বিপদজনক রেস্টুরেন্ট চিহ্নিত করছে ফায়ার সার্ভিস
মো. রুবেল হোসেন
প্রকাশ: ০২:৩২ অপরাহ্ন, ২৪শে মার্চ ২০২৪
রাজধানীর বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৪৬ জনের প্রাণহানির পর নড়েচড়ে বসেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর।
ঢাকায় আবাসিক, বাণিজ্যিক, বিপণিবিতান, হাসপাতাল-ক্লিনিকসহ অগ্নিঝুঁকিতে থাকা ভবনের পরিসংখ্যান করেছে সংস্থাটি।
রাজধানী ঢাকায় প্রায় ৫ হাজার রেস্টুরেন্ট ও খাবারের হোটেল রয়েছে। এই রেস্টুরেন্ট-খাবার হোটেল গুলোর মধ্যে ৯৬ শতাংশই নিয়ম না মেনে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে বিপদজনক পরিবেশে রয়েছে।
পাশাপাশি আবাসিক ভবনের অনুমতি নিয়ে বাণিজ্যিক ভবনে রূপান্তর হয়েছে অনেক স্থানে। সে সকল ভবনে অবৈধভাবে চালানো হচ্ছে রেস্টুরেন্ট, খাবার হোটেলে ও রেস্তোরাঁসহ বাণিজ্যক কর্মকান্ড। অগ্নিদুর্ঘটনা রোধ করতে ও হতাহতের ঘটনা এড়াতে অবৈধ ও নিয়ম না মেনে চলা এ সব রেস্টুরেন্ট, রেস্তোরাঁ ও খাবার হোটেল বন্ধের দাবি করেন ফায়ার সার্ভিস।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর ৫-১২ মার্চ ৫১৬ রেস্টুরেন্ট-শপিংমল পরিদর্শন করে। এর মধ্যে অতি ঝুঁকিপূর্ণ ৮৪টি, ঝুঁকিপূর্ণ ৪০৮টি, কম ঝুঁকিপূর্ণ ২৪টি। ৩৭টি প্রতিষ্ঠানে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে ১৯ লাখ ৮০ টাকা জরিমানা আদায় করেছে। একই সাথে রেস্টুরেন্ট-শপিংমলকে বিপদজনক বিবেচনায় অতি ঝুঁকিপূর্ণ ২টি ও ঝুঁকিপূর্ণ ৮টিতে ব্যানার নোটিশ টানানো হয়েছে এবং মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ৪টি প্রতিষ্ঠানকে সিলগালা করেছে।
অগ্নিনিরাপত্তা জোরদার করতে বিভিন্ন শর্তে ফায়ার সার্ভিস বিদ্যমান ও প্রস্তাবিত বহুতল ভবন বা বাণিজ্যিক ভবনের ছাড়পত্র প্রদান করে। সেবাগ্রহীতাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পরিদর্শন করেন এবং সেফটি প্ল্যান যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে নির্ধারিত নিরাপত্তা শর্ত পূরণ সাপেক্ষে ছাড়পত্র প্রদান করে ফায়ার সার্ভিস।
আরও পড়ুন: ফায়ার সার্ভিসের আন্তঃবিভাগীয়পেশাগত প্রতিযোগিতা সম্পন্ন
রেস্টুরেন্ট-শপিংমল পরিদর্শন প্রতিবেদনে দেখা যায়, জোন-১; মতিঝিল, মালিবাগ, মৌচাক, শান্তি নগর, বেইলি রোড, ওয়ারী, লালবাগ ও সদরঘাট এলাকায় ১৪০টি রেস্টুরেন্ট-শপিংমল পরিদর্শন করা হয়। এর মধ্যে অতি ঝুঁকিপূর্ণ ২২টি, ঝুঁকিপূর্ণ ১১৪টি, কম ঝুঁকিপূর্ণ ৪টি। ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় ৫টি প্রতিষ্ঠানে ব্যানার নোটিশ টানানো হয়েছে এবং মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ৬টি প্রতিষ্ঠানকে ৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা জরিমানা ও একটি প্রতিষ্ঠানকে সিলগালা করেছে।
জোন-২; ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, ফার্মগেইট, কারওয়ান বাজার, তেজগাঁও ও মিরপুর এলাকায় ১৭৩টি রেস্টুরেন্ট-শপিংমল পরিদর্শন করেছে। এর মধ্যে অতি ঝুঁকিপূর্ণ ১৫টি, ঝুঁকিপূর্ণ ১২৪টি, কম ঝুঁকিপূর্ণ ৭টি। ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় ২টি প্রতিষ্ঠানে ব্যানার নোটিশ টানানো হয়েছে এবং মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ২৪টি প্রতিষ্ঠানকে ১০ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও একটি প্রতিষ্ঠানকে সিলগালা করেছে।
জোন-৩; গুলশান, বানানী ও উত্তরা এলাকায় ১২৯টি রেস্টুরেন্ট-শপিংমল পরিদর্শন করেছে। এর মধ্যে অতি ঝুঁকিপূর্ণ ২০টি, ঝুঁকিপূর্ণ ৯৬টি, কম ঝুঁকিপূর্ণ ১৩টি। অতি ঝুঁকিপূর্ণ-ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় ২টি প্রতিষ্ঠানে ব্যানার নোটিশ টানানো হয়েছে। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ৬টি প্রতিষ্ঠানকে ৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা জরিমানা ও একটি প্রতিষ্ঠানকে সিলগালা করেছে।
জোন-৫; খিলগাঁও এলাকায় ৭৪টি রেস্টুরেন্ট-শপিংমল পরিদর্শন করেছে। এর মধ্যে অতি ঝুঁকিপূর্ণ ২৭টি, ঝুঁকিপূর্ণ ৪৭টি। অতি ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় একটি প্রতিষ্ঠানে ব্যানার নোটিশ টানানো হয়েছে এবং মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে একটি প্রতিষ্ঠানকে সিলগালা করেছে।
২০১০ সালে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রাজউক প্রথম ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা প্রকাশ করে। ২০১৬ সালে আবারও তালিকাটি হালনাগাদ করে রাজউক। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রাজউকের তথ্য অনুযায়ী, রাজধানী ঢাকায় অতি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সংখ্যা ৩২১টি। এর মধ্যে বেশিরভাগ রয়েছে পুরান ঢাকায়। ২০১৯ সালে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সংখ্যা দাঁড়ায় ৮১৮টি।
আরও পড়ুন: ‘বিশিষ্ট সেবা পদক’ অর্জন করলেন ফায়ার সার্ভিসের ডিজি
জানা যায়, ২০২৩ সালে সারাদেশে ২৭ হাজার ৬২৪টি অগ্নিকান্ড ঘটে। প্রতিদিন গড়ে ৭৫টি আগুন লাগে বলে জানায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর। আগুনের উৎপত্তি হিসেবে বৈদ্যুতিক গোলযোগ, বিড়ি-সিগারেটের জ্বলন্ত টুকরো, চুলা এবং গ্যাস লাইন থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডে সারাদেশে ২৮১ জন আহত ও ১০২ জন নিহত হয়েছে। আগুনে ৭৯২ কোটি ৩৬ লাখ ৮২ হাজার ১৪ টাকার সম্পদ ক্ষতি হয়েছে। একই সাথে ৮০৮ কোটি ৫৩ লাখ ৫০ হাজার ৩২৯ টাকার সম্পদ রক্ষা করেছে ফায়ার সার্ভিস।
ফায়ার সার্ভিস সংশ্লিষ্টরা জানান, রাজধানী ঢাকায় অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের পাশাপাশি রেস্টুরেন্ট-রেস্তোরাঁর সংখ্যা দিনের পর দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০২৩ সালে দুই শতাধিক ভবনে নোটিশ দিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজকে তিনবার নোটিশ প্রদান দিয়েছে সংস্থাটি। কিন্তু এত প্রাণহানিতেও টনক না নড়লে সামনের দিনগুলোতে ভয়াবহ অবস্থার সম্মুখীন হতে হবে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের সিনিয়র স্টাফ অফিসার (মিডিয়া সেল) মো. শাহজাহান শিকদার জনবাণীকে বলেন, একটু শান্তির জন্য মানুষ রেস্টুরেন্টে খেতে যায়। সেই খেতে যাওয়া যেন হরিষে বিষাদ না হয় সেদিকে অবশ্যই লক্ষ্য করতে হবে। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনে গড়ে তোলা রেস্টুরেন্টের সঠিক সংখ্যা জানতে পরিদর্শন চলমান রয়েছে।
রেস্টুরেন্ট মালিকদের উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, যথাযথ নিয়ম মেনে রেস্টুরেন্ট-রেস্তোঁরায় পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জাম ব্যবস্থা রাখতে হবে। আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনে সিঁড়ি পরিস্কার রাখতে হবে, যাতে করে দুঘটনা ঘটলে সহজে মানুষ ছাদে গিয়ে আশ্রয় নিতে পারে।
জেবি/এসবি