটনার জন্য আম্মান সিদ্দিকী নামে তার এক সহপাঠীকে দায়ী করেছেন। একইসঙ্গে সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকেও এ ঘটনার জন্য দায়ী করেন।
জেবি/এসবি